Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

‘ঢাবির শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিশাল ব্যাপার’

সিদ্দিকুর রহমান খান

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ২ জুলাই ২০২১

‘ঢাবির শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিশাল ব্যাপার’

সিদ্দিকুর রহমান খান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম বার্ষিকী দিনে আমার শিক্ষকতার সিকি শতাব্দীর (২৫ বছর) অনুভূতি গতকাল ১ জুলাই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় পথ চলার শততম বার্ষিকী। আর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে আমার ২৫ বছর পূর্তি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক বিশাল ব্যাপার। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এবং বর্তমান শিক্ষক হিসেবে আমার কাছেও তাই। তবে দেশের সর্ব প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে ২৫ বছর পূর্তিটাও আমার কাছে বিরাট আনন্দের। আর এ আনন্দটা সবার সাথে শেয়ার করা জন্যই আমার আজকের এ পোস্ট। 

১৯৯৬ সালের ১ জুলাই আমি এবং প্রফেসর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী (বর্তমান প্রক্টর) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেছিলাম। সে হিসেবে গতকাল আমাদের শিক্ষকতা জীবনের ২৫ বছর পূর্তি বা রজতজয়ন্তী হলো। তবে ছাত্র ও শিক্ষক জীবন মিলিয়ে প্রিয় এ ক্যাম্পাসে আমার অবস্থান তিন দশকেরও বেশি। আমার বয়সের প্রায় তিন পঞ্চমাংশ সময় ধরে আছি প্রিয় ক্যাম্পাসে। 


শিক্ষকতা করবো এটিই ছিল আমার জীবনের লক্ষ্য। তাই একদিনের জন্যও অন্য পেশায় যাইনি এবং কোনো দিন যাবারও চেষ্টা করিনি। এ পেশায় আশার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কয়েকজন অসাধারণ শিক্ষকের সাহচার্য পেয়ে। তাছাড়া আমার এক শিক্ষক একবার বলেছিলেন যে, ‘শিক্ষকতা হলো এমন একটি পেশা যা অন্যান্য সমস্ত পেশার সৃষ্টি করে’। তাঁর এ কথাটিও আমার মনে ভীষণভাবে দাগ কেটেছিল। সবমিলিয়ে প্রিয় পেশায় আসার সুযোগ হলো, তাও আবার এমন এক প্রতিষ্ঠানে যার ছাত্র হতে পারাকেই ভেবেছিলাম সাত জনমের পুণ্যের ফল। 

কেমন শিক্ষক হতে চাই-এরও একটা স্বপ্ন ছিল আমার। ছাত্র জীবনেই পড়েছিলাম মার্কিন এক পণ্ডিতের সেই বিখ্যাত কথা-একজন সাধারণ শিক্ষক শুধু পড়ান, একজন ভালো শিক্ষক বিষয়বস্তুর ব্যাখ্যা দেন, একজন উচ্চমানের শিক্ষক হাতে কলমে শিক্ষাদান করেন, কিন্তু যারা শ্রেষ্ঠ শিক্ষক তারা স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে এবং শিক্ষাকে জীবনে প্রয়োগ করতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ যোগান। অনেকের মতো শেষোক্তদের দলভূক্ত হওয়ার স্বপ্নটাই দেখেছিলাম। কিন্তু শিক্ষকতা জীবনের ২৫ বছর পর এসে আত্মজিজ্ঞাসা করে দেখলাম, সেখানে তো যাওয়াই হলো না, বরং কোথায় যে অবস্থান সেটাই বুঝতে পারছি না। তবে হতাশ হচ্ছি না। একটি জাপানী প্রবাদ আছে- ‘শেখানোর মাধ্যমেও শেখা যায়। তিনিই একজন ভালো শিক্ষক যিনি সারাজীবন ধরে শিখে যান’। এখন এই চেষ্টাটাই করছি। একই সাথে শিক্ষার্থীদের কাছে জ্ঞান ও সৃষ্টিশীলতা কে সঠিকভাবে তুলে ধরাটা রপ্ত করতে চেষ্টা করছি। কেননা এ কাজটি আইনস্টাইনের কথায় একজন ‘শিক্ষকের পক্ষে পারদর্শিতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।‘


আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে সদস্য হতে পারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বড় আবেগের জায়গা। পৃথিবীর ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো এক ব্যতিক্রমী বিশ্ববিদ্যালয়। কেন সে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। এখন অনেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও গৌরবের অবনমনের কথা বলেন। এ অভিযোগ অস্বীকারের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধোগতিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখাও উচিৎ নয় বলে আমি মনে করি। একে বিবেচনা করতে হবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতার নিরিখে। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অবনমন দশা, সে চিত্র বাংলাদেশের প্রতিটা সেক্টরেরই। তাই কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এককভাবে দায়ী করা হলে এটি একরকমের বিচারের শামিল হবে। তবে তাই বলে বসে থাকলে চলবে না, শতবর্ষী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত গৌরব পুনরুদ্ধার এবং একই সাথে একবিংশ শতকের বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য অব্যহাত প্রচেষ্টা দরকার।

আর এ প্রচেষ্টায় সামনের কাতারে থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা, আর তার সাথে এগিয়ে আসতে হবে সরকার এবং প্রাক্তনীদেরও। আর এটি হলেই আমরা ফিরে পাবো আমাদের প্রত্যাশিত স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। আগেই বলেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার আবেগের জায়গা। কোনো পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষে আমি একে ভালোবাসতে চাই না। কারণ আজকে আমি যা, বলতে গেলে তার সবটুকুই এ বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই আমাকে তৈরি করেছে আমি হতে। সময় শুধু দায়মোচনের। ২৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এ দায় পূরণ কতটুকু করতে পেরেছি, সে মূল্যায়ন আমার শিক্ষার্থীরা করবেন। 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং শতবর্ষে এর বিকাশে যারা অবদান রেখেছন তাঁদের সকলকে বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছি। অনেক অনেক শ্রদ্ধা আমার শিক্ষক ও সহকর্মীদের প্রতি। আর অফুরাণ ভালোবাসা ও শুভ কামনা প্রিয় শিক্ষার্থীদের প্রতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটা শতবর্ষে আমি থাকবো না- কিন্তু গৌরবের সাথে মাথা উচুঁ করে এগিয়ে যাবে আমার প্রিয় ও প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- এ প্রত্যাশাটই করি।

সিদ্দিকুর রহমান খানের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ