যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা সাদাকাহ ফাউন্ডেশন অব ইউএসএ বরাবরই এগিয়ে এসেছে আর্তমানবতার সেবায়। ঈদুল আজহায় কোরবানির গোশত বিতরণ তাদের অন্যতম একটি উদ্যোগ। প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গরীব-দুঃখী মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয় গোশতের প্যাকেট। সার্বিক এই আয়োজন নিয়ে চ্যানেল৭৮৬ এর মুখোমুখি হয়েছেন সাদাকাহ কোরবানি-এর স্বেচ্ছাসেবী এনামুল কবীর।
কীভাবে সাদাকাহ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত হলেন?
সাদাকাহ ফাউন্ডেশনের প্রধান মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বড় ভাই ছিলেন। এর আগে তিনি যে মাদরাসায় পড়তেন, আমিও সেখানে পড়েছি। সেই সুবাদে তার সঙ্গে পরিচয়। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি একজন দক্ষ পরিচালক। নানা সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত। যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই সাফল্য পেয়েছেন। প্রত্যেকটা ভালো উদ্যোগের সঙ্গে শহীদুল্লাহ ভাই আমাকেও রাখতেন। সাদাকাহর ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। এই মহতী উদ্যোগের শুরু থেকেই আমি ছিলাম, এখনও আছি।
সাদাকাহ কোরবানীর এবারের ব্যবস্থাপনা কেমন?
সাদাকাহ ফাউন্ডেশন কোরবানীর গোশত বিতরণের শুধু উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বরং একটা কালচার চালু করেছে। আমার এলাকার কথাই বলতে পারি, ছোটবেলা থেকে কখনো দেখিনি যে, একটা গরু কিংবা গরুর অর্ধেক মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছে। বিষয়টা প্রথম দেখালো সাদাকাহ ফাউন্ডেশন। কালচার বলছি এ কারণে যে, এখন অনেকেই সামর্থ্যের মধ্যে এটা করার চেষ্টা করছে। ছোটখাটো সেই উদ্যোগগুলোকে আমরা একত্র করেছি। তারা সবাই সাদাকাহর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এখন আমরা মোটামুটি ভালো আয়োজন করেই প্রতি বছর গোশত বিতরণ করছি।
আপনারা কাদের মাঝে গোশত বিতরণ করছেন?
আমরা প্রথমে খোঁজ নিয়ে দেখি, এলাকায় কারা কোরবানী দিচ্ছে না। এলাকা বলতে তালিকাটা আমাদের গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করি। হয়তো তালিকা করার পর দেখা গেল, দেড়শ পরিবারের নাম চলে এসেছে। তখন আমরা সেটাকে আরেকটু ছোট করার চেষ্টা করি তালিকায় রাখি ১০০ জনকে। গ্রামে দেখা যায়, কোরবানী না দিলেও অনেক পরিবারের পক্ষে কোরবানীর দিন মাছ-মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য আছে। তাদেরকে আমরা তালিকা থেকে ফেলে দেই। তারপর যে ১০০ জন বাকি থাকে, তাদের মধ্যেই গোশত বিতরণ করা হয়। সারাদেশে সাদাকাহর যে কোরবানীর গোশত বিতরণের প্রোগ্রাম, সেগুলোতেও এই একই পদ্ধতিতে তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।
অন্য কোনো সংগঠন যদি সাদাকাহ ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তাহলে তারা কীভাবে যুক্ত হতে পারে?
প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই একটা ভালো মানসিকতা থাকে। সেই ভালো মানসিকতাকে বের করে আনার জন্য প্রয়োজন হয় উদ্যোগের। তাই সাদাকাহ ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ না দিলেই নয়, তারা উদ্যোগ নিয়েছে বলেই আজ কোরবানীর গোশত বিতরণের ব্যাপারটি একটা কালচারে পরিণত হয়েছে। অনেকেই এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, পরিসর বড় হচ্ছে, সামনে হয়তো আরও বড় হবে। আমি নিজেও একটা সংগঠন চালাই। সেটার মাধ্যমে মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন অনেক সংগঠন আছে, আমি তাদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাবো। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমরা সবাই মিলে একত্র হয়ে যদি কিছু করার চেষ্টা করি, তাহলে সেটা আরও সুন্দর হবে।
সাদাকাহ ফাউন্ডেশনের ব্যাপারে যদি আর কিছু বলার থাকে...।
সাদাকাহ ফাউন্ডেশনের এই কোরবানীর গোশত বিতরণের উদ্যোগটি এ কারণে খুবই মহৎ যে, এই গোশতটি কে দিলো, কোথা থেকে আসলো-এটা কিন্তু কোনো মানুষ জানে না। সাদাকাহও জানতে পারছে না, এক্সজেক্টলি কোন পরিবারের কাছে গোশতটি গেল। তার মানে এই উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবে আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য। আশা করছি, আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার এই তৎপরতাকে কবুল করেছেন। শুধু কোরবানীর গোশত বিতরণ নয়, আরও অনেক মহতী কাজ করে থাকে সাদাকাহ। দিন দিন তাদের এসব উদ্যোগ আরও বড় হবে, ইনশাআল্লাহ।