মুহাম্মদ মনজুরুল করিম
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির সুপরিচিত ইসলামিক ব্যক্তিত্ব, মসজিদ মিশন সেন্টারের ইমাম ও ধর্মীয় শিক্ষক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম। দীর্ঘ ৮ বছর আমেরিকায় অবস্থান শেষে শিগগিরই বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন তিনি। তার আগে মুখোমুখি হয়েছেন চ্যানেল ৭৮৬-এর। ‘আমেরিকায় ইসলাম ও মুসলিম’ নামক একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম ও মুসলমানদের পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরজে আরিয়ান’র সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
ইসলাম ও মুসলমান-এই দুটি বিষয়ের ব্যাখ্যা কী?
ইসলাম শব্দটির অর্থ শান্তি। আর মুসলমান মানে হলো- যিনি আত্মসমর্পন করেন। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় নিজের ইচ্ছাকে একমাত্র আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেন তিনিই মুসলিম। ইসলাম হলো পূর্নাঙ্গ একটা জীবন বিধান। ইসলামের এই বিধান শুধু মুসলমানদের জন্য নয় বরং সকল ধর্মের মানুষের জন্যই এটা একটা পূর্ণাঙ্গ জীবনযাপন প্রক্রিয়া।
একজন আদর্শ মুসলমানের গুণাবলী কী?
একজন আদর্শ মুসলিমকে অবশ্যই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হয়। নিজের ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্য ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। শুধু নামে নয়, প্র্যাকটিসিং মুসলিম হতে হবে। একজন মানুষের আচরণেই প্রকাশ পাবে তিনি একজন মুসলিম। আপনি যখন এক ডেস্কে কাজ করছেন তখন আপনার পাশের মানুষটা আপনার কাজ-কর্ম আর সততা দেখেই যাতে বুঝতে পারে আপনি একজন মুসলিম।
আমেরিকাতে ধর্মীয় স্বাধীনতা কতটুকু?
আমার কাছে মনে হয়, পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশের চাইতেও আমেরিকাতে অনেক বেশি ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। এখানে সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে অনায়াসে। এমন ঘটনা নেই বললেই চলে যে, কোনো মুসলমান বা অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী ধর্মের কোনো বিধান পালন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখিন হয়েছেন। অবশ্য ইদানীং কিছু হেইট ক্রাইমের ঘটনা ঘটছে। তবে সেগুলো যতটা না ধর্মীয় তারচেয়ে বেশি রাজনৈতিক।
এখানকার মুসলিম কমিউনিটির শিশুরা নিজের ধর্ম কতটা জানতে পারছে?
কোনো বাবা-মা যদি তার সন্তানকে ধর্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে না চান, সেটা ভিন্ন কথা। তবে ওভারঅল নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে খুব ভালো জানতে পারছে এখানকার মুসলিম শিশুরা। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, বাংলাদেশে মক্তবের খুব প্রচলন ছিল। এখন তো সেটা নেই বললেই চলে। সেই তুলনায় নিউইয়র্ক অনেক ভালো আছে। এখানে প্রতি প্রতি শনিবার ও রোববার প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা শিশুদের ইসলামিক শিক্ষা দেয়া হয় বিভিন্ন ইসলামিক সেন্টার বা মসজিদে।
মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেই তাকে কি মুসলিম বলা যাবে?
মুসলমানিত্ব একটা প্র্যাকটিসের ব্যাপার। বাবা-বা মুসলিম হলেই সন্তান মুসলিম হয় না। আমরা জানি, নুহ (আ.) এর ছেলে কিন্তু কাফের ছিলেন। একজন নবীর ছেলের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আমাদের কথা তো বলাই বাহুল্য। সুতরাং ইসলাম ধর্মের নিয়মকানুন মেনে তবেই মুসলমান পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি শুধুমাত্র কালেমা পড়লেই হবে না, কাজের মধ্য দিয়ে ইসলামকে ধারণ করতে হবে।
কমিউনিটিতে কীভাবে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছেন?
দেখুন, একজন লোককে গিয়ে কালেমা পড়ালেই দাওয়াত হয়ে যায় না। আমি যে একজন মুসলমান, আমার সকল আচার-ব্যবহারে সেটার প্রমাণ থাকতে হবে। আমাকে মানবিক হতে হবে। আমার জীবনাচারণ দিয়ে যদি ইসলামের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, তাহলে অন্য একজন ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। এই যে কোভিড গেল, এ সময় আমরা কিন্তু কমিউনিটির ডোর টু ডোর গিয়ে মানুষের খোঁজ নিয়েছি। বিবেচনা করিনি, কে কোন ধর্মের কিংবা কোন বর্ণের। সকল ধর্মের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আমরা ইসলামের সৌন্দর্য দিয়ে মানুষকে আকর্ষিত করতে চাই।