Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা লজ্জাজনক, দায় বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ৬ অক্টোবর ২০২৩

‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা লজ্জাজনক, দায় বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের’

নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির সুপরিচিত সাংবাদিক ইব্রাহিম চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্র প্রথম আলোর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে চ্যানেল ৭৮৬-এর উপস্থাপক রোকেয়া মোহনার মুখোমুখি হয়েছেন। খোলামেলা কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকারের অপসারণ, অভিবাসী ইস্যু, নিউইয়র্কের বন্যা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে।

অনাস্থা ভোটে স্পিকারের পদ হারানো কতটা প্রভাব বিস্তার করবে?
এটা অনেক সিগনিফিকেন্ট ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমনটা ইতোপূর্বে আর ঘটেনি। আমেরিকায় স্পিকার হলো রাষ্ট্রের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ। সেই তিনিই পদ হারালেন যখন তারই দলের ৮ জন সংসদ সদস্য তার বিরুদ্ধে চলে গেছেন। এখন একজন ভারপ্রাপ্ত স্পিকার পরবর্তী স্পিকার নির্বাচন করা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষ থেকে দ্রুত স্পিকার নির্বাচন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একটু মনে করিয়ে দিতে চাই, এই কেভিন ম্যাকার্থিকে নির্বাচন করতে গিয়ে ১৫ বার ভোটগ্রহণ করতে হয়েছে।

রিপাবলিকান পার্টি সংখ্যাগরিষ্ট, সেক্ষেত্রে তো সমস্যা হওয়ার কথা নয়…? 
রিপাবলিকান পার্টি খুব সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ট। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। একদল বিশ্বাস করে ট্রাম্পের অতি রক্ষণশীল ধারনায়, আরেকদল আছে মাঝামাঝি অবস্থানে। তো তাদের সংঘাত নিরসনের মধ্য দিয়ে কবে নতুন স্পিকার পাওয়া যাবে, তার ওপর নির্ভর করছে আমেরিকার রাজনীতি। আমরাও সবাই সেদিকে তাকিয়ে আছি।

‘নির্বাচনে হারুন কিংবা জিতুন, ফলাফল মেনে নিতে হবে’—বাইডেনের এই মন্তব্য নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
যুক্তরাষ্ট্র একটা গণতান্ত্রিক দেশ। খুব স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতির টপ জায়গা থেকে এমন কথা আসতে পারে। বাইডেন ঠিকই বলেছেন। যে যুক্তরাষ্ট্র সারা পৃথিবীতে গণতন্ত্রের কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে, তাদের ভোটটা তো একদম সলিড হতেই হবে। তাই প্রেডিডেন্ট কথাটা খুব শক্তভাবেই উচ্চারণ করেছেন।

বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে কীভাবে দেখছেন?
প্রথম কথা হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক ঘটনা। বাংলাদেশ একটা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র, তাকে কেন অন্য একটা দেশ এভাবে নিষেধাজ্ঞা দেবে। আসলে এই পথটা আমরাই তৈরি করেছি, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরাই তৈরি করেছে। তবে এই অপমানের ভাগীদার আমি-আপনি, আমরা সবাই। এখন বাংলাদেশের করণীয় কি? হয় যুক্তরাষ্ট্রকে পাত্তা না দেওয়া অথবা সংশোধন হওয়ার চেষ্টা করা। বাংলাদেশ কোনোটাই ঠিকঠাকভাবে করছে বলে আমার কাছে মনে হয় না।

অভিবাসীদের ঢলে নিউইয়র্কের নাজেহাল অবস্থা, এর সমাধান কী?
নিউইয়র্ক তো বরাবরই অভিবাসীদের সাদরে গ্রহণ করার কথা বলছে, কিন্তু এটাইবা কতদূর পর্যন্ত। বাস্তবতা তো আসলে খুবই কঠিন। মনে রাখতে হবে এটা আমেরিকা। এখানে একজন নারী প্রেগনেন্ট হয়ে গেলেই তার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়ে নেয়। বাচ্চা হওয়ার পর তার ভালোমন্দ, চিকিৎসা, খাদ্য, পড়াশোনা সবকিছুর দায়িত্ব সরকারের। তো এভাবে কতজন মানুষের দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব? যুক্তরাষ্ট্র কোনো মানুষকে রাস্তায় থাকতে দিতে চায় না, আবার কত মানুষকে ঘর করে দেবে—এটা আসলে একটা উভয় সংকট। আপনারা হয়তো জানেন, রাষ্ট্রীয় খরচে নিউইয়র্কের অনেক ব্যয়বহুল হোটেলে অভিবাসীদের রাখা হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ আসছে, তাদেরকে যাচাই-বাছাইও করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমি বলতে চাই, আমরা অভিবাসীদের পক্ষে, কিন্তু সেটা হোক আইনগতভাবে একটা নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন। যাচাই-বাছাই করেই সেটা করতে হবে। আজকে নিউইয়র্কের প্রায় বেহাল অবস্থা। অভিবাসীদের গ্রহণ করতে গিয়ে অনেককে অনেকভাবে মূল্য দিতে হচ্ছে, আবার গ্রহণ করা ছাড়াও উপায় নেই। সবমিলিয়ে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমি অবাক হবো না, যদি এই অভিবাসী ইস্যুতে আগামী নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে রাজনৈতিক মূল্য দিতে হয়।

ব্রঙ্কসে গাড়ির ধাক্কায় বাংলাদেশি মুয়াজ্জিন মারা গেলেন, কেন এমনটা হচ্ছে?
প্রথমে আমি এর জন্য শোক জানাতে চাই। আমরা এ ব্যাপারে সংবাদও প্রকাশ করেছি। এখানে রাস্তায় নিরাপত্তার কথা না বললেই নয়। ব্রঙ্কসের রাস্তাগুলোতে মানুষ সন্ধ্যার পর হাঁটতে ভয় পায়। লোকজন বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়ি হাইজ্যাক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো না। অনেক সময় পুলিশকে ডাকলেও পাওয়া যায় না। 

এতে নিজেদের কোনো দায় আছে?
অবশ্যই আছে। আমাদের সচেতনতার অভাব এক্ষেত্রে বহুলাংশে দায়ী। গত ১০ বছরে নিউইয়র্কে অনেক বাংলাদেশি গাড়িচাপায় মারা গেছেন। আমার মনে হয় এসব ব্যাপারে নিজেদেরও কিছু দোষ আছে। হয়তো হাঁটতেছে কিন্তু খেয়াল রাখছে না যে, সিগন্যালটা কোথায় চলছে, লাইট কোথায় জ্বলছে। আমরা অনেক সময় বলার চেষ্টা করেছি, এশার নামাজের পর বৃদ্ধ বা শিশুরা একা বাসায় না গিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে হাঁটবেন। কিংবা বাসায় ফিরতে পরিবারের হেল্প নেবেন।

এই দেশে এসে বাংলাদেশের রাজনীতি আকড়ে থাকাটা কতটা উচিত?
মোটেও উচিত নয়। শুনলে অবাক হবে, নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই জানেন না যে, তার এলাকার স্থানীয় কাউন্সিলম্যান/ওম্যান কে? অথচ তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির সব খবর রাখেন। এই সমস্যা কঠিনভাবে আমাদের বাংলাদেশি রক্তে ঢুকে গেছে। যারা অনেকদিন থেকে নিউইয়র্কে আছে, তাদের ব্যাপারে আর কোনো আশা নেই। তবে আমি খুব করে চাই, নতুন প্রজন্ম যেন দেশের রাজনীতির এই নোংরা চর্চার সঙ্গে না জড়ায়। 

নিউেইয়র্কের বন্যা হচ্ছে কেন?
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক ফলাফল সবাইকেই ভোগ করতে হবে। নিউইয়র্ক তো তার  ঊর্ধ্বের কিছু নয়। গত কয়েক বছর ধরে এখানে নিয়মিতই বন্যা হচ্ছে। এবারের বন্যাটা বেশ ভয়ানক, অনেক ক্ষতি করে গেছে নিউইয়র্কবাসীর। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তো আছেই, আমাদেরকেও সতর্ক হতে হবে। প্লাস্টিকের বর্জ্য নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলবো…এমন আরও অনেক নাগরিক-সামাজিক দায়িত্ব আছে।


 চ্যানেল৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ইমেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পণ্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ