আবু সামিহা সিরাজুল-ইসলাম
কিছু দীনী-হুজুরগণ (নব্য-সালাফী) অভিমত দিয়েছেন যে ভাগে কোরবানি করলে হবে না। আমিও নানা ঝামেলার জন্য ভাগে কোরবানি দেই না। কিন্তু এইসব ভাইদের বাড়াবাড়ির কারণে চিন্তা করছিলাম যে, ভাগেই কোরবানি দেবো কি না! এটা এজন্য যে ভাগে কুরবানী দেয়া জায়েজ সেটা যেন আমার আচরণ দেখে আমার আশ-পাশের লোকজনের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। গরু, মইিষ ও উটে সর্বোচ্চ ৭ ভাগে কোরবানি দেয়া যায়। এটা যুগ যুগ ধরে প্রতিষ্ঠিত। রসূলুল্লাহর (ﷺ) কথা ও সাহাবীদের আমল থেকে প্রমাণিত এবং সালাফিয়্যাহসহ সবগুলো মজহাবে স্বীকৃত।
আমাদের ছোটবেলায় আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের কয়েক পরিবার মিলে একটা গরুতে ভাগে কোরবানি দিত। আমার আমরিকার জীবনের প্রথম বেশ কয়েক বছর আমি কোরবানী দেইনি, কারণ কোরবানি দেয়ার সামর্থ আমার ছিল না। এদিকে আম্মা দুঃশ্চিন্তা করছেন যে আমি কোরবানি দেবো না-এটা কেমনে হয়। আমি সাফ বলে দিতাম যে কোরবানি গোশতো খাওয়ার জন্য গবাদি পশু জবেহ করার উৎসব না। এটা আল্লাহর ওয়াস্তে করা কাজ। এখন আমার সামর্থ নাই, তাই আমার ওপর ওয়াজিব না। আমার যখন সামর্থ হবে তখন কেউ আমাকে মানা করে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না, অবশ্য কোন জালিম ক্ষমতাসীন যদি তেমন করে এবং তাকে ঠেকানোর সাধ্য আমার না থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।
আমি কেন এখানে ভাগে কোরবানি দেই না তার মধ্যে প্রধানতম কারণ হল, আমি আমার ও আমার পরিবারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ একটা পশু কোরবানি করাকে পছন্দ করি; কারণ রসূলুল্লাহ (ﷺ) হজ ও উমরা ব্যতীত অন্য সময় একটা শিংওয়ালা মর্দা [পাঁঠা] ভেড়া/দুম্বা কোরবানি করতেন নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ থেকে। তিনি কোরবানির পশু জবেহ করার সময় বলতেন, [اللهم هذا عني وعن أهل بيتي] "আল্লাহুম্মা হাজ়া আন্নী ওয়া'আন আহলি বায়তী"- ওহ আল্লাহ! এটা আমার ও আমার পরিবারের পক্ষ থেকে। কখনো কখনো তিনি তাঁর দু'আয় উম্মতের ঐ সমস্ত সদস্যদেরকেও অন্তর্ভূক্ত করতেন যাদের কোরবানি করার সামর্থ নেই।
ভাগে কোরবানি না করার আরো একটা কারণ হল গরু জবেহ করার সমস্যা নিয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখানকার ভাইয়েরা কোন খামারে গিয়ে কোরবানি দেন। আর গরুগুলোর বিশাল সাইজের কারণে এগুলোকে ধরে এনে শুইয়ে জবেহ করার অবস্থা থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুলি করে শুইয়ে তারপর জবেহ করা হয়। কখনো কখনো স্টান-গান এর শক দিয়ে শুইয়ে তারপর জবেহ করা হয়। এই আচরণগুলোর কোনটাই কোরবানির পশুর সাথে ইহসান করার স্ট্যাণ্ডার্ডের সাথে যায় না। অনেক উলামাদের মতে এগুলো হারাম। তাই আমি ভাগে কোরবানি দেই না, যা সাধারণত গরু কোরবানির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
এছাড়াও বড় পশু বলে গরুর গোশ্ত প্রসেসিং-এ ৯কাটা-ছেড়া) প্রচূর সময় লাগে। এরপর আছে ভাগাভাগির ব্যাপার। তাই আমি ভেড়া কোরবানি দেই। একবার মনে হয় ছাগল দিয়েছিলাম। শিংওয়ালা মর্দা ভেড়া খুঁজে পাইনি আগে, যদিও মর্দা ভেড়াই কোরবানি করেছিলাম। এবার পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। জাকির সজল ভাই একটা খামারে এটা পেয়েছেন। মালিক দাবি করছে এটা ৩০০ পাউণ্ড হবে; প্রকৃতপক্ষে হয়তো তার চেয়ে কিছু কম হবে। জাকির ভাইয়ের কথা হল এটা দেখতে একটা ছোটখাট গরুর মতনই মনে হয়। উনি চিন্তা করছিলেন খাসি করানো হয়নি বলে আমি পছন্দ করবো কি না। আমি বললাম যে আমিতো পাঁঠাই খুজছি, কারণ রসূলুল্লাহ (ﷺ) বিচি এবং শিংওয়ালা মর্দা ভেড়া/দুম্বা কোরবানি দিতেন। আর কিছু কিছু উলামাগণ খাসি করানোকে নাজায়েজ় মনে করেন এবং খাসিকে ডিফেক্টীভ (Defective) বা খুঁতওয়ালা মনে করেন।
সবাইকে আরাফাহর দিনের ভাল আমলের আহবান এবং ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা– ঈদ মুবারক! তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম সালিহ আল-আ’মাল! আর হ্যাঁ! বনের বা মনের পশু নয়, গবাদি পশু কোরবানি করুন; আর মনের অবাধ্য পশুকে আল্লাহর অনুগত করুন। আল্লাহর ওয়াস্তে সওয়াবের নিয়্যতে গবাদি পশু কুরবানী করতে পারাই হল মনের অবাধ্য পশুকে আল্লাহর অনুগত করানো। লেখক: ব্রুকলিন ইসলামিক সেন্টারের ইমাম ও খতিব
চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পণ্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।