Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

লাইলাতুল কদরের রাত কেন গোপন রাখা হয়

প্রকাশিত: ১২:১৬, ২৭ এপ্রিল ২০২২

লাইলাতুল কদরের রাত কেন গোপন রাখা হয়

হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ যে রজনী তা হচ্ছে লাইলাতুল কদর। যে রাতের কল্যাণ ও সওয়াবের কথা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পেছনের সব পাপ মোচন করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে সিয়াম পালন করবে, তারও অতীতে সব গুনাহ মাফ করা হয়।

’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০১)

মহিমান্বিত এ রাতের গুরুত্বের কারণে রাসুল (সা.) এ রাতের অনুসন্ধান করতে বলেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কোরো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৭)

প্রশ্ন হচ্ছে এত গুরুত্বপূর্ণ রাতকে আমাদের থেকে গোপন রাখার রহস্য কী? এর যথাযথ কারণ একমাত্র রাব্বুল আলামিন ভালো জানেন। তবে ওলামায়ে কেরাম মহিমান্বিত এ রাতকে অস্পষ্ট রাখার বিভিন্ন রহস্য বর্ণনা করেছেন—

এক. কদরের রাত নির্ধারিত থাকলে অনেক মানুষ এমন হতো যে শুধু ওই রাতেই ইবাদত করত, অন্য রাতে এবাদতের প্রতি অতটা গুরুত্ব দিত না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ জন্য অস্পষ্ট রেখে রেখেছেন, যাতে রমজানের শেষ দশকে মুসলমানরা পুরোদমে ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকে। যেমন জুমার দিন যে সময়টিতে দোয়া কবুল হয়, সে সময়টি গোপন রেখেছেন, যেন বান্দা জুমার দিন পুরো সময় ইবাদতের জন্য সচেষ্ট হয়। হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) ইঙ্গিত করেছেন যে লাইলাতুল কদর গোপন রাখার রহস্য হচ্ছে, যাতে মানুষ এই রাতের সন্ধানে কষ্ট করে (তা পাওয়ার জন্য আমল করে)। এর পরিবর্তে যদি এই রাত নির্ধারিত হয়ে যেত, তাহলে মানুষ শুধুমাত্র এই রাতেই ইবাদতে সীমাবদ্ধ থাকত। (ফাতহুল বারী, ৪/২৩২)

দুই. ওবাদা ইবনুস সামেত (রা.) বলেন, একদা নবী (সা.) আমাদের লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখ) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দুজন মুসলমান ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বললেন, আমি তোমাদের লাইলাতুল কদরের সংবাদ দেওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবত এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কোরো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৩)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, মুসলমান পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হলে আল্লাহ তাআলা আমাদের থেকে অনেক বরকত ও কল্যাণ তুলে নেন। এটা আমাদের জন্য এক ধরনের সতর্কবার্তা যে পারস্পরিক কলহ-বিবাদ আমাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় এবং কল্যাণের পথকে রুদ্ধ করে দেয়।

তিন. মানুষের স্বভাব লুকায়িত জিনিস সন্ধানে একটু বেশি মরিয়া হয়ে থাকে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় আল্লাহর প্রিয় বান্দারা এই লাইলাতুল কদরের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। এই রাতে ইবাদত করে তারা এক অন্য রকম স্বাদ অনুভব করে। যারা ইবাদত করে আনন্দ লাভ করে, তারা এই লুকানোর মাঝেও তা অনুভব করে থাকে।

চার. এ রাতে তাকদির লিপিবদ্ধ হয়। আর তাকদিরের বিষয়টি একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই জানেন। যেভাবে তাকদিরের বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে, তেমনি যে রাতে তাকদির লিপিবদ্ধ হয় সে রাতকেও আমাদের থেকে অস্পষ্ট করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে—শবেকদরে, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। ওই রাতে প্রত্যেক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থিরকৃত হয়। ’ (সুরা : দুখান, আয়াত : ৩-৪)

অর্থাৎ শবেকদরে সৃষ্টি সম্পর্কিত সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফায়সালা স্থির করা হয়, যা পরবর্তী শবেকদর পর্যন্ত এক বছরে সংঘটিত হবে।

মোটকথা, এটা আল্লাহ তাআলার হেকমত যে এত দামি ও গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামত, যদি বিনা পরিশ্রমে হাতের নাগালে রেখে দিতেন, তাহলে হয়তো এর যথাযথ মূল্যায়ন হতো না। এ জন্য বলেছেন যে এ নিয়ামত অর্জনের জন্য সাধনা কোরো। আল্লাহর কাছে এই সাধনা অনেক প্রিয়। তাই আমাদের কর্তব্য—রমজানের শেষ দশকে আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখা।

আল্লাহ তাআলা আমাদের এ রাতকে পাওয়ার লক্ষ্যে অধিক হারে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ