Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

‘নিউইয়র্কে আজানের অনুমতি মুসলিমদের অনেক বড় অর্জন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ৩০ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ২৩:১৯, ৩০ আগস্ট ২০২৩

‘নিউইয়র্কে আজানের অনুমতি মুসলিমদের অনেক বড় অর্জন’

সম্প্রতি ঐতিহাসিক এক ঘটনা ঘটেছে নিউইয়র্কে। দীর্ঘ দেন-দরবার আর আন্দোলন-সংগ্রামের প্রেক্ষিতে মাইকে আজান দেওয়ার অনুমতি মিলেছে রাজ্যটিতে। এ নিয়ে আনন্দে উদ্বেলিত মুসলিম কমিউনিটি। আজানের অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে নেপথ্য চেষ্টার অন্যতম কারিগর বাংলাদেশি আমেরিকান এডভোকেসি গ্রুপ এবং আল-আমিন জামে মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারের প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন। চ্যানেল৭৮৬ এর মুখোমুখি হয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি। 

আজানের অনুমতি পাওয়ায় আপনার অনুভূতি…?
একজন মা যখন ১০ মাস বাচ্চাকে পেটে ধরে রাখেন, তার অনেক কষ্ট হয়। ঘুমাতে সমস্যা, খাওয়ায় সমস্যা, হাঁটা-চলাফেরায় সমস্যা। কিন্তু যখন বাচ্চাটা দুনিয়াতে আসে তখন মুখটা দেখার পর আর কোনো কষ্ট থাকে না ওই মায়ের। ঠিক তেমনই অনুভূতি আমাদের। এই আজানের অনুমতি পাওয়ার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। তবে আজ নিউইয়র্কের আকাশে আল্লাহু আকবার ধ্বনি শুনে সব কষ্ট উবে গেছে। সত্যিই আমি আজ অত্যন্ত আপ্লুত, অত্যন্ত আবেগতাড়িত।

এই অর্জন কতটা তাৎপর্যপূর্ণ?
আমরা সকলেই জানি, সারাবিশ্বে ইসলামকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। মিডিয়া তো নেগেটিভ প্রোপাগাণ্ডা চালিয়েই যাচ্ছে। ইসলামোফোবিয়া চেপে বসেছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন মুসলিম দেশ যেখানে আজানকে সীমিত করছে, আজানের আওয়াজকে সীমিত করে দিচ্ছে, সেখানে নিউইয়র্কের মতো জায়গায় আমরা আজান দেওয়ার অনুমতি পেলাম। এটা অনেক বড় একটা অর্জন। আমি জানি না, কী বললে আল্লাহর শোকর আদায় হবে!

নিউইয়র্কে আজানের অনুমতির জন্য দেন-দরবার শুরু হয়েছিল কখন?
১৯৯০ সালে নিউইয়র্কের মেয়র ছিলেন ডেভিড ডিনকিন। তখনই মাইকে আজান দেওয়ার অনুমতির জন্য কাজ শুরু করা হয়। আমাদের অনেকে তখনও এ দেশে আসিনি। এই মুহূর্তে স্মরণ করছি তাদেরকে, যারা সেদিন সিটি হলে গিয়ে আজানের অনুমতির জন্য মেয়র ডেভিড ডিনকিনের সঙ্গে দেনদরবার করেছিলেন। সেদিন তারা শুরু না করলে আজ আমরা ফলাফল পেতাম না। 

এই অর্জনে বর্তমান মেয়র এরিক আদমের অবদান কতটা? 
এরিক আদম যখন মেয়র পদে প্রার্থী হলেন, বাংলাদেশি আমেরিকান এডভোকেসি গ্রুপের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। প্রাক-নির্বাচনী ওই ইন্টারভিউতে আজানের অনুমতির বিষয়টা তোলা হয়। তখন তিনি ওয়াদা করেছিলেন যে, বিষয়টা দেখবেন। তিনি তার কথা রেখেছেন। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এরিক আদমকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই। খবরটা যখন শুনলাম, তখন সঙ্গে সঙ্গে এরিক আদমের একজন কমিউনিটি লিঁয়াজোকে ফোন দিলাম। বললাম, আমাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা যেন মেয়রকে পৌঁছে দেওয়া হয়।

এই ঘটনায় বিভিন্ন দেশে থাকা অভিবাসী মুসলিমরা কী শিক্ষা নিতে পারে?
সারাবিশ্বেই কিন্তু মুসলমানদের অবস্থান রয়েছে। অনেক দেশে হয়তো তারা খুব কষ্টে, বিভিন্ন চাপের মুখে বসবাস করছেন। নিজের ধর্মটা ঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না। আমি তাদের উদ্দেশে বলবো, নিউইয়র্কের এই ঘটনা থেকে আপনারা শিক্ষা নিন। আপনাদের যে প্রতিবেশী আছে, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন। আমরা যদি অমুসলিম একটা দেশে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি, তাহলে তারা আমাদের দাবিগুলো নিয়ে ভাববে। পাশাপাশি কমিউনিটি যতই ছোট হোক না কেন, একতাবদ্ধ থাকতে হবে। তাহলে প্রশাসন আপনাদের দাবির দিকে নজর দিতে বাধ্য হবে।

আজানের অনুমতি পাওয়ার পর নিউইয়র্কের মুসলমানদের কী করণীয়?
আজানের জন্য একটি সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেই সময় ভায়োলেট করে আজান দেওয়া যাবে না। সবসময় মাথায় রাখতে হবে, ইসলাম শান্তির ধর্ম, সাম্যের ধর্ম, মানবতার ধর্ম। অন্যের ক্ষতি করার ব্যাপারে ইসলাম কখনো সায় দেয় না। আরেকটি ব্যাপারে বলতে চাই, আমরা যেহেতু নিউইয়র্কের মতো একটি জায়গায় আজান দেওয়ার অনুমতি পেয়েছি, সেক্ষেত্রে আজানটা হতে হবে সুমধুর এবং শুদ্ধ উচ্চারণে। এখানে যারা অমুসলিম আছেন তারা যেন আজানের শব্দ শুনে পুলকিত হন, তাদের যেন ভালো লাগে, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। কেউ যদি আজানের ব্যাপারে কোনো মুসলমানকে নেতিবাচক কিছু বলে, তাহলে সুন্দর ভাষায় তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে, কোনোভাবেই রূঢ় আচরণ করা যাবে না।

অন্যান্য স্টেটে এভাবে আজানের অনুমতি পাওয়া যাবে কিনা?
নিউইয়র্ককে বলা হয় সারাবিশ্বের রাজধানী। এখানে প্রায় সব দেশের মানুষ থাকেন। সেই রাজধানীতেই যেহেতু অনুমতি পেয়ে গেছি, সেহেতু অন্যান্য শহরে এমন অনুমতি আসতেই পারে। তবে ঘরে বসে থাকলে এটা হবে না। এজন্য কাজ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি জানাতে হবে। নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা যখন ভোট চাইতে আসে, তখন তাদের কাছে দাবি জানাতে হবে। যে প্রার্থী এ ব্যাপারে ইতিবাচক আচরণ করবেন, তার জন্য ক্যাম্পেইন করতে হবে, অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। তার আস্থাভাজন হতে হবে।

মুসলিম কমিউনিটির উদ্দেশে কী বলবেন?
মুসলিম কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিদেশের মাটিতে এর আসলে কোনো বিকল্প নেই। কোনোভাবেই যেন আমাদের মধ্যে ফাটল না ধরে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। একটি দাবি জানাতে হলে সবাইকে এক হয়ে জানাতে হয়, তাহলেই সেটার ইতিবাচক ফলাফল বেরিয়ে আসে।


চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ