Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

‘আল্লাহর জমিনে তার দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ৩ নভেম্বর ২০২৩

‘আল্লাহর জমিনে তার দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই’

মুফতী হাফিজ লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী। একাধারে একজন ইসলামিক স্কলার, শিক্ষক, ইমাম ও লেখক। নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি সম্মানসূচক পিএইডডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এ উপলক্ষে মুখোমুখি হয়েছেন চ্যানেল ৭৮৬-এর।

পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের অনুভূতি কেমন?
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তায়ার কাছে অসংখ্য শুকরিয়া যে, তিনি আমাকে এই ডিগ্রি অর্জনে তৌফিক দান করেছেন। এই অনুভূতি অসাধারণ। স্বপ্ন ছিল পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করবো, অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমার এই জার্নিতে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

আপনার ছোটবেলার পড়াশোনা নিয়ে জানতে চাই…।
সব মানুষের মধ্যেই একটা পারিবারিক ঐতিহ্য থাকে। আমার মধ্যেও আছে। আমার বাবা-মা ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। পরিবারের অন্যান্যরা ইসলামিক লাইনে পড়াশোনা করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় মাত্র দেড় বছরে আমি কোরআনে হাফিজ হয়েছিলাম। তখন আমার বয়স ১৩ অথবা ১৪। এরপর সিলেটে আরও কিছুদিন লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ঢাকায় পা রেখেছিলাম।

ঢাকায় কোথায় পড়াশোনা করেছেন?
ঢাকায় এসে ভর্তি হয়েছিলাম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা জামিয়া রাহমানিয়াতে। সেখানে দুই বছর লেখাপড়া করেছি। অর্জন করেছি এমএ ডিগ্রি।

ভারত এবং পাকিস্তান থেকেও আপনি ডিগ্রি অর্জন করেছেন…।
জামিয়া রাহমানিয়ার পড়াশোনা শেষে ভারতের অত্যন্ত প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে হাদিসের ওপর ডিগ্রি নিয়েছি। তারপর পাকিস্তানের ঐতিহাসিক মাদরাসা করাচির জামিয়াতুল উলুমুল ইসলামিয়া থেকে ইফতা বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছি।

কর্মজীবন শুরু করলেন কখন?
আনুষ্ঠানিকভাবে আমার কর্মজীবন শুরু হয়েছে শিক্ষকতা দিয়ে। পাকিস্তান থেকে ফেরার পর নিজের এলাকায় জামিয়া মোহাম্মদিয়া বিশ্বনাথে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে চাকরি শুরু করি। তবে চাকরিটা আমাকে খুব বেশিদিন করতে হয়নি।

আমেরিকায় আসলেন কখন?
নিজের এলাকায় শিক্ষকতা করার কিছুদিন পরেই আমেরিকায় আসার ব্যবস্থা হলো। আমেরিকায় চলে আসি ১৯৯৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর। অর্থাৎ প্রায় ২৫ বছর ধরে আমি এই দেশে বসবাস করছি। এতদিন পর আমার পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার স্বপ্নটাও পূরণ হলো। সবমিলিয়ে ভীষণ ভালো লাগছে।

আপনার পিএইচডির বিষয়বস্তু কী ছিল?
দুটি মেজর নিয়ে আমার পিএইচডি কমপ্লিট হয়েছে। প্রথম মেজর হলো ইসলামিক স্টাডিজ। দ্বিতীয়টি হলো হাদিস। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেটে অবস্থিত ইন্টারফেইথ থিওলোজিক্যাল সেমিনারি নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে এই ডিগ্রি অর্জন করেছি। এক্ষেত্রে আমাকে দুটি বিষয়ে থিসিস করতে হয়েছে। একটি হলো—বায়োগ্রাফি অব সিক্স ইমামস অব হাদিস। অন্যটি—দ্য বায়োগ্রাফি অব ফোর ইমাম অব মাজহাব। 

আপনার দুটি বই সম্পর্কে জানতে চাই…।
মূলত পিএইচডির দুটি থিসিসকেই বই আকারে বের করা হয়েছে। বই দুটি প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। অনলাইনে বই দুটির ই-বুক ভার্সনও পাওয়া যায়। আপনাদের সবাইকে পড়বার অনুরোধ জানাচ্ছি।

একজন ধার্মিক মানুষ হিসেবে আমেরিকায় চলাফেলা কষ্ট হয় না?
আমরা যারা মুসলমান, তারা যে জায়গাতেই থাকি না কেন, উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহকে রাজি-খুশি রাখা এবং দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা। প্রথম দিকে কষ্ট তো একটু হয়েছেই বা এখনও হয়। তবে পরিকল্পনা এবং উদ্দেশ্য ঠিক থাকলে এগিয়ে যেতে কোনো বাধা হয় না।

এখানে আপনি কোন কোন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত?
নিউইয়র্কের ডাউনটাউন ম্যানহাটনে অবস্থিত আস-সাফা ইসলামিক সেন্টার অনেক বড় ইনস্টিটিউশন। এই অরগানাইজেশন থেকে আমরা ইসলামের প্রসারে নানা কাজ করে থাকি। আমি এর দায়িত্বে আছি। এছাড়া সবমিলিয়ে প্রায় ১৫ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছি। এর অন্যতম হলো ইউনাইটেড উলামা কাউন্সিল অব ইউএসএ। এই সংগঠনসহ অন্যান্যগুলোর মাধ্যমে আমরা দাওয়াতি কাজ করে থাকি। 

এত দায়িত্ব কীভাবে সামলান?
আমেরিকা একটি উন্নত দেশ। এখানে নানা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকে। এ জন্য এখানে এসে মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে সফলতা লাভ করে। আরেকটা কথা আছে—মাল্টিটাস্কার। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যখন একইসঙ্গে অনেক কাজ করে। যেমন আমার বন্ধুবর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি গ্লোবাল দাওয়াহ টেলিভিশন আইটিভির সিইও। এছাড়া তিনি আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। অনেক ব্যস্ত থাকেন, অনেক কাজ করেন। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলে আসলে অনেক কাজ করা সম্ভব।

ইসলামিক স্টাডিজ নিয়েই কেন পিএইচডি করলেন?
আমরা মুসলমান, এটা অনেক বড় পরিচয়। সেক্ষেত্রে আমাদের ধর্ম, নিয়ম-নীতি, কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য জানা অত্যন্ত জরুরি। আর ইসলামিক স্টাডিজ না পড়লে পূর্ণাঙ্গভাবে এগুলো জানা সম্ভব নয়।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে আমি কী করবো, সেটা আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। আমি শুধু চেষ্টা করতে পারি। মুসলমান হিসেবে আল্লাহ তায়ালা একজন মানুষকে যে দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে পাঠান, সেটাই ভবিষ্যতে আমি আরও ভালোভাবে করে যেতে চাই। কাজটা হলো দ্বীন প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করে যাওয়া। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার জন্য যা যা করা দরকার হয়, আমি তাই তাই করার চেষ্টা করবো। আল্লাহ যেন আমাকে কবুল করে নেন।


চ্যানেল৭৮৬ এর নিউজ রুমে যোগাযোগ করতে ইমেইল করুন এই ঠিকানায়[email protected] । আপনার পণ্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নম্বরে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ