Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

‘আরজে হতে হলে বুদ্ধিদীপ্ত হওয়া আর পরিমিতিবোধ জরুরি’

সাইদ রহমান

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

‘আরজে হতে হলে বুদ্ধিদীপ্ত হওয়া আর পরিমিতিবোধ জরুরি’

জাহান অরন্য

জাহান অরন্য। পুরো নাম আবু মোহাম্মাদ রওশন জাহান। বাংলাদেশে রেডিও জকি হিসেবে যারা নিজস্ব অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের মধ্যে শুরুতেই থাকবে এই নাম। সফলতার সঙ্গে দীর্ঘ একযুগ কাটিয়েছেন এই প্ল্যার্টফর্মে। ক্যারিয়ারের এমন মাহেন্দ্রক্ষণে চ্যানেল ৭৮৬ এর মুখোমুখি হয়ে কথা বলেছেন নিজের কাজ আর জীবন সম্পর্কে। সঙ্গে ছিলেন সাইদ রহমান       

আপনার জন্মের কথা দিয়েই শুরু করা যাক।
ব্রহ্মপুত্র নদঘেষা ময়মনসিংহ শহরের কেওাটখালির একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম। বাবা মো. আছাব উদ্দিনের শিক্ষকতা পেশার কারণে শৈশব কেটেছে নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন থানায়। মা হোসনে আরা মির্জা, গৃহীনি।

ক্যারিয়ারের জার্নি?
২০০৯ সালে রেডিও টুডে দিয়ে শুরু। সেখানে থাকাকালীন দুবাইয়ের বাংলা ভাষার একমাত্র এফএম রেডিও ‘বাংলা রেডিও ৯৪.৭ এফএম দুবাই’-এর স্টেশন ইনচার্জ ও সিনিয়ার ব্রডকাস্টার হিসেবে কাজ করেছি। পরে সিঙ্গাপুরের ‘আমার এফএম ৯৬.৩ এর স্টেশন ম্যানেজার ও সিনিয়ার ব্রডকাস্টার ছিলাম। তারপর নিউইয়র্কের অনলাইন ‘বাংলা রেডিও নিউইওর্ক’ এর স্টেশন ম্যানেজার ও সিনিয়ার ব্রডকাস্টার। ২০১৫ সালে কাজ শুরু করি পিপলস রেডিও ৯১.৬-এ অনুষ্ঠান প্রধান হিসেবে। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কর্মরত আছি ক্যাপিটাল এফএম ৯৪.৮-এর সিনিয়ার ব্রডকাস্টার ও ডিজিটাল কনসার্ন হিসেবে। 

আরজে হিসেবে একযুগ পূর্ণ হলো। অনুভূতি?
অসাধারণ। যে কাজ আমার ভালো লাগে সেই কাজ টানা ১ যুগ ধরে করতে পারা নিঃসন্দেহে আনন্দের। 

এ পর্যন্ত আসার শুরুর গল্প জানতে চাই।
২০০৯ সালে একটা ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করতাম। সেখানে নিউজ প্রেজেন্টার, রেডিও জকি, ফ্লাইট কেবিন ক্রুর জন্য ট্রেনিং করানো হতো। কলিগরা একদিন বললো, আপনি আরজে হিসেবে ট্রাই করেন, ভালো করবেন। একজন তো জোর করে সিভি নিয়ে জমা দিল রেডিও টুডেতে। তখন আমি থিয়েটার করি। টেলিভিশনেও কাজ করতাম। একদিন পুবাইলে নাটকের শুটিং করছি, এমন সময় রেডিও টুডে থেকে কল আসে। দীর্ঘ অডিশনের পর শুরু হলো আমার রেডিও জকির জীবন।

আপনি অভিনয়ও করছেন মাঝে মাঝে। শুধুই শখ?
দীর্ঘদিন থিয়েটার করেছি। আমি বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত অভিনয়শিল্পী। আরজে না হলে হয়তো অভিনেতাই হতাম। তবে এখন ভোকাল আর্টিস্ট হিসেবে অনেক চলচ্চিত্রে কাজ করছি। টিভিসি, আরডিসি, ডকুমেন্টারির কাজ নিয়মিত চলছে।

বাংলাদেশে আরজে প্রফেশনের ভবিষ্যত কতটা?
বাংলাদেশে রেডিও ব্রডকাস্টিং প্রফেশনটা ঠিক সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দু-একজন ভালো করা মানে সামগ্রিক অর্থে সেই প্রফেশনকে সফল বলা যায় না। তবে অনেক সুযোগ আছে, এটাকে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। সেজন্য সময়, অর্থ আর মেধার সমন্বয় দরকার, যা আমাদের দেশের অনেক রেডিওতে নেই। তবে সময় বদলাচ্ছে, নতুন ধারণা নিয়ে অনেক রেডিও স্টেশন কাজ করছে।  ভালো কিছু আরজেও তৈরি হচ্ছে।

 

যারা আরজে হতে চায়, তাদের জন্য কী পরামর্শ?
আরজে হতে চাইলে আগে ভালো মানুষ হতে হবে, যে কিনা সবার সাথে মিশতে পারে, সবাইকে আপন করে নিতে পারে। সেই সাথে বুদ্ধিদীপ্ত হওয়াটাও জরুরি। সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারাটা দরকার। সবচেয়ে বেশি দরকার পরিমিতিবোধ- ঠিক কতটুকু কথা আপনি বলবেন আর কতটুকু বলবেন না। ‘থিয়েটার অফ মাইন্ড’ বিষয়টা বুঝতে হবে। 

আরজে হওয়ার জন্য কোর্স করা কী খুব জরুরি?
না, ঠিক তা নয়। কোর্স করলেই যে আপনি একজন ভালো রেডিও ব্রডকাস্টার হয়ে যাবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমি নিজেও কোনো কোর্স করিনি। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর মেন্টর হিসেবে ক্লাস করিয়েছি, যাদের অনেকে এখন প্রতিষ্ঠিত আরজে আবার অনেকেই সফল হতে পারেননি। এই বিষয়টা আসলে অনেকটা গড গিফটেড, যা থাকলে পরিচর্যার মাধ্যমে আরো ভালো করা যায়। তবে একাগ্র প্রচেষ্টা আর অধ্যাবসায় থাকলে অবশ্যই সম্ভব। 

আপনার ব্যক্তিগত, পারিবারিক জীবন?
আমি বিবাহিত। এক পুত্র সন্তানের জনক, নাম আরাফ। স্ত্রী তানজিদা মেহের, গৃহিনী। আমার বাবা-মা দুজনেই আল্লাহর অশেষ রহমতে সুস্থ আছেন। বাবা মো. আছাব উদ্দিন পেশায় শিক্ষক, মা হোসনে আরা মির্জা, গৃহিনী। একটাই বোন, বিবাহিত। কোনো ভাই নেই।

ভবিষ্যত লক্ষ্য?
ভবিষ্যত নিয়ে আমার কখনোই তেমন কোনো লক্ষ্য ছিল না। আল্লাহ আমার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটাই আমার জন্য মঙ্গলজনক হবে, ইনশাআল্লাহ। তবে জীবনকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেখানে গেলে মানুষের কল্যাণে অনেক বেশি কাজ করা যাবে। 

প্রিয় রেডিও শো?
আমার সব শো-ই আমার কাছে সন্তানের মতো। একটাকে বাদ দিয়ে আরেকটার কথা বলা মুশকিল। আমার প্রথম রেডিও শো ছিলো- ‘এই রাত তোমার আমার’। তারপর অনেক শো করেছি। এখন করছি ‘তুমি আমি আর গান’। এছাড়াও অডিও ফিকশান হিসেবে থার্সডে নাইট সাগা, ফেলুদা, পাপ। যেগুলো ভিন্নমাত্রা যোগ করে আমার রেডিও ক্যারিয়ার। আর এখন করছি ‘ক্যাপিটাল থিয়েটার’।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ