Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

একান্ত সাক্ষাৎকারে অ্যাসাল সভাপতি মাফ মিসবাহ উদ্দিন

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯:০৪, ২৫ জুলাই ২০২১

আপডেট: ২১:৩৬, ২৫ জুলাই ২০২১

একান্ত সাক্ষাৎকারে অ্যাসাল সভাপতি মাফ মিসবাহ উদ্দিন

 এলায়েন্স অফ সাউথ এশিয়ান লেবারস (অ্যাসাল) এর ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান, মাফ মেসবাহ উদ্দিন বলেছেন, ইমিগ্রান্ট ও দরিদ্র মানুষের স্বার্থে আমরা  প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমরা ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেনকে সমর্থন করছি। যাদের বার্ষিক আয় ২৬ হাজার ডলারের নিচে তারা যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী এই শ্রেণীর মানুষ সবসময় তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আমেরিকান মাফ মিসবাহ মূলধারার একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এপ্লায়েড ম্যাথমেটিকসে অনার্স ও মাষ্টার্স করেছেন। এছাড়া ডেমোগ্রাফিতেও তিনি মাষ্টার্স করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি উচ্চতর পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং ইণ্ডিয়ানার বল ষ্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। কর্মজীবনে চাকুরির পাশাপাশি তিনি শ্রম অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং ইমিগ্রান্ট ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন এলায়েন্স অফ সাউথ এশিয়ান লেবারস। তিনি এ সংগঠনের ন্যাশনাল চেয়ারম্যান।

তিনি একজন সক্রিয় কমিউনিটি এক্টিভিস্ট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জন্য ‘বাংলাদেশীজ ফর বাইডেন, নিউইয়র্ক’ গড়ে তুলেছেন এবং এ সংগঠনের ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাপ্তাহিক বাংলাদেশের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, একজন ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের সময় খেটে খাওয়া মানুষ যতটুকু সুবিধা লাভ করে একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের সময় তা পাওয়া যায় না। বরং তারা আরও বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়ে। তাই আসন্ন নির্বাচনে আমরা বাইডেন বা ব্যাপক অর্থে ডেমোক্রেটদের সমর্থন করছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা বলছেন যে এখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, ওবামা প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রে যাদের বার্ষিক আয় ২৬ হাজার ডলার বা এর নিচে ছিল তাদের সংখ্যা ছিল ৮ শতাংশ। ট্রাম্পের শাসনামলে দারিদ্রসীমার নিচে এই খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ। তিনি প্রশ্ন করেন, অর্থনীতি ভালো হয়েছে কাদের জন্য? যারা বিত্তবান ও উচ্চ আয় করছে তাদের জন্য।

অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং নিম্ন আয়ের লোকদের আবাসন সুবিধা দেয়ার জন্য। নিউইয়র্ক সিটিতে বেশ কিছু অ্যফোর্ডেবল হাউজিং নির্মাণ করা হচ্ছিল। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষতায় আসার পর অ্যাফোর্ডেভল হাউজিংয়ের জন্য অর্থায়ন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন আর অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং এর কাজ চলছে না। হেলথ ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে মাফ মিসবাহ বলেন, নিম্ন আয়সম্পন্ন যেসব মানুষের হেলথ ইন্স্যুরেন্স ক্রয় করার সামর্থ নেইতাদের বাঁচার জন্য রয়েছে মেডিকেইড-মেডিকেয়ার বা ওবামাকেয়ারের মতো ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওবামাকেয়ার পুরোপুরি বাতিলের পক্ষে। এছাড়া তিনি মেডিকেইড-মেডিকেয়ারের বাজেট কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, যেসব স্টেটে রিপাবলিকান গভর্নর দায়িত্ব পালন করছেন সেসব স্টেটে ওবামাকেয়ার বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। এসব স্টেটের ২৭.৫ মিলিয়ন মানুষের কোন হেলথ ইন্স্যুরেন্স নেই। তাহলে এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো চিকিৎসার জন্য কোথায় যাবে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্পর্কি এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবেচেয়ে বেশি তহবিল সংস্থান করতো যুক্তরাষ্ট্র। এই সংস্থা থেকে উপকৃত হতো বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবদান সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা আশা করি জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি পুনরায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন পুনর্বহাল করবেন।

স্টুডেন্ট লোন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে অ্যাসাল সভাপতি বলেন যেসব দরিদ্র ছাত্র স্টুডেন্ট লোন নিয়ে পড়াশোনা করছে তাদের তাদের অবস্থা কলুর বলদের মতো দাঁড়াবে। পড়াশোনা শেষ করে ঋণের বোঝা টানতে টানতে তাদের জীবনের অর্ধেক শেষ হয়ে যায়। জো বাইডেন বলেছেন যে তিনি নির্বাচিত হলে ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত স্টুডেন্ট লোন মওকুফ করবেন। এ পরিকল্পনা থেকে স্বল্প আয়ের খেটে খাওয়া পরিবারগুলো উপকৃত হবে। ট্রাম্পে ট্যাক্স কাট সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে মাফ মিসবাহ বলেন, ট্রাম্পের ট্যাক্স কাটের ফলে লাভবান হয়েছে ধনী ও বণিক শ্রেণী। ট্যাক্স কাটের ৯৮ শতাংশ গেছে উচ্চবিত্তবানদের পকেটে। ট্রাম্পের ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার ট্যাক্স কাট ছিল ধনীদের স্বার্থে। স্টিমুলাস প্যাকেজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রথম স্টিমুলাস প্যাকেজের ৮০ শতাংশ পেয়েছে ২০ শতাংশ দনী লোক। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ পেয়েছে ৮০ শতাংশ দরিদ্র লোক। অর্থ্যাৎ দরিদ্র মানুষকে ভিক্ষা দিয়ে খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ডেমোক্রেটরা যে স্টিমুলাস প্যাকেজের কথা বলছেন তাাতে উপকৃত হবে ৮০ শতাংশ দরিদ্র লোক এবং ২০ শতাংশ ধনবান মানুষের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে। এ জন্য ধনীক শ্রেণীর প্রতিনিধি রিপাবলিকানরা। নতুন স্টিমুলাস প্যাকেজ পাস না করে ঝুলিয়ে রেখেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশীজ ফর ট্রাম্প’ নামেও একটি সংগঠন রয়েছে এবং তারা বলছে যে বর্তমান সময়ে নাকি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। তিনি বলেন, এরা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। প্রেসিডেন্ট ওবামার শেষ বাজেটে ৫০০ বিলিয়ন ডলার উদ্ধৃত্ত ছিল, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শেষ বাজেটে ১ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি রয়েছে। এরপর যদি কেউ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো বলে দাবী করেন, তাহলে তারা যথার্থই বোকার স্বর্গে বাস করছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ওবামার সময় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯ ট্রিলিয়ন ডলার, যা এখন ২২ ট্রিলিয়ন ডলাওে উন্নীত হয়েছে। যারা এরপরও অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো বলতে চান তাদের জ্ঞান অতি সীমিত। বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ে তিনি বলেন, জো বাইডেন দীর্ঘ ২০ বছর সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দু’একটি আরব দেশের সাথে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করে কৃতিত্ব নিতে চাইছেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে প্রকৃত সমস্যা হচ্ছে ফিলিস্তিন ইসরাইল সমস্যা। আসল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে তিনি দখলদার ইসরাইলের স্বার্থে যা করছেন সেটিকে বৈদেশিক নীতি বলা যায় না। প্রথমে সেখানে ফিলিস্তি-ইসরাইল সমস্যার সমাধান করতে হবে, এরপর অন্য কিছু নিয়ে ভাবা যাবে। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের রাতারাতি সমাধান না হলেও জটিল হবে না। ট্রাম্প প্রশাসন সেখানকার জটিলতা নিরসনের পরিবর্তে বৃদ্ধি করছে।

ইমিগ্রান্টদের অবস্থা সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চেইন ইমিগ্রেশন বন্ধ করার কথা বলেছিলেন। এছাড়া তিনি একের পর এক ইমিগ্রান্টদের উপর হানা দিচ্ছেন। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম প্রবেশ নিষেধ করেছেন। ট্রাম্প যদি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে তিনি চেইন ইমিগ্রেশন বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি কখনো এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না।


চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ