কবি, কথা সাহিত্যিক ও চয়ন প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী লিলি হক বলেছেন, আমার বাবা ছিলেন ফুটন্ত ফুলের মতো। একজন সত্যিকার ভালো মানুষের যত প্রকার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, তার সবগুলোই ছিলো আমার বাবা শাহ সুফী ওসমান আলীর মধ্যে। বিশ্ব বাবা দিবসে চ্যানেল-৭৮৬ এর বিশেষ আয়োজন ‘আমার বাবা’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে নিজের বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তিনি।
রোকাইয়া মোহনার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটির অতিথি চয়ন সাহিত্য ক্লাবের প্রেসিডেন্ট লিলি হক বলেন, প্রত্যেক সন্তানের দায়িত্ব তার বাবাকে অনুভব করা, ভালোবাসা। একজন বাবা অনেক কষ্ট করেন, অনেক স্বপ্ন দেখেন তার সন্তানকে নিয়ে। সন্তান মানুষের মতো মানুষ হবে, জগদ্বিখ্যাত হবে। সন্তানের উচিত বাবার স্বপ্ন পূরণে চেষ্টা করা। কতটুকু হতে পারবেন, সেটা পরের বিষয়, কিন্তু চেষ্টাটা থাকা উচিত।
কবি লিলি হক বলেন, এমন কোনো বাবা নেই যে তার সন্তানকে ভালোবাসেন না। বাবা হলে মানুষ অন্যরকম হয়ে যায়। তখন আর নিজের দিকে নজর দেন না, সন্তানের ভালো থাকার দিকেই তার সকল মনোযোগ চলে যায়।
নিজের বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিলি হক বলেন, আমি বাবার চোখ দিয়েই পৃথিবীটা দেখেছি। আমরা অনেকগুলো ভাইবোন যখন ছোট ছিলাম, তখন বাবাকে দেখেছি আমাদের জন্য কত কী করেছেন। সেই ফজরের আজান থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমাদের ভালোমন্দ দেখতেন। খেয়েছি কি-না, অসুখ হলো কিনা, স্কুলের পড়াটা শেষ করতে পারলাম কিনা-এগুলোই ছিলো উনার ধ্যানজ্ঞান।
আবেগী কণ্ঠে লিলি হক বলেন, আমার লেখা একটা বইয়ের নাম ‘তোমরা সবাই কেমন আছো?’ এই বইয়ের উৎসর্গের জায়গায় লিখেছিলাম, ‘আমার প্রিয়পুরুষ আমার বাবা’। বাবার হাতে যখন বইটি তুলে দিয়েছিলাম, তিনি আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন। সেই দৃশ্য আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না।
লিলি হক বলেন, আমার বাবা ছিলেন প্রচণ্ড দেশপ্রেমিক। তিনি ভাষা সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। ফজলুল হক হলে থাকতেন। রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ ছিলেন বাবার রুমমেট। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাউন্ডার মেম্বার হিসেবে যেদিন আমি বিশ্ববিদ্যালয়টির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার পাশে থাকা শাহাবুদ্দিন আহমেদ জিজ্ঞাসা করলেন, ওসমান (আমার বাবা) কেমন আছে?
‘মহান ভাষাসংগ্রমী ওসমান আলী সরকারি চাকরিতে থেকেও যে রকম ধার্মিক ছিলেন, সেটা বিরল উদাহরণ। আমাদেরকে হালাল খাইয়েছেন। মানুষকে কীভাবে সাহায্য করতে হয় সেটা শিখিয়েছেন।’
মানুষের জন্য কীভাবে জীবন উৎসর্গ করে দিতে হয়, সেটা বাবার কাছ থেকে শিখেছি, বলেন কবি লিলি হক। স্মৃতি হাতড়ে করে তিনি বলেন, গ্রামে তখন খুব অভাব। অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা লোকজন আব্বার কাছে আসতো একটু সাহায্যের জন্য। আমাদের ঘরে দই পাতা থাকতো, আব্বা তাদেরকে দই-কলা দিতেন। বলতেন, আগে খাও, তারপর অন্য কথা। লোকগুলো পেট ভরে খেতো, তারপর তাদেরকে ধান-চাল যা লাগে দিয়ে দিতেন।
কবি লিলি হক বলেন, আমরা ৯ বোন, ৩ ভাই। এক বোন আল্লাহর মেহমান হয়ে চলে গেছেন। এখন আমরা ৮ বোন, ৩ ভাই দুনিয়াতে আছি। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই বাবার দারুণ প্রভাব। বাবাকে নিয়ে কথা শুরু করা যায়, কিন্তু শেষ করা যায় না। বাবা ছিলেন ফুটন্ত ফুল। আসলে সকল বাবাই তার সন্তানের কাছে ফুটন্ত ফুল।
চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।