Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

মানবজাতির ইতিহাস মক্কা নগরী দিয়ে শুরু

আবু সুরাইম

প্রকাশিত: ০১:১৫, ৮ জুলাই ২০২১

মানবজাতির ইতিহাস মক্কা নগরী দিয়ে শুরু

বেহেশত থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর  আদম এবং ইভ  উভয়ে পৃথিবীতে ভিন্ন ভৌগোলিক  অবস্থানে ছিলেন। ইভ মক্কা নগরীর আশেপাশে আর আদম দূরপ্রাচ্যের কোন এক ভূমিতে অবতরণ করেছিলেন। একে অন্যকে অনুসন্ধান করার অনেক বছর পর অবশেষে আদম আরব উপদ্বীপের মক্কায় পদার্পণ করেন। এবং মক্কা নগরীর বাইরে আরাফাত পর্বতের চুড়ায় উভয়ে পরস্পর পুনরায় মিলিত হন।  

 মক্কা পৃথিবীর প্রথম স্থান যেখানে সর্বপ্রথম  সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করা হয়। এজন্য এটি  একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর।  এখানেই সর্বপ্রথম ইবরাহীম (আঃ) এবং তার পুত্র ইসমাঈল (আঃ) উভয়ে মিলে  মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে পৃথিবীর প্রথম ইবাদতগৃহ তৈরী করেছিলেন। এমনকি, বেহেশতের মধ্যেও উক্ত গৃহের অনুরূপ ফেরেশতাদের জন্য একই আকৃতির একটি  ইবাদতগৃহ রয়েছে । যেখানে প্রতিদিন প্রায়  সত্তর হাজার  ফেরেশতা ইবাদত করার উদ্দেশ্যে আসে।  এবং দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ ব্যতীত  ইবাদত শেষে তারা সেখান থেকে চলে যায়। যখন ইবরাহীম এবং ইসমাঈল (আঃ) এ পবিত্র গৃহের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন, তখন সেখানে একটি পাথর রাখার স্থান অবশিষ্ট ছিলো। তখন ইবরাহীম (আঃ) তার পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে একটি বিশেষ পাথর নিয়ে আসতে বলেন যা সেখানে রাখতে পারবেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সর্বশেষ পাথরটিকে নির্দিষ্ট করে দেন, যা এ পৃথিবীর নয় বরং সরাসরি বেহেশত থেকে অবতীর্ণ। হযরত জিবরাঈল (আঃ) বেহেশত থেকে উক্ত পাথরটি নিয়ে এসে ইবরাহীম (আঃ) কে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করার জন্য প্রদান করেন। প্রচলিত আছে , পৃথিবীতে সর্বপ্রথম পাথরটি যখন নিয়ে  আসা হয় তখন এটি বিশুদ্ধ সাদা রঙ এর  ছিল। কিন্তু পৃথিবীর অপরিশুদ্ধতা ও  মানুষের পাপের কারণে উক্ত পাথরটি ধীরে ধীরে ম্লান হতে শুরু করে এবং অবশেষে কালো আকার ধারণ করে।

সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন মানুষের দ্বারা মক্কা নগরী সমৃদ্ধ হতে থাকে।  তবে  তখন পর্যন্ত সেখানে বিশুদ্ধ একেশ্বরবাদের ধারণা তথা একজন সৃষ্টিকর্তার ইবাদতের ধারণা বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু তাদের প্রতিবেশি দেশ মিশর, মেসোপটেমিয়া এবং ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলীয় দেশসমূহের মধ্যে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৌত্তলিকতার অনুশীলন হয়ে এসেছিলো।  

সে সময়  আমারূ (Hammertoe) নামক একজন বণিক মক্কার বাইরে তার বাণিজ্য বিস্তার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। তখন সে মক্কা থেকে উত্তরাভিমূখে অগ্রসর হয়, যে পর্যন্ত না পূর্বাঞ্চলীয় দেশসমূহে পৌঁছালো।  সেখানে যাওয়ার পর সে প্রথমবারের মতো অগ্রগতির বিভিন্ন বিষয় প্রত্যক্ষ করেছিলো, যেমন:- আধুনিক স্থাপত্যকলা, উন্নত সাহিত্য, এবং পৌত্তলিকতা অনুশীলনের বিভিন্ন বিষয়।  

সে অঞ্চলে আমারূ যা দেখেছিলো তা দ্বারা সে খুবই প্রভাবিত হয়েছিলো। এজন্য প্রস্থানের পূর্বে সে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলো, সে কি তার সাথে একটি প্রতিমা তার বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে? তখন সেখানকার মানুষ তার সাথে একমত পোষণ করলো। তখন সে একটি প্রতিমা নিলো এবং তার ক্যারাভানের অন্যান্য ব্যবসায়িক পণ্য সামগ্রীর সাথে এটাকে রাখলো। তারপর সে মক্কা নগরীতে ফিরে আসার জন্য দক্ষিণাভিমুখে রওয়ানা হলো ।  

বাড়িতে আসার সাথে সথেই আমারূ প্রতিমাটি নিলো এবং এটিকে একেবারে পবিত্র গৃহের সামনে স্থাপন করলো। তারপর সে জনসাধারণের সামনে গিয়ে বলতে লাগলো যে, এখন থেকে এটাই তাদের ঈশ্বর। তারা যেন এর উপাসনা করে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো,  তখন এই ধারণাটি বৃহৎ কোন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি। সময় পরিক্রমার  সাথে সাথে মানুষ উক্ত প্রতিমাটির সাথে সাথে আরো বহু প্রতিমার উপাসনা করতে শুরু করেছিলো। যা প্রায় ষষ্ঠ শতকের শেষ সময় পর্যন্ত ছিলো। মক্কার পবিত্র গৃহের চতুর্দিকে বিভিন্ন ধরণের প্রায় ৩৬০ টি প্রতিমা ছিলো। দিনে দিনে পৌত্তলিকতা সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে বিশিষ্টতা অর্জন করে।  

আর সেসময় যেসকল মানুষ একেশ্বরবাদের অনুসরণ করতো, তারা জানতো যে একজন নতুন রাসূলের আগমনের সময় নিকটবর্তী হয়ে এসেছে। আর এটা তারা ন্যায্যত যুক্তির মাধ্যমে  জানতে পেরেছিলো ।তারা তাদের প্রবিত্র বাণীর ব্যাখা করার মাধ্যমে এ উপসংহারে পৌছেছিলো যে, আরব উপদ্বীপ হলো সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় একটি স্থান। যেখানে সৃষ্টিকর্তা একজন নতুন রাসূল প্রেরণ করতে পারেন।

তৎকালীন রোমান এবং পারস্য সাম্রাজ্যের শাসক অনেক অত্যাচারী ছিলো। তারা  অন্য যে কোন ধরণের মতাদর্শ বা রাজনৈতিক বিরুদ্ধাচরণের প্রতি  শত্রুভাবাপন্ন ছিলো । অন্যদিকে আরব উপদ্বীপের অধিকাংশ মানুষ পৌত্তলিকতার অন্ধকারে গভীরভাবে নিমজ্জিত ছিলো। মূলত তারা ছিলো গোত্র শাসিত। তাদের কোন কেন্দ্রীয় সরকার ছিলো না। পরবর্তী রাসূলের আগমনের অপেক্ষায় সেসময় বহু মানুষ আরব উপদ্বীপের দিকে আসতে থাকে ।

এটাই হচ্ছে সেই ভূমি যেখানে মানুষ সর্বপ্রথম তার সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করেছিলো। এবং যেখানে ইবরাহীম (আঃ) পৃথিবীর প্রথম ইবাদতগৃহ নির্মাণ করেছিলেন। এটাই হচ্ছে সেই স্থান, যে স্থানকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সর্বশেষ রাসূলের আগমনের স্থান হিসেবে নির্ধারিত করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ