মা, দেখতে দেখতে ৫টি বছর গেল, আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর মেহমান হয়ে চলে গেলে। একটা দিনের জন্যও আমার চোখ, আমার হৃদয় থেকে কোথাও যাওনি। মাগো, এই যে তোমার চুল বাঁধার ব্যান্ড, তোমার মাথা আঁচড়ানোর চিরুনি, নামাজের পবিত্র ওড়না, সোনার হাতে সোনার কাকন-কে কার অলংকার?
তোমার ফর্সা চির সবুজ তরুণী কোমল হাতের বালা দুটো, তোমার ডান হাতের অনামিকায় চুম্বনরত তসবীহ রূপালি দানা, বিদায় বেলায় আমার দু’গালে তোমার নরম পেলব ঠোঁটের আদর ভেজা পরশ...।
মা, মাগো! এই খেয়ালী মেয়ের জন্য রান্না করা লাউ শাক, পাঁচমিশালী মাছের চচ্চরী মাখানো ভাত খাওয়াচ্ছো শাড়ি পরার সময়। কাজ করে দিনশেষে কখন ফিরবো ঠিক নেই। ব্যাগে কি যত্ন করেই না ভরে দিচ্ছ আপেল, শশা, পানির বোতল ও মোবাইল ফোন।
মা, সব সময় তুমি আমার সাথেই আছ অনুভবে, আদরে, স্নেহে। চোখ বুজলেই তোমাকে দেখি কান পাতলেই শুনি তোমার মায়াঝরা কণ্ঠস্বর। এই বুঝি বলছ, তুমি কোথায়, বাসায় না বাইরে? রাস্তাটা দেখে পার হও, পড়ো আল হাফিজু আল ওয়াহিদু, আমি দোয়া করছি। ও, ডাক্তারের কাছে যাচ্ছ টেষ্ট করাতে? কোন ভয় নেই, ইনশাল্লাহ সব রিপোর্ট ভালো আসবে।
প্রতি রাতে স্বপ্ন দেখি হাস, কথা বল, অভয় দাও বিছানা সংসার গোছাও, নিতে আস, কত গল্প, খাবারটা তুলে ধর মুখে, যেমনটি করতে বইমেলায় যাবার সময়।
জানো মা, তোমার গায়ের ঘ্রাণে আমোদিত হই, তোমার নামাজের কাপড়ে। হ্যাঁ মা যতদিন বাঁচি, তুমি যে আমার হৃদয়ের একটা টুকরো, তোমার সাথে অনেক গল্প করবো, তোমার শাড়ির আঁচলে মুখটা মুছবো সেই ছোট্টটি হয়ে।
আর তুমি যে রোজ সকালে কালিজিরা, মধু আরও কত কি মিশিয়ে খাওয়াতে, তোমার হাতে ধোওয়া মগটা না মা আমি খু-উ-ব যত্ন করে তুলে রেখেছি। মা, কত কথা জমিয়ে রেখেছি, দেখা হলে সেই ছোট্টবেলার নালিতাবাড়ি, বাজিতপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, নেত্রকোণা মগড়া নদীর পাড়ে, নাগড়ার ছায়াবীথি তলে তোমার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে সব গল্প করবো। আর ক’টা দিন, এই আসছি বলে!
আব্বা আর তুমি কী মধুর দাম্পত্য জীবন কাটিয়ে পাশাপাশি, মসজিদের পাশে সবুজ জমিনে তারাভরা আকাশের নীল চাঁদোয়ায় শুয়ে আছ। কী সৌভাগ্য তোমার, মাগো এমন স্বামী যার যিনি জীবনে চৌদ্দখানা মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বাগান করেছেন। এ যে মা এক জনমে শত জনমের কাজ।
কত ধৈর্য্য-শ্রম-অবদান মাগো তোমার-বারোজন সন্তানের জননী। আহা সোনার চাঁদ মা আমার! দোয়া করি আল্লাহ পাকের কাছে তোমার এগারোজন সন্তান বাইশ জোড়া হাত তুলে, যেনো তোমরা বেহেশতে শান্তিতে থাক আমীন, সুম্মা আমীন ।
লেখক : সম্পাদক, চয়ন সাহিত্য ম্যাগাজিন