
ফোবানা নিয়ে কেন এত বিভক্তি—উত্তর আমেরিকার লাখ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে চর্চিত প্রশ্ন এটি। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চ্যানেল৭৮৬ এর মুখোমুখি হয়েছেন ফোবানার নির্বাহী সম্পাদক এবং ফোবানা ইয়ুথ ক্লাবের পরিচালক ড. রফিক খান। সঙ্গে ছিলেন রোকেয়া মোহনা।
৩৭তম ফোবানা সম্মেলন কেমন হয়েছে?
অত্যন্ত সাকসেসফুল একটা প্রোগ্রাম হয়েছে। যত উপস্থিতি আশা করেছিলাম, তার চাইতে অনেক বেশি পেয়েছি। কানাডায় যা দেখলাম, এ ধরনের উপচেপড়া ভিড় আমি অনেক ফোবানাতেই দেখতে পাইনি। মানুষের উপস্থিতিতে রীতিমতো একটা জাগরণ তৈরি হয়েছে। এতে করে কানেক্টিভিটি বেড়েছে কানাডার বাংলাদেশিদের সঙ্গে। অনেক বছর পর সম্মেলনের হোস্ট হতে পেরে তারাও খুশি।
ফোবানা কি কিছুটা সম্মেলনকেন্দ্রিক হয়ে গেছে?
উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশিদের যত সংগঠন আছে, সবগুলোকে এক জায়গায় করাই ফোবানার মূল উদ্দেশ্য। সবার সঙ্গে একত্র হয়ে বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচারকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই আমরা কাজ করে থাকি। এই কাজগুলোতে আমরা কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম। ফোবানার কার্যক্রম আবর্তিত হচ্ছিল শুধু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে। সেই ধারাটাকে ভাঙতে আমরা শুরু করলাম বছরব্যাপী কার্যক্রম। শহরে শহরে ফোবানা ইয়ুথ ক্লাব করা হচ্ছে। আরও বিভিন্ন প্রোগ্রাম আমরা হাতে নিয়েছি। সামনের দিনগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে ফোবানার কানেক্টিভিটি আরও বাড়বে। আমাদের ২৬টি সাবকমিটি আছে, যারা বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছে।
ফোবানায় এত বিভক্তির কারণ কী?
এটার অনেক ধরনের কারণ আছে। কিছু ব্যক্তির ইগো একটা কারণ। আবার রাজনৈতিক কারণও আছে। কিছু ব্যক্তির স্বার্থান্বেষী চিন্তাও ফোবানার এই বিভক্তির কারণ। পজিশন নিয়ে কাড়াকাড়ির কারণে ভেঙেছে ফোবানা। এগুলো আসলে আজকের নতুন কিছু নয়, নব্বইয়ের দশক থেকেই শুরু হয়েছে বিভাজন। তারপর যত সময় গড়িয়েছে, এই বিভাজন ডালপালা গজিয়েছে, বড় হয়েছে। অনেকের মানসিকতা এমন—তোমার সঙ্গে যেহেতু আমার বনিবনা হচ্ছে এবং আমার যেহেতু টাকা-পয়সা আছে, কিছু অনুসারী আছে, তাই আমি আরেকটা ফোবানা গঠন করলাম। এ ধরনের ছেলেখেলা চলছে।
বিভাজন বন্ধে কী করণীয়?
বিভাজনটা হয়েছে যখন স্বার্থের জন্য, তখন সেটা বন্ধ করা মুশকিল। এটা নিয়ে হয়তো মামলা-মোকদ্দমা করা যায়, আদালতে যাওয়া যায়, কিন্তু সেখানে অনেক খরচের ব্যাপার। তারচেয়ে ভালো, যে যার মতো চলুক। মানুষই নির্ধারণ করবে কে আসল আর কে নকল ফোবানা। সবাই ভালো কাজ করুক, মানুষের জন্য কাজ করুন-এটাই কামনা।
বিভাজনের প্রধানতম কারণ কোনটি?
মেইন কারণটা হচ্ছে আমাদের ইগো। একজন ভাবল, আমি চেয়ারম্যান হতে পারিনি, সুতরাং আমি আর ফোবানায় যাব না। আমি তো অমুক পদ পাওনা ছিলাম, আমাকে দিল না কেন, এমন নানা ছোট ছোট কারণে ইগো দেখাচ্ছেন অনেকে। ফলাফলে বিভাজিত হচ্ছে ফোবানা।
স্বার্থের কারণে কীভাবে ভাঙছে ফোবানা?
স্বার্থের ব্যাপারটা হলো…ফোবানা যেহেতু একটা ব্র্যান্ড, তাই অনেকেই নিজের উন্নতির সিঁড়ি হিসেবে এটাকে ব্যবহার করতে চায়। দুই মাসের নোটিশে অনেকে সম্মেলন করে ফেলছে। এটা যদি ফোবানা না হয়ে অন্য কিছু হতো তাহলে কিন্তু সেল করতে পারতো না। এখন ফোবানার নাম দিয়ে তারা চাইলেই স্পন্সর পাচ্ছে, ফান্ড রাইজ করতে পারছে।
এমন বিভাজিত ফোবানা দেখে তরুণ প্রজন্ম কী ভাববে?
এটা একটা বিগ চ্যালেঞ্জ। তরুণ বয়সটা আমরাও পেরিয়ে এসেছি, তাই ওদের থিংকিং প্রসেসটা বুঝতে পারি। তাই আমরা চাইছি, ওদেরকে এমন একটা পরিবেশ উপহার দেওয়া, যাতে তারা কন্ট্রোভার্সিগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব না দেয়। তারপরও কোনো প্রবাসী তরুণ যদি জিজ্ঞাসা করে, এতগুলো ফোবানা কেন? সেই প্রশ্ন আমি এড়িয়ে যাওয়ার পক্ষে নই। প্রশ্নের উত্তরে বলবো, হ্যাঁ ফোবানা কয়েকটা ভাগ হয়ে গেছে। আমরা কী কী কাজ করি, সেটা বলবো। আমাদের মিশন কী, সেটা তাদের জানাবো। অন্য ফোবানাগুলো কী কাজ করে, তা নিয়ে কোনো কথা বলবো না। তরুণরা নিজেরাই দেখে নেবে, কে কী কাজ করে।
বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট করছে ফোবানা-এমন মন্তব্য করছেন অনেকে। এ কথা শুনতে কতটা খারাপ লাগে?
অনেক খারাপ লাগে, ভীষণ কষ্ট পাই। যেখানে বাংলাদেশিদের সংঘবদ্ধ রাখতেই গঠিত হয়েছিল ফোবানা, সেই সংগঠনই আজ প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভাজনের কারণ। তবে সবকিছু তো আর আমাদের হাতে নেই, তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কিছু মেনে নিতে হয়।
ফোবানা কি আর জোড়া লাগবে?
ফোবানা আর জোড়া লাগবে কি-না, বিষয়টা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে চাই। কারণ জোর করে কোনোদিন কিছু টেকানো যায় না। তবে আমরা যে মিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, সেটা তো ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা চেষ্টা করে যাব, বাকিটা মানুষের হাতে। তারা আমাদেরকে কীভাবে গ্রহণ করছে, সেটাই বড় কথা। আর এখানে অভিমান করে ফোবানা ছেড়ে দেওয়ারও কিছু নেই। কারণ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে আমাদের, সেভাবেই এগিয়ে যেতে চাই। সমালোচনা হজম করতে হবে, কিছু করার নেই।
চ্যানেল৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ইমেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পণ্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।