Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

ফোবানা সংকট নিয়ে চ্যানেল ৭৮৬-কে মাসুদ রব চৌধুরী

‘এক্সিকিউটিভ কমিটির সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা করেন না চেয়ারম্যান’

সাইদ রহমান

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ২৬ জুন ২০২১

আপডেট: ২৩:৩৮, ২৬ জুন ২০২১

‘এক্সিকিউটিভ কমিটির সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা করেন না চেয়ারম্যান’

মাসুদ রব চৌধুরী

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সংকটের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির সবচেয়ে বড় সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা তথা ফোনাবা। সংগঠনের দুই শীর্ষ পদ চেয়ারম্যান ও এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারির মধ্যকার দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে। কেন এই দ্বন্দ্ব, কোথা থেকে শুরু, সমাধানইবা কীভাবে- এসব প্রশ্নে চ্যানেল ৭৮৬ এর মুখোমুখি হয়েছেন সেক্রেটারি মাসুদ রব চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন- সাইদ রহমান

আপনার সঙ্গে চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরীর দ্বন্দ্ব কেন, কখন থেকে?
আমাদের বর্তমান কমিটি যখন কাজ শুরু করে, তখন থেকেই বিভিন্ন মিটিংয়ে চেয়ারম্যান এককভাবে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইতেন। কোনো একটা বিষয়ে প্রায় সবাই ‘না’ বললেও তিনি সেটা সিদ্ধান্ত আকারে চাপিয়ে দিতেন। এভাবে কমিটিতে অষন্তোষ শুরু হয়। সেক্রেটারি হিসেবে আমি উনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, প্রয়োজনে প্রতিবাদ করেছি। সেই আক্রোশটা তিনি পুষে রেখেছেন।

তার মানে দ্বন্দ্ব শুধু আপনার সঙ্গে নয়, সবার সঙ্গে?
অনেকটা তাই। মনে রাখা দরকার, একটা সংগঠন চেয়ারম্যান কিংবা সেক্রেটারি চালায় না, সংগঠন চলে এক্সিকিউটিব কমিটির মাধ্যমে। কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বডির মোট সদস্যের টু-থার্ড সমর্থনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান সেসব তোয়াক্কা করতেন না। ফলে অধিকাংশ সদস্যই তার ওপর আস্থা হারাতে বসেছেন। 

আপনাকে এবং ভাইস চেয়ারম্যান ড. আহসানকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়া হলো?
বরাবরের মতো এক্ষেত্রেও তিনি সম্পূর্ণ একা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কমিটির কোনো সদস্যের সায় তো দূরের কথা, কারও সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করা হয়নি। 

এ নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর কিছু নেই আসলে। কারণ এটা কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি। এটা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক এবং ফোবানার সংবিধানবিরোধী। এটাকে হাস্যকরও বলা চলে। সংবিধান অনুযায়ী, কাউকে বহিষ্কার করতে হলে একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। তার লেশমাত্র করেননি চেয়ারম্যান। এটা তিনি সম্পূর্ণ অন্যায় করেছেন। আমার প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব থেকেই এমন হটকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

আপনার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, ফোবানা-৩৫ এর সম্মেলনের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। এক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য কী?
শুরু থেকে ফোবানা-৩৫ এর সম্মেলন সেপ্টেম্বরেই হওয়ার কথা। সে অনুযায়ীই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু নানা অজুহাত দেখিয়ে চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী এবং কয়েকটি গ্রæপ এক্সিকিউটিভ কমিটির সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে নভেম্বরে থ্যাঙ্কস গিভিং ডেতে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেয়। কমিটির এর প্রতিবাদ জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের নানা প্রান্ত থেকে আমাকে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এ অবস্থায় বিভ্রান্তি এড়াতে নির্বাচন কমিশন এবং কমিটির অনুরোধে ‘সেপ্টেম্বরেই সম্মেলন হবে’ মর্মে একটি প্রেস রিলিজ পাঠাই। এখানে আমি তো উল্টো বিভ্রান্তি নিরসনের চেষ্টা করেছি।

সেপ্টেম্বরে সম্মেলন করার পক্ষে কতজন?
৩১ সদস্যের মধ্যে সেপ্টেম্বরে সম্মেলন করার পক্ষে ১৯ জন ভোট দিয়েছেন। ভোটদান থেকে বিরত ছিলেন ১০ জন। হোস্ট কমিটিও বলেছে, থ্যাঙ্কস গিভিং ডেতে সবাই ব্যস্ত থাকে, তাই নভেম্বরে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরও চেয়ারম্যান নিজের একক ইচ্ছায় এটাকে নভেম্বরে নিয়ে যেতে চান। সেখান থেকেই নতুন করে কনফ্লিক্ট তৈরি হয়। 

সংগঠনের ফেসবুক, মেইলের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেছেন, এমন অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে...
প্রথমত বলে রাখি, ফেসবুক-মেইল মেনটেইনেন্সের দায়িত্ব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের হাতেই থাকে। এটা আগের কমিটিতেও ছিল। তারপরও পদাধিকারের কারণে চেয়ারম্যানের কাছে পাসওয়ার্ড দেয়া থাকে। একদিন আমি ফেসবুক খুলতে গিয়ে দেখি, পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করা হয়েছে। আমি এবং চেয়ারম্যান ছাড়া আরেকজনের কাছে পাসওয়ার্ড ছিল, তিনি হলেন মিডিয়া কমিটির কো-চেয়ারম্যান অ্যান্থনি গোমেজ। তিনিও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেননি বলে জানালেন। অর্থাৎ, চেঞ্জ করেছেন চেয়ারম্যান। তারপর কাজের স্বার্থে বাধ্য হয়ে আমি পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করি। 

ফোবানার মধ্যকার এই দ্বন্দ্বের সমাধান কী?
আমি কারো বিরুদ্ধে নই। চেয়ারম্যান আমাকে অন্যায়ভাবে শত্রুজ্ঞান করছেন। আশাকরি, তিনি তার ভুল বুঝতে পারবেন এবং সংগঠন আগের গতিতেই চলবে। আমার স্পষ্ট কথা, সংগঠন কারো একক কথায় চলতে পারে না। কমিটির সবাই কিংবা মেজরিটি যে সিদ্ধান্ত, সেটাই কার্যকর। এভাবে যদি আমাকে বহিষ্কারও করা হয়, তাহলেও সেটা আমি মানতে প্রস্তুত আছি।

উদ্ভূত সংকট নিরসনে কেউ উদ্যোগ নিচ্ছেন?
হ্যাঁ। সংগঠনের কয়েকজন উপদেষ্টা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। তারা আমার সঙ্গেও কথা বলেছেন। আমি আমার অবস্থান জানিয়ে দিয়েছি। আশা করছি, দ্রæত এই সংকট কেটে যাবে। সবার জ্ঞাতার্থে জানতে চাই, ফোবানা কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান জনাব জাকারিয়া চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ড. আহসান চৌধুরী এবং এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি মাসুদ রব চৌধুরী স্ব স্ব পদে নিয়মতান্ত্রিকভাকে বহাল আছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ