Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

‘মাদক হলো সকল অপরাধের আকর’

সাইদ রহমান

প্রকাশিত: ২২:২০, ৩০ জুন ২০২১

আপডেট: ২২:৫৩, ৩০ জুন ২০২১

‘মাদক হলো সকল অপরাধের আকর’

মুফতি নোমান কাশেমি

বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম, ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক মুফতি নোমান কাশেমি। আল মারকাযুল হানাফী বাংলাদেশ-এর পরিচালক এই আলেম বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। মাদকের ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান, মাদক নির্মূলে সমাজ-ব্যক্তির ভূমিকা, মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে কীভাবে সুস্থ করে তোলা যায়- এমন নানা বিষয়ে কথা বলেছেন চ্যানেল ৭৮৬-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- সাইদ রহমান

মাদকের ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান কী?
সুস্পষ্ট হারাম। এ নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা কিংবা বিশ্লেষণ নেই। কোরআন এবং হাদিসে এটিকে অবৈধ বলা হয়েছে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে। মাদক এমন এক সর্বগ্রাসী বিষয়, যা গ্রহণ করলে ওই ব্যক্তি নিজের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই আমরা যে কোনো খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারি। কিন্তু মাদকাসক্ত ব্যক্তি যেহেতু নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তাই তার পক্ষে অনায়াসেই যে কোনো অন্যায় করা সম্ভব। তাই মাদককে বলা হয় অপরাধের আকর।

রাষ্ট্র যখন মাদককে বৈধ বলছে, তখন আমাদের কী করণীয়?
ইসলামের যেসব মৌলিক বিধান নিয়ে খুব বেশি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সুযোগ নেই, তেমনই একটি বিধান হলো মাদকের হারাম হওয়ার বিষয়টা। শুধু রাষ্ট্র কেন, সারা পৃথিবীতে যদি একযোগে মাদককে বৈধ ঘোষণা করা হয়, তবুও আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী এটি হারাম। এখানে তো শুধু ধর্ম ফ্যাক্টর নয়, অন্যান্য সব দৃষ্টিকোণ থেকেই এটি খারাপ। আজ পর্যন্ত কোনো বিশেষজ্ঞ কিংবা চিকিৎসক তো বলেননি যে, মাদকের মধ্যে উপকারিতা আছে। 

মাদকের কুফল সম্পর্কে আপনার একটা বই আছে বলে জানি...
হ্যাঁ। আমার বইটির নাম ‘মাদকের কালগ্রাস, ধ্বসের মুখে যুবসমাজ’। এটি প্রকাশিত হয়েছে মাকতাবাতুল আহনাফ থেকে। বইটিতে শুধু মাদকের কুফল নয়, কোরআন ও হাদিসের আলোকে কেন এটা নিষিদ্ধ তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়, কীভাবে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা যায়- সেসব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে।

মাদকের ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে সমাজ কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?
বলা বাহুল্য, মাদক প্রতিরোধে সমাজের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। রাষ্ট্রের আইন সব অন্যায় প্রতিরোধ করতে পারে না, অনেক সময় সমাজকে এগিয়ে আসতে হয়। সমাজের যারা কর্তাব্যক্তি আছেন তারা উদ্যোগ নিয়ে একটা নির্দিষ্ট এলাকাকে মাদকমুক্ত করতে পারেন। শুধু কর্তাব্যক্তিরা নন, কেউই দায় এড়াতে পারি না। মনে রাখা দরকার, কাল কেয়ামতে প্রত্যেককে তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

কোরআনে মদের প্রসঙ্গে কী বলা আছে?
কোরআন কারিমে মাদক নিষিদ্ধের বিষয়টি তিনটি ধাপে এসেছে। প্রথমে বলা হয়েছে, ‘মদ ও জুয়ার মধ্যে আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য অপকারও, কিন্তু এগুলোতে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি।’ দ্বিতীয় পর্যায়ে বলা হলো- ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, পূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, এগুলো শয়তানের কার্য। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ সর্বশেষে ঘোষণা করা হলো, ‘শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদিগকে আল্লাহর স্মরণে ও নামাজে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না?’

এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) কী সতর্কবাণী দিয়ে গেছেন?
হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলো ইলম লোপ পাবে, অজ্ঞানতার বিস্তার ঘটবে, মদ্যপান ও মাদকের প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে’ (বুখারি : ৮০)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে মিরাজের রাতে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি দেখানো হয়েছে। তিনি মদ, মাদক ও নেশা গ্রহণকারীদের শাস্তি দেখলেন। তারা জাহান্নামিদের শরীর থেকে নির্গত বিষাক্ত নোংরা পুঁজ পান করছে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ