Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

বৃটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মহানবীর (সা.) বংশধর! 

ড. আব্দুস সালাম আজাদী

প্রকাশিত: ২০:২৩, ১৭ অক্টোবর ২০২২

বৃটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মহানবীর (সা.) বংশধর! 

শিরোনাম দেখে পাঠক হয়তো চমকে উঠেছেন। আমারও একই অনুভূতি হয়েছে। কথাটা আমি প্রথম শুনি ২০০৪ সালে ক্যাম্ব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে। আমার বন্ধু ও শিক্ষকতুল্য ড. ডেভিড রোসার ওয়েন (শায়খ দাঊদ) বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ট্রেইনিং সেশনে লাঞ্চের সময় কথাটা আমাদের বলছিলেন। 

স্যাটানিক ভার্সেস লেখার পর সালমান রুশদীর বিরুদ্ধে বৃটেইনের সমস্ত মুসলিম জনগণ একাট্টা হয়ে যায়। ঐ সময় জর্ডানের বাদশাহ হুসায়ন ইংলান্ডে আসতে চান। কিন্তু বৃটেইনের ইন্টেলিজেন্ট তার আগমনকে স্বাগত জানাচ্ছিলোনা।

এ কথা রাণীর কাছে পৌঁছলে তিনি কর্তা ব্যক্তিদের ডাকেন এবং বিষয়টির কারণ অব্গত হতে চান। তখন তাকে জানানো হয় বাদশাহ হুসায়ন নবী (সা) বংশের। তিনি এসে যদি কোন ভাবে স্যাটানিক ভার্সেস নিয়ে কোন বিরূপ মন্তব্য করেন, তাহলে খোমেনির ফাতওয়ার পর এটা আরেক ঝামেলা তৈরি করবে। এটা শুনে নাকি রাণী মন্তব্য করেন, বাদশাহ হুসায়ন নবী বংশের হলে সো আই আম!! (আমি ও তো তাই)। এটা নিয়ে তখন মিডিয়া মহলে বেশ কথা ওঠে। 

মূলত তিনি নবীর (স) এর রক্ত ধারার কিনা এটা নিয়ে ‘পিয়ার্ক নবেলিটি’ গ্রুপ প্রথম কথা বলে। যারা বৃটেইনের রাজবংশের ইতিহাস গবেষক হিসেবে পরিচিত। তারা ১৮২৬ এই সম্পর্কে লিখেন যে বৃটেইনের এই রাজবংশ ইশবেলিয়ার রাজাদের সাথে সম্পৃক্ত। এটা স্পেনের বংশ লতিকার ইতিহাসের দলীল দস্তাবেজ দিয়েও প্রমানিত।

এই বিষয়টি জোরে শোরে বাজার পায় যখন ১৯৮৬ ঐতিহাসিক হ্যারোল্ড ব্রুকস বেইকার তার Burke’s peerage, Britain’s guide to the nobility প্রকাশ করেন। এই বইটা তৎকালীন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের হাতে দিয়ে তাকে বলেন, ‘It is little known by the British people that the blood of Mohammed flows in the veins of the queen,”

এরপরে বিষয়টি the Economist এ ছাপানো হয়। ওই সময় এটা মরক্কোর ‘আল উসবু আলমাগরিবিয়্যাহ’তে আব্দুল হামিদ আল আউনী এটা প্রমাণ করে দেখান যে, রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্পেনের আব্বাসী বংশের মুতামিদ এর কন্যা যায়দার রক্ত ধারা থেকে এসেছেন, যিনি তার বাবার পরাজয়ের পর পালিয়ে ক্যাস্টাইলের রাজা আলফান্সোর আশ্রয়ে যান এবং তাকে বিয়ে করেন। 

এই যায়দা ছিলেন ফাতিমা (রা.) এর ছেলে হাসান (রা) এর পুত্র হুসায়নের মেয়ে আযযহরা (ফাতিমা)র অধঃস্তন সন্তান। বিষয়টি আরো জোর পায় মিশরের গ্রান্ড মুফতি আলী জুমআহ এ ব্যাপারে ইতিবাচক অভিমত দিলে এবং রাণীর জন্য দোয়া করলে। 

এরপর অনেক দিন বিষয়টা  আলোচনায় আসেনি। অতি সম্প্রতি বৃটেইনের রয়্যাল ফিচার রাইটার জেনিফার নিউটন ২০১৮ সালে How the Queen could be related to Prophet Muhammad due to possible Spanish ancestor নামে একটা ফিচার লেখেন। সেই থেকে বিষয়টা নিয়ে গরম হয়ে ওঠে। 

রাণীর যে বংশ লতিকা প্রাসাদে রক্ষিত আছে সেখানে দেখানো হচ্ছে এই ভাবে- 
১- মুহাম্মাদ (সা)
২- আলী + ফাতিমা
৩- হাসান বিন আলী
৪- হুসায়ন ইবন হাসান
৫- যাহরা (ফাতিমা) বিনতে হুসায়ন 
৬- নাঈম আললাখমী ইবন যাহরা 
৭- দ্বিতীয় নাঈম বিন নাঈম
৮- ইতলাফ ইবন নাঈম
৯- আমর ইব ইতলাফ
১০- আসলাম ইবন আমর 
১১- আমর ইবন আসলাম 
১২- আব্বাদ ইবন আমর
১৩- কুরায়শ ইবন আব্বাদ 
১৪- ইসমাঈল ইবন কুরায়শ 
১৫- আবুল কাসিম মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল (ইশবেলিয়ার রাজা)
১৬- আব্বাদ (২) আল মু’তাদিদ ইবন মুহাম্মাদ
১৭- আলমু’আতামিদ ইবন মু’তাদিদ আব্বাদ
১৮- যায়দা বিনতে মু’তামিদ এর স্বামী রাজা আলফান্সো
১৯-  রোডরিকস , আলফানসোর ছেলে
২০- soncha daughter of Rodriquez 
21- Aldonza Gonsalez Daughter of Soncha 
22- Aldonza Romirez daughter of Aldonza Gonsalez
23- Maria Femandez daughter of Aldonza Romirez
24- Maria Juana daughter of Maria Femandez
25- Isabella Perez daughter of Maria Juana
26- Richard, Earl of Cambridge son of Isabella Perez
26- Richard Plsatagenet son of Richard
27- Edward (IV) son of Richard Plsatagenet
28- Elizabeth Daughter of Edward (IV)
29- Margaret Tudor daughter of Elizabeth 
30- James (V) son of Margaret Tudor
31- Mary Queen daughter of James 
32- James (VI) son of Mary Queen
33- Elizabeth daughter of James (VI)
34- Sophia daughter of Elizabeth
35- George (I) son of Sophia 
36- George (II) son of George (I)
37- Fredrick Son of George (II)
38- George (III) son of Fredrick 
39- Edward son of George (III)
40- Victoria Queen Daughter of Edward 
41- Edward (VII) son of Victoria 
42- George (V) son of Edward (VII)
43- George (VI) son of George (V)
44- Elizabeth (II) daughter of George (VI) 

এই হিসেবে কাসতালিয়ার রাজা আলফান্সো ও যায়দার  ঘরে জন্ম নেয়া মেয়ে সানচোর মাধ্যমে যে আর্ল ক্যাম্ব্রিজ রাজবংশের পত্তন হয়, সেখান থেকেই আসেন রাণী এলিজাবেথ। নবী (স) এর বংশের সাথে রাণীর বংশের এই খবর প্রকাশের পর বিশ্ব মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। অনেকেই এটা অস্বীকার  করেন, আরবদের অনেকেই স্বীকার করেন। তবে সামগ্রিক মুসলিম বিশ্ব থাকে নিশ্চুপ। 

আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই বংশ তালিকার ব্যপারে সন্দিহান। কারণ হুসায়ন বিন হাসান বিন আলীর ঘরে যাহরা নামে কোন মেয়ের নাম পাওয়া যায়না। যে নাম দিয়ে নবী বংশের সাথে মিলানো হয়, তার অস্তিত্ব না থাকলে কিভাবে এই বংশ লতিকাকে ধর্তব্যে আনা যাবে? যাই হোক, এই ব্যাপারে আল্লাহ ভালো জানেন। কিন্তু এই নবী (সা) এর বংশের সাথে রাণীর বংশের মিল হলে আমাদের আসে যায় কি? 

আমি গত ২০ বছর এই দেশে আছি। দেখেছি আন্তঃধর্ম শান্তির ব্যাপারে রাণীর ভূমিকা অত্যন্ত ভালো। যে সব মুসলিম এই দেশে আছে তাদের সার্বিক কল্যানার্থে রাণীর ভূমিকা প্রসংশনীয়। যদিও মুসলিম বিশ্বের সাথে বৃটেনের সম্পর্কোন্নয়নে তাঁর ভূমিকা কতটুকু, তা আমি জানি না। 

৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ দুপুর ২টার দিকে মৃত্যবরণ করেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। 

আমাদের নবী (সা.) একবার এক ইয়াহুদির লাশ নিয়ে যেতে দেখে দাঁড়িয়ে যান। তাঁকে বলা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ, এটা একজন ইহুদির লাশ। তিনি বলেছিলেন, আ- লাইসাত নাফসান? ‘এ কি মানুষ নয়?’ আমাদের শায়খ ইবন বায (র) ও কাফিরের লাশ হলেও দাঁড়ানো জায়েয বলেছেন। আমি তাই এদেশের নাগরিক হয়ে তার মৃত্যতে শোক জ্ঞাপন করছি। এই দেশের জন্য রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অবদান ইতিহাস হয়ে থাকবে। ৭০ বছর নির্বিঘ্নে তিনি দেশ চালিয়েছেন এবং এদেশের আপামর জনসাধারণের  মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন।


চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ইমেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected]। আপনার পণ্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ