
বাংলাদেশের রাজনীতির ভালো-মন্দ, দুটোই ছুঁয়ে যায় প্রবাসীদের। তবে সম্প্রতি শোক দিবসের আগে-পরে মাওলানা সাঈদী ইস্যুতে রাজনীতিতে যে বিভাজন লক্ষ্য করা গেছে, সেটা দেখা যায়নি নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে। এ নিয়ে চ্যানেল৭৮৬-এর সঙ্গে কথা বলেছেন কুলাউরা বাংলাদেশি এসোসিয়েশন অব ইউএসএ-এর সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমেদ।
দূর প্রবাসে এমন আড়ম্বরভাবে শোক দিবস পালনকে কীভাবে দেখছেন?
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি। তার নেতৃত্বেই যুদ্ধ করে আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। জাতির দুর্ভাগ্য, সেই তাকেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ কারণে আমরা মর্মাহত, ভারাক্রান্ত। জাতীয় শোকদিবস পুরো জাতি পালন করবে, সেটাই স্বাভাবিক। আমরাও প্রবাসে বসে শোক পালন করছি।
সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দিল আদালত, তার জন্য প্রবাসে গায়েবানা জানাজা হয় কীভাবে?
আদালত তার কাজ করেছে। মানুষের আবেগ তো আর আদালতের রায় অনুযায়ী চলে না। আদালতের কাছে আছে যুক্তি, তথ্য, প্রমাণ আর মানুষের মনে আছে ভালোবাসা। একটা দিয়ে আরেকটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আমি এটাকে সৌহার্দ্য হিসেবেই দেখি। এই প্রবাসে যারা শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ছিলেন, তারাই আবার সাঈদীর গায়েবানা জানাজায় অংশ নিয়েছেন, যা বাংলাদেশে সম্ভব নয়।
সাঈদীর সাজা নিয়ে কেন প্রশ্ন আছে বলে মনে করছেন?
মরহুম ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম জীবিত অবস্থায় বলেছিলেন, সাঈদী যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন, এমন প্রমাণ করা যায়নি। শুধু তিনি নন, এমনটা আরও অনেকেই বলেছেন। আমার ধারণা, মেজরিটি মানুষ মনে করে উনি যুদ্ধাপরাধী নন। আপনারা স্কাইপ কেলেঙ্কারির কথা জানেন। দেশে-বিদেশে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছে। একটা বিভ্রান্তিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া সুখরঞ্জন বালির কথা সামনে এসেছে। সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই সুখরঞ্জন বালির ভাইকে হত্যা করেছেন। কিন্তু সুখরঞ্জন বালি স্পষ্টভাবেই বলেছেন, তার ভাইকে সাঈদী হত্যা করেননি। তাহলে এই বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না কেন? রাষ্ট্রের আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল, তারপরও এই প্রশ্নগুলো থেকেই যায়।
তার মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
আল্লামা সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল আছে। উনি রাত ৮টার কিছুক্ষণ পর মারা গেছেন। বিকেলেও উনি ভালো ছিলেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। নার্স বলেছেন, একটা ইনজেকশন দেওয়ার পরেই উনি মারা গেছেন। এটা আমার বানানো কথা নয়, গণমাধ্যমের বরাতে যতটুকু পেয়েছি, ততটুকুই বললাম।
আল্লামা সাঈদীকে নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কেমন?
উনি অনেক বড় মাপের মানুষ ছিলেন, জ্ঞানী ছিলেন। ৫০ বছর ধরে তাফসিরের মাধ্যমে তিনি ইসলামের খেদমত করে গেছেন। শুধু তাই নয়, পার্লামেন্ট সদস্য হয়ে জনগণের সেবা করেছেন।
সাঈদীর জন্য গায়েবানা জানাজায় ভক্ত-অনুরাগীদের উপস্থিতি কেমন ছিল?
এখানে একাধিক জায়গায় মাওলানা সাঈদীর জন্য গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দোয়া হয়েছে প্রায় প্রত্যেকটা মসজিদে। মানুষ উনাকে ভালোবাসে, সম্মান করে-এটা তারই প্রমাণ। মুসলিম মিল্লাতের জন্য উনি নেয়ামত।
বাংলাদেশের দলীয় রাজনীতি ছড়িয়ে পড়েছে নিউইয়র্কেও। এটা ভালো না খারাপ?
মানুষের পলিটিক্যাল ওপিনিওন থাকতেই পারে, আমি এটাকে খারাপভাবে দেখতে রাজি নই। তবে বাংলাদেশে দলীয় রাজনীতির রেষারেষিটা যতটা খারাপ অবস্থায় চলে গেছে, নিউইয়র্কে প্রবাসীদের মধ্যে তেমনটা হয়নি। এখানে প্রবাসীরা তাদের কর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। তার ফাঁকে আমরা কেউ আওয়ামী লীগ করি, কেউ বিএনপি করি আবার কেউ জামায়াত করি। কিন্তু দিনশেষে একসঙ্গে আড্ডা দেই, গল্প করি। এই দেশে শত শত প্রবাসী আল্লামা সাঈদীর গায়েবানা জানাজায় অংশ নিয়েছেন, আবার তারাই জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। এই সৌহার্দ্য বজায় রেখে রাজনীতি করতে পারলে সেটা অবশ্যই ভালো কিছু।
চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।