Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

পুলিশে ধরা দিলেন জুমা, আফ্রিকা দেখল নতুন ইতিহাস

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ৮ জুলাই ২০২১

আপডেট: ০৮:২৯, ৮ জুলাই ২০২১

পুলিশে ধরা দিলেন জুমা, আফ্রিকা দেখল নতুন ইতিহাস

অবশেষে কারাদণ্ড ভোগ করতে পুলিশে আত্মসমর্পণ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা (৭৯)। জুমা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির জনগণ নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হলো। কারণ এর আগে দেশটি কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টের কারাভোগ দেখেনি। খবর বিবিসির।
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। নিজের কারাদণ্ডের বিষয়ে গত ৪ জুলাই গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

 বুধবার মধ্যরাতে জুমা পুলিশে আত্মসমর্পন করেন। এর আগে বুধবার সকালে পুলিশের পক্ষ মধ্যরাতের মধ্যে আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। জ্যাকব জুমা ফাইন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোয়া-জুলু নাটাল প্রদেশে নিজের বাসভবনের কাছেই এক কারাগারে এ দণ্ড ভোগ করতে গিয়েছেন জুমা।

আদালত অবমাননার দায়ে গত ২৯ জুন জুমার ১৫ মাসের কারাদণ্ড হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া ওই রায়ে জুমাকে স্বেচ্ছায় পুলিশে ধরা দিতে পাঁচ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। গত রোববার রাতে ওই সময়সীমা শেষ হয়। কিন্তু প্রথমে জুমা পুলিশে ধরা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁর ভাষ্য, করোনা মহামারির মধ্যে এই বয়সে কারাগারে গেলে তা তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বুধবার মধ্যরাতের মধ্যে জুমাকে আত্মসমর্পণের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল।
৭ জুলাই মধ্যরাতে জ্যাকব জুমার বাসভবনে প্রবেশ করছে একটি গাড়ি বহর। ধারণা করা হচ্ছে, এই বহরের গাড়িতে করেই তাঁকে কারাগারে নেওয়া হয়।

সরেজমিন থেকে বিবিসির প্রতিনিধি নোমসা মাসেকোর দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, জুমাকে গ্রেপ্তারের জন্য বুধবার সকাল থেকেই তাঁর বাসভবনের আশপাশে সশস্ত্র কর্মকর্তা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। এর মধ্যে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধিদল বাসভবনের ভেতরে জুমার সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা আলোচনাও করেন । এরপর মধ্যরাতের আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগে একটি গাড়ি বহর দ্রুত জুমার বাসভবন ত্যাগ করতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে এই বহরের কোনো গাড়িতেই জুমা ছিলেন।

ক্ষমতায় থাকাকালেই জুমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগ তদন্ত করছিলেন দেশটির উপপ্রধান বিচারপতি রেমন্ড জোনডো। গত ফেব্রুয়ারিতে তদন্তের জন্য জুমাকে তলব করা হলেও তিনি হাজির হননি। এ কারণে আদালত অবমাননার দায়ে তাঁকে ১৫ মাস কারাবাসের এই দণ্ড দেওয়া হয়।
গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বাসভনের বাইরে জড়ো হওয়া জ্যাকব জুমার সমর্থকেরা। ৭ জুলাই, দক্ষিণ আফ্রিকা।

পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালে তাঁর প্রায় ৯ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে। জুমার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাট করেছেন এবং ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে নাক গলানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে জুমার আশকারাতেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘গুপ্ত পরিবার’ নামে একটি সুপরিচিত ব্যবসায়ী পরিবার রাজনীতিতে বেপরোয়া হস্তক্ষেপ করেছে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরের তিন ভাই অজয় গুপ্ত, অতুল গুপ্ত ও রাজেশ ওরফে টনি গুপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা শুরু করেন। দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের সঙ্গে পরিবারটির ঘনিষ্ঠতা সবার সামনে আসে ২০১৩ সালে।

তবে জ্যাকব জুমা বরাবরই বলে আসছেন, বিদেশি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এক দশক ধরেই তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছিল। গুপ্ত পরিবারের হাতে তিনি দেশ তুলে দিয়েছেন, এমন সব অভিযোগই মিথ্যা। তাঁর একটি ভাষ্য ছিল, ‘আমি কি জোহানেসবার্গকে নিলামে তুলেছি?’

জ্যাকব জুমা সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও গুপ্ত পরিবারের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সম্পর্ক কখনো অস্বীকার করেননি। তিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাইদের এ পরিবারের সঙ্গে জুমা পরিবারের সম্পর্ক এতটাই গভীর ছিল যে, একসময় দুটি পরিবারকে একসঙ্গে ‘জুপ্তা’ বলা হতো।

গুপ্ত পরিবারের মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানি জুমার শাসনামলে সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজ পেত। এ ক্ষেত্রে তারা বলা যায়, একচ্ছত্র ছিল। এমনকি তাদের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে জ্যাকব জুমার ছেলে দুদুজানেকেও নিয়োগ দিয়েছিল তারা। জুমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই পরিবারের সঙ্গে তিনি এমনভাবে জড়িয়ে ছিলেন যে অনেক সময় তারাই বলে দিত রাষ্ট্রের কোন সিদ্ধান্ত কীভাবে নিতে হবে। আর এই নির্দেশনা অমান্য করলে সরকারি কর্মকর্তাদের পদচ্যুতিও ঘটত।


চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ