ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিন যেন মৃত্যুপুরী। দেদারসে প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। সারাবিশ্ব থেকে প্রতিবাদ উঠছে, কিন্তু বোমা ফেলা বন্ধ হচ্ছে না। এই ধ্বংসযজ্ঞ কোথায় গিযে থামবে? চ্যানেল-৭৮৬ এর বিশেষ আয়োজন ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ অনুষ্ঠানে এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপের সেক্রেটারি শাহানা মাসুম।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি কী?
খুবই ভয়াবহ। একদিকে মৃত্যুর বিভিষীকা, অন্যদিকে হাজার হাজার মানুষ আহত হচ্ছে, রক্তাক্ত হচ্ছে, পঙ্গু হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে আবার মেডিসিন নেই, খাবার নেই, পানি নেই। ড্রেনেজ সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে ফিলিস্তিনে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
এই নিষ্ঠুরতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিরা কী ভাবছে?
যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু প্রচুর ইহুদির বসবাস। এটা এতটাই বেশি যে, বলা হয়ে থাকে- ইসরায়েলে যত ইহুদি আছে তারচেয়ে অনেক বেশি আছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই সংখ্যাটার সিংহভাগই আবার নিউইয়র্কে। তবে ইহুদি বলেই তারা ইসরায়েলের বোমাবাজিকে সমর্থন করছে, বিষয়টা মোটেও এমন নয়। ইহুদিদের মধ্যেও অনেক মানুষ আছেন, যারা শান্তিবাদী। মূলত জায়োনিজম তথা ইহুদিবাদে যারা বিশ্বাস করে, সেই অল্প সংখ্যক ইহুদিই যুদ্ধবাজ ইসরায়েলকে সমর্থন করছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র কেন, ইসরায়েলে বসবাস করা অনেক ইহুদিও যুদ্ধের ঘোরতর বিরোধিতা করে থাকে।
বিক্ষোভে কোনো লাভ হচ্ছে কি?
এটা আসলে রাতারাতি হওয়ার বিষয় নয়। জনমত তৈরি হচ্ছে, অনেক মানুষ রাস্তায় নামছে, তাতে বাইডেন প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে—এটাই লাভ। এর ফলাফলটা হয়তো আমরা আরও কিছুদিন পর দেখতে পাবো। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট বাইডেন এখন নরম সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুদ্ধবিরতির কথা বলা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামছে, এটাকে কীভাবে দেখছেন?
বিষয়টাকে খুবই পজিটিভলি দেখছি। যে কোনো ক্ষেত্রেই তারুণ্যের প্রতিক্রিয়া অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ভেবে অবাক লাগছে যে, কত বড় রিস্ক নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা ফিলিস্তিনের পক্ষে মাঠে নামছে! তাদের গ্রেফতার হতে পারে, শিক্ষাজীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে—এসব জেনেই তারা মাঠে নামছে। এটাকে ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। এজন্যই আমি আশাবাদী যে, অবশ্যই একদিন ফিলিস্তিনিরা মুক্তি পাবে সকল অন্যায় আর শোষণ থেকে।
যুদ্ধবিরতির পক্ষে সমর্থন কতটা?
ফিলিস্তিনিদের স্থায়ী মুক্তির ব্যাপারে কথা বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখন পরিস্থিতিটা ভিন্ন, গাজায় বেঘোরে মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই আমাদের ইমিডিয়েট চাওয়া হচ্ছে যুদ্ধবিরতি। যত দ্রুত সম্ভব, এটা কার্যকর করতে হবে। আরেকটা বিষয় হলো, ফিলিস্তিনিদের আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের ব্যাপারে অনেকেই হয়তো দ্বিমত পোষণ করবেন, কিন্তু যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে দাঁড়ানোর মতো খুব বেশি মানুষ নেই। যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটরা তো যুদ্ধবিরতি চান, রিপাবলিকানরাও চান। শুধু ফেডারেল সরকারের কেউ কেউ এখনও যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে কথা বলছেন। কারণ তাদের অস্ত্র ব্যবসার ক্ষতি হবে।
এই ধ্বংসযজ্ঞ কোথায় গিযে থামবে?
দিন-তারিখ ঠিক করে তো আর এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা আশাবাদী। মানুষ ফুঁসে উঠছে, রাস্তায় নামছে, বিক্ষোভ করছে। এভাবে চলতে থাকলে নীতিনির্ধারকরা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে বাধ্য হবে। ধ্বসযজ্ঞের মধ্যে বসেও আমরা নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখি। শিগগিরই গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, ইসশাআল্লাহ।
চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।