Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

‘ফোবানার কারণে মাতৃভূমির সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে তরুণদের’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২৯ আগস্ট ২০২৩

‘ফোবানার কারণে মাতৃভূমির সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে তরুণদের’

দরজায় কড়া নাড়ছে ৩৭তম ফোবানা সম্মেলন। অন্যান্য বছরের আয়োজনকে ছাপিয়ে এবার কানাডার মন্ট্রিয়লে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলটি আরও জমজমাট হবে বলে আশা করছেন ফোবানার এক্সিকিউটিভি সেক্রেটারি এবং ফোবানা ইয়ুথ ক্লাবের পরিচালক ড. রফিক খান। চ্যানেল৭৮৬ এর মুখোমুখি হয়ে ফোবানা নিয়ে দিয়েছেন আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর।

অনেক বছর পর কানাডায় সম্মেলন। কেমন লাগছে?
আমাদের সংগঠনটি হলো ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা। তো নর্থ আমেরিকার মধ্যে কিন্তু কানাডাও রয়েছে। ফোবানা সম্মেলনগুলো সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রেরই হয়ে থাকে। তবে এবার কানাডায় বসবাস করা বাংলাদেশিরা খুব ভালো একটা প্রোগ্রাম করতে চাচ্ছে। আমরাও এ নিয়ে এক্সাইটেড।

তিনদিনের সম্মেলনে কখন কোন আয়োজন?
১ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে সম্মেলন। এদিন একটা আয়োজন আছে গালা নাইটের মতো। বিভিন্ন দেশ থেকে ইনভাইটেড গেস্টরা আসবেন, শিল্পীরা আসবেন। প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের দেখা হবে, কথা হবে। 
এরপর ২ সেপ্টেম্বর দুপুরে আমাদের বিজনেস নেটওয়ার্কিং লাঞ্চের মতো একটা আয়োজন হবে। এতে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা থেকে বিজনেস রিলেটেড লোকজন থাকবেন। সেখানে আলোচনা হবে, মতবিনিময় হবে, পরামর্শ আদান-প্রদান হবে। বিজনেস করতে গেলে কী ধরনের সুবিধা-অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়, তা নিয়ে আলোচনা হবে। আমাদের হাইকমিশন থেকে মাননীয় হাইকমিশনার থাকবেন ওই অনুষ্ঠানে। তিনিও বাংলাদেশিদের বিজনেস নেটওয়ার্ক নিয়ে কথা বলবেন। এর পরপরই সেমিনারের আয়োজন করা হবে, যেটা প্রতিটি ফোবানা কনভেনশনেই থাকে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেমিনারে আলোচনা হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এসে নির্দিষ্ট টপিক নিয়ে কথা বলবেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হবে, প্রবাসে বাংলাদেশিরা কেমন আছে-এসব নিয়েও আলোচনা হবে। এছাড়া ইয়ুথদের নিয়ে হবে বিশেষ সেমিনার।
এই সেমিনারের পরপর বিকেলে আমাদের বিশেষ আয়োজন শুরু হবে। একে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শিল্পীরা গান গাইবেন। শিল্পী বালাম থাকবেন, মমতাজ থাকবেন। ৩ সেপ্টেম্বর গান গাইবেন বাংলা র্যা প গানের শিল্পী মোজা এবং কিংবদন্তী শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। এছাড়া নর্থ আমেরিকায় বাংলাদেশিদের পরিচালনায় যেসব কালচারাল ক্লাব আছে, তারাও পারফর্ম করবে।

এবার কি ইয়ুথদের স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে?
অবশ্যই। গত ৫-৭ বছর ধরেই আমরা এটা করে আসছি। এই স্কলারশিপগুলো শুধু নর্থ আমেরিকার ইয়ুথদের মধ্যে দেওয়া হতো। এবার আমরা ভেবেছি, নর্থ আমেরিকার পাশাপাশি বাংলাদেশের তরুণদেরকে এই স্কলারশিপ দেওয়া হবে। এটা অনেক বড় একটা তৃপ্তির ব্যাপার। কারণ দিনশেষে আমাদের মাতৃভূমি কিন্তু বাংলাদেশ। আপাতত বাংলাদেশে আমরা দুটো স্কলারশিপ দিচ্ছি। আরেকটা বিষয় হলো, সম্মেলনটা যেই শহরে হয়, স্কলারশিপের ক্ষেত্রে সেই শহরের ছেলেমেয়েদের গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। সে হিসেবে এবার মন্ট্রিয়ল শহরের তরুণদের বেছে নেওয়া হয়েছে বেশি। অনলাইনে ফর্ম ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। স্কলারশিপ পেতে ইচ্ছুকরা সেটা পূরণ করে পাঠাবেন। তারপর নিডি প্লাস ব্রিলিয়ান্ট দেশে নির্দিষ্ট সংখ্যক তরুণ-তরুণীকে বাছাই করা হবে।

বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি বিদেশে বড় হওয়া ইয়ুথদের আগ্রহ কম-এই অভিযোগ সত্য?
১৯৮৭ সালে ফোবানা গড়েই উঠেছিল এই উদ্দেশ্য নিয়ে যে, এখানে বড় জন্ম নেওয়া কিংবা বেড়ে ওঠা আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন বাঙালি কৃষ্টি-কালচারের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। তো, নতুন প্রজন্মকে যদি আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে না জানাতে পারলাম, তাহলে ফোবানা সৃষ্টির উদ্দেশ্যই কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়ে। সেই লক্ষ্যে বরাবরই আমাদের চেষ্টা ছিল, কিন্তু আমরা পুরোপুরি সফল হয়েছি, তেমনটা বলবো না। আমরা নর্থ আমেরিকায় থাকা বিভিন্ন সংগঠনগুলোকে এক প্ল্যার্টফর্মে যুক্ত করেছি বটে, কিন্তু সরাসরি ইয়ুথদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি ছিল। আমাদের কানেকশনটা হলো কোনো একটি সংগঠন এবং সংগঠনের লিডারদের সঙ্গে। কিন্তু তারা যদি আমাদের বার্তাটা তরুণ-তরুণীদের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে না দেয়, তাহলে তো হচ্ছে না। সমস্যাটা ঠিক এখানেই হয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে শহরে শহরে খোলা হয়েছে ফোবানা ইয়ুথ ক্লাব। সেখানে ইয়ুথরা ডিরেক্টলি আমাদের সঙ্গে কানেকটেড থাকবে। সেটাই এখন হচ্ছে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে আমি মনে করি। মাতৃভূমির সংস্কৃতি নিয়ে তরুণরা এখন আগ্রহী হয়ে উঠছে।

এবারের ফোবানায় উপস্থিতি কেমন হবে বলে আশা করছেন?
সবমিলিয়ে ২ হাজার ডেলিগেট উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি। অনুষ্ঠানটা হচ্ছে মন্ট্রিয়লে, তার পাশেই কানাডার রাজধানী অটোয়া। ওখানে অনেক বাঙালি আছেন। ৫-৬ ঘণ্টা দূরত্বের মধ্যে আরেকটা শহর আছে টরোন্টো, এখন থেকেও অনেকেই সম্মেলনে যোগ দেবেন। এছাড়া সবচেয়ে বেশি বাঙালির শহর নিউইয়র্ক থেকে ৭-৮ ঘণ্টা ড্রাইভ করে মন্ট্রিয়লে পৌঁছানো সম্ভব।

প্রতিবারই সম্মেলন আসলে ফোবানা ভেঙে নতুন দল তৈরি হয়। এবার তেমন কোনো সম্ভবনা আছে কি?
কিছু সমস্যা হচ্ছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। যতদিন ফোবানা থাকবে, ততদিনই কমবেশি এসব ঝামেলা থাকবে। কারণ ফোবানা একটা ব্র্যান্ড হয়ে গেছে। এর নাম ভাঙিয়ে ইজিলি ফান্ড রাইজ করা যায়। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তো থাকবেই। তারা সবকিছু দিয়েই টাকা ইনকাম করতে চায়। একটা হল ভাড়া করে একটা ব্যানার অনেকে ফোবানা কনভেনশন করে ফেলছে, অথচ ফোবানার একটা সম্মেলন আয়োজন করতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি লাগে। তো যারা একটা ব্যানার টানিয়ে কনভেনশন করে ফেলছেন, তাদের নিয়ে আমি খুব বেশি চিন্তিত নই। আরেকটা বিষয় হলো, ফোবানার কাজ তো সম্মেলন করা নয়, এর মূল কাজ বছরজুড়ে নানা এক্টিভিটি। যারা এই এক্টিভিটিগুলো চালাবে, মানুষ তাদের সম্মেলনেই যাবে। আলাদা করে এ নিয়ে কথা বলারও কিছু নেই, এটা প্রচারণার বিষয়ও নয়।

ফোবানার এবারের ইলেকশন নিয়ে কী বলবেন?
গত সম্মেলনে আমরা যে এক্সিকিউটিভ কমিটি সিলেক্ট করেছিলাম, সেটা দুই বছর রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে অনুযায়ী এ বছর নতুন করে ভোটাভুটি হচ্ছে না। এর পরের বছর আমাদের ইলেকশন হবে অথবা আলোচনা সাপেক্ষে আমরা একটা কমিটি গঠন করবো। হয়তো নতুন কিছু সংগঠনকে এবার আমরা ফোবানার সঙ্গে যুক্ত করবো, এর বেশি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ