নিউইয়র্কে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের নানা দাবি নিয়ে সিটি ও স্টেট প্রশাসনের সঙ্গে দেন-দরবার করে থাকে বাংলাদেশি আমেরিকান এডভোকেসি গ্রুপ-‘বাগ’। এ ব্যাপারে তাদের সাফল্য ঈর্ষণীয়। প্রতিবছর বাগ-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় ‘অ্যানুয়াল সিভিক অ্যানগেজমেন্ট ডিনার’। আলোচিত সেই নৈশভোজকে সামনে রেখে চ্যানেল-৭৮৬ এর মুখোমুখি হয়েছেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন।
বাগ-এর মূল কর্মকাণ্ড কী?
শুধু বাংলাদেশি কমিউনিটি নয়, অন্য যে কোনো ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটি কিংবা অন্য কোনো নতুন কমিউনিটি—যারা নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে ভয়েস রেইজ করতে পারে না, তাদের হয়ে ভয়েস রেইজ করে বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপ-বাগ। নিউইয়র্কে ২০১০ সাল থেকে এই সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে।
এই সংগঠনের উদ্যোগে কী কী প্রোগ্রাম হয়ে থাকে?
বছর শেষে ‘সিভিক অ্যানগেজমেন্ট ডিনার’টা আমাদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রোগ্রাম। এছাড়া সময় এবং পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রোগ্রাম হয়ে থাকে। ২০১১ থেকে প্রতিবছর নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনিতে অ্যাডভোকেসি ডে পালন করা হয় সংগঠনটির উদ্যোগে। কোভিডের কারণে ২০২১ ও ২২-এর এটি পালন করা সম্ভব হয়নি।
বাগ-এর অর্জনগুলো কী কী?
আমাদের ঝুলিতে আছে বেশ কয়েকটি অর্জন। ২০১৯ সালে নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে একটা ঐতিহাসিক বিল পাস হলো—হিজাব বিল। ওই বিল পাসের মধ্য দিয়ে হিজাব, টুপি, টারবান, পায়জামা-পাঞ্জাবির মতো পোশাক আইনসিদ্ধ হয়েছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের যে কোনো কর্মস্থলে। এটা শুধু মুসলমান কমিউনিটি নয়, জিউসসহ অন্যান্য কমিউনিটির জন্য একটা বিরাট বিজয়। এটা ছিল বাগ-এর নিজস্ব একটি উদ্যোগ। এভাবে আরও অনেক সফলতা আছে আমাদের।
অন্যান্য সফলতাগুলোও জানতে চাই।
আরেকটা বড় অর্জন আছে বাগ-এর, যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। নিউইয়র্কে মিডল ক্লাস বিশেষকরে লোয়ার মিডল ক্লাস যারা আছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের বেতন বাড়ে না। এ নিয়ে আমরা সংগ্রাম করেছি এবং সফলতা পেয়েছি। বাগ-এর বড় অর্জনের তালিকায় এটিও থাকবে ওপরের দিকেই।
ঈদের ছুটি আদায়ের ব্যাপারে আপনাদের ভূমিকা আছে…।
হুম, নিউইয়র্ক সিটিতে মুসলমানদের ঈদের ছুটি আদায় করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। আগে এটা ছিল না। ঈদের দিনও মুসলিম ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে যেতে হতো, কর্মস্থলে যেতে হতো চাকরিজীবীদের। এটা নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামলাম। অনেক দেনদরবার করার পর সফলতা আসলো।
নিউইয়র্কের স্কুলগুলোতে হালাল ফুড সাপ্লাইয়ের ব্যাপারে জানতে চাই।
এটা একটা যুগান্তকারী উদ্যোগ। নিউইয়র্কের স্কুলগুলোতে এখন হালাল ফুড সাপ্লাই হচ্ছে। এটার পেছনেও আছে অনেক সংগ্রামের গল্প। এটাও আমাদের একটা সফলতা। এই তালিকা আরও লম্বা। সিটি বা স্টেট নয়, একেবারে ফেডারেল জাজ হিসেবে একজন মুসলিম নারীর কাজ করাটা এখানকার অভিবাসী মুসলিম কমিউনিটির জন্য অনেক বড় পাওয়া। এই নারীর নাম নুসরাত চৌধুরী। গত অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে তিনি কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এই সাফল্যের কৃতিত্বও আমরা দাবি করতে পারি।
আপনাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের মূল ফোকাস কোথায়?
আমাদের সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা-সংগ্রামের মূলে রয়েছে কমিউনিটিকে এমপাওয়ার করা। তবে একটা কথা বলে রাখি, এই সকল সাফল্য শুধু বাগ-এর নয় আবার শুধু বাংলাদেশি কমিউনিটির নয়, এসব অর্জন আমাদের সবার। সমষ্টিগত কাজের মধ্য দিয়েই আমরা এখানে আসতে পেরেছি।
এবারের ‘অ্যানুয়াল সিভিক অ্যানগেজমেন্ট ডিনার’ সম্পর্কে জানতে চাই।
বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপ-বাগ প্রতি বছরই একটা বিশাল ডিনারের আয়োজন করে থাকে। আগামী ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আমাদের ২০২৩ সালের সিভিক অ্যানগেজমেন্ট ডিনার। উডসাইডের কুইন্স প্যালেসে এটি অনুষ্ঠিত হবে। বিজয়ের মাসে আমরা এই ডিনারটার আয়োজন করছি। তাই স্মরণ করছি সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছিলাম।
ডিনারে কারা অতিথি থাকবেন?
আগের ডিনারগুলোতে ফেডারেল, স্টেট এবং সিটির পাবলিক অফিসিয়াল এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এবারও তেমনটাই হবে। এবার চিফ গেস্ট হিসেবে থাকবেন কংগ্রেসম্যান জামাল ভোম্যান। এছাড়া ডিনারে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে আমাদেরকে কনফার্ম করেছেন কয়েকজন কাউন্সিল মেম্বার, কয়েকজন স্টেট সিনেটর, কয়েকজন এসেম্বলি মেম্বার এবং সিটির বিভিন্ন এজেন্সির কমিশনাররা। গত বছর আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ইমিগ্রেন্ট কমিশনার, পাবলিক অ্যাডভোকেট অফিস, ডেপুটি পাবলিক অ্যাডভোকেট অফিস এবং নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের কয়েকজন কমিশনার। আমাদের সঙ্গে গতবার যোগ দিয়েছিলেন সিনেটর রবার্ট জ্যাকশন, ইনশাআল্লাহ এবারও তিনি যোগ দেবেন।
অতিথিদের তালিকা তো তাহলে অনেক লম্বা…।
হুম, এটা আসলে বড় আকারের একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়। আমাদের সঙ্গে আগের বছরের ডিনারে যোগ দিয়েছিলেন স্টেট সিনেটর জন ল্যু ও জেসিকা রামোস। এবারও তারা থাকবেন। আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন অ্যাসেম্বলি মেম্বার স্টিভেন রাগা। এবারও আমরা তাকে আশা করছি। অ্যাসেম্বলি মেম্বার রোজলিন যোগ দিয়েছিলেন। মুসলিম অ্যাসেম্বলি মেম্বার জোহরান মামদানি আমাদের ভালো বন্ধু, তিনিও থাকবেন, ইনশাআল্লাহ। আমাদের কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফ, যাকে নিয়ে আমরা বাংলাদেশিরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি, তিনিও থাকবেন। তিনি আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই বোন, আমাদেরই মেয়ে।
বাগ-এর ফাইন্যান্স কীভাবে জোগাড় হয়?
এটি একটি পলিটিক্যাল অরগানাইজেশন, নট ফর প্রফিট। আমাদের ফাইন্যান্সটা আসে আমাদের পেট্রনদের কাছ থেকে। আমরা সমাজের জন্য কাজ করি, সুতরাং সমাজের যারা বিত্তবান আছেন কিংবা বিশিষ্টজন আছেন, তারাই আমাদেরকে পেট্রোনাইজ করেন। আমাদেরকে বিজ্ঞাপন দিয়েও সহযোগিতা করে থাকেন অনেকে। যারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ডিনারের অনুষ্ঠানটা কেন করেন?
আমাদের কমিউনিটিতে বিভিন্ন সামাজিক, আঞ্চলিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আছে। অনেক ভালো ভালো নেতারা আছেন এখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। তারা হয়তো নিজেদের সংগঠন নিয়েই বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকেন। এসব নেতাদের সঙ্গে নিউইয়র্কের মূলধারার রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, সিটি-স্টেট-ফেডারেলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই আমাদের এই বাৎষরিক ডিনারের মূল লক্ষ্য। বছরের একদিন লবি করে অ্যাডভোকেসি করেই কিন্তু আমরা ক্ষ্যান্ত হই না। নানা সময় আমাদেরকে নিউইয়র্কের প্রশাসনের মুখোমুখি হতে হয়। কমিউনিটির দাবি নিয়ে তাদের সামনে যেতে হয়। এখন তাদের সাথে যদি পরিচয়ই না থাকে, সম্পর্ক না থাকে, তাহলে দাবি আদায় তো সম্ভব হবে না।
পরবর্তীতে আপনারা কোন অ্যাজেন্ডা নিয়ে কাজ করবেন?
নিউইয়র্ক সিটিতে আমরা মুসলমানরা ঈদ উপলক্ষে দুদিনের ছুটি ভোগ করছি। এই সুবিধাটা আমরা পুরো নিউইয়র্ক স্টেটের সব মুসলমানের জন্য চাই। সেটা নিয়ে লবি করছি, আলোচনা করছি। আশাকরি, এই দাবিও আমরা আদায় করতে সক্ষম হবো। এরপর হালাল ফুডের বিষয়টা আছে, আমরা চাই, এটাও শুধু সিটি নয়, পুরো স্টেটজুড়ে বাস্তবায়ন হবে। আরেকটা ব্যাপার নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে, আমাদের কমিউনিটির একটা সন্তান রোজা রেখে স্কুলে গিয়েছিল। তো লাঞ্চের সময় তাকেসহ সবাইকে ডাকা হলো। এরপর সে সাহস করে ওই স্কুলের প্রিন্সিপালকে বিষয়টা জানাল। প্রিন্সিপাল সেদিন থেকে নিয়ম করে দিল, রোজাদার শিক্ষার্থীদের আলাদা করে চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের সামনে যেন কেউ লাঞ্চ না করে। এবার রোজা আসার আগেই আমরা ভাবছি, প্রত্যেকটা স্কুল ডিস্ট্রিক্টের কাছে গিয়ে এই দাবিটা জানাবো, যেন রোজাদার শিশুরা ডিসকমপোর্ট পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পায়।
এবারের ডিনারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে?
হ্যাঁ, আছে। আপনারা জানেন, কয়েকদিনের যুদ্ধবিরতির পর ফিলিস্তিনে আবারও শুরু হয়েছে হত্যাযজ্ঞ। যে ধর্মের, যে দেশের, যে বর্ণেরই হোক না কেন, একটা প্রাণহানিও আমরা চাই না। বাগ-এর এবারের ডিনার থেকে এই আওয়াজটা তোলা হবে। নিউইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট-১৬ এর কংগ্রেসম্যান জামাল ভোম্যানকে এবার আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি নিয়ে যারা কাজ করছেন, তিনি সেটার একজন বড় অ্যাডভোকেট। এছাড়া অন্যান্য যেসব অতিথি এবার আমাদের ডিনারে আসছেন, তারা প্রত্যেকেই যুদ্ধবিরতির পক্ষে। নিশ্চয়ই আলোচিত এই ডিনারে যুদ্ধবিরতির পক্ষে একটা বড় কণ্ঠস্বর শুনতে পাবেন।
চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।