‘আজকের পত্রিকা’ নামের আরেকটি বড় বাজেটের দৈনিক যাত্রা শুরু করেছে। এটাকে নতুন পত্রিকা বলা ঠিক হবে না। পুরনো পত্রিকা নতুন মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় নবযাত্রা বলা যেতে পারে। পত্রিকাটির সম্পাদক ড. মো. গোলাম রহমান আজ ২৭ জুন উদ্বোধনী সংখ্যায় প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম কলামে যে বিশেষ সম্পাদকীয় বা সাইন আর্টিকেল লিখেছেন সেখানেও তিনি বলেছেন 'নব কলেবরে যাত্রা শুরু'।
একজন সংবাদকর্মী হিসেবে এবং পাশাপাশি সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল একটি সংগঠনের দায়িত্বে থাকার কারণে নতুন সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে সব সময় স্বাগত জানাই। নতুন সংবাদপত্র মানে কিছু সংখ্যক সাংবাদিক বন্ধুর রুটিরুজির ব্যবস্থা। গোটা গণমাধ্যমজুড়ে যখন অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা তখন নতুন প্রতিষ্ঠানের যাত্রা এবং এ খাতে বিনিয়োগকারিদের উদ্যোগকে সাহসী ও ইতিবাচক হিসেবে দেখা উচিৎ।
সংবাদমাধ্যমের আমি একজন মনোযোগী পাঠক ও পর্যবেক্ষক। সে কারণে 'আজকের পত্রিকা' নামের দৈনিকটির আগমন বার্তায় অপেক্ষায় ছিলাম নতুন কী নিয়ে আসছে দেখার জন্য। মেকাআপ-গেটআপে পরিচ্ছন্ন বলা যেতে পারে। কলকাতার 'আনন্দবাজার পত্রিকা' ও 'আজকাল' এর মেকআপ এর সঙ্গে সাজুয্য আছে। তবে পাঠক আকৃষ্ট করার মত তেমন কোন প্রতিবেদন প্রথম সংখ্যায় চোখে পড়েনি।
‘এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ’কে বিষয়বস্তু করে যে লেখাগুলো ৮ পৃষ্ঠার বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশ কর হয়েছে তাতে গতানুগতিকতার ছাপ ও বিষয় বৈচিত্র্যের অভাব দেখা গেছে।
এটা ঠিক যে, বড় বাজেটের কোন দৈনিক বাজারে আসার আগে যেভাবে প্রমোশনাল কার্যক্রমের মাধ্যমে আগ্রহ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় তার অনেকটাই করেছে ‘আজকের পত্রিকা’। কতটা সফল হয়েছে তা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’ বলে একটা কথা আছে। সূচনা সংখ্যা দিয়ে পত্রিকাটি জানান দিয়ে দিয়েছে এটি ক্ষমতাসীনদের তুষ্ট করতে অকৃপণ হবে। নতজানু সাংবাদিকতার যুগে স্রোতের বিপরীতে যাত্রার কোন আভাস মেলেনি । বরং মনে হয়েছে হালের কথিত উন্নয়ন সাংবাদিকতার নতুন পাঠ শেখাবে।
অবশ্য পত্রিকাটির টিম গঠন পর্যায়েই তা স্পষ্ট হয়েছে। সম্পাদক ড. মো গোলাম রহমান সাংবাদিকতার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তাঁর গুণমুগ্ধ অনেকে আছেন মিডিয়ায় ও ক্ষমতার বলয়ে। তিনি বর্তমান সরকারের সময়ে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর অতীতের লেখাগুলোতেও ধ্যান-ধারণা স্পষ্ট। তাছাড়া মাঠ ঘাট থেকে সাংবাদিকতার পাঠ নিয়ে যারা সম্পাদক বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণী চেয়ারে বসেছেন তাদের চেয়ে সাংবাদিকতার একাডেমিক ক্যারিয়ারধারীরা অধিকতর আপসকামী হওয়ার নজীর রয়েছে। আবার কর্পোরেট হাউজের সাংবাদিকতার দৌঁড়তো হাল আমলে পরিষ্কার চোখে পড়ছে।
আজকের পত্রিকার বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইউএস-বাংলা গ্রুপ। তাদের আবাসন ব্যবসা সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। মূল প্রকল্প ঘিরে কয়েক দশক ধরে অনেক ক্রেতার ক্ষোভ পুঞ্জীভূত। আবার বেসরকারি এয়ারলাইনস পরিচালনায় তাদের কিছুটা সুনাম আছে। আরও কয়েকটি খাতে তাদের ব্যবসা রয়েছে। ব্যবসায়িক স্বার্থে পত্রিকাটিকে তারা খুল্লামখোলা ব্যবহার করবে, নাকি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের মত রয়েসয়ে কৌশলী হবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
কিছুদিন আগে দেখা গেছে আরেক কর্পোরেট হাউজের মিডিয়াগুলো দিনের পর দিন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে সাঁড়াশী আক্রমনাত্বক রিপোর্ট করেছে। এ প্রেক্ষিতে তারা মিডিয়ায় বিনিয়োগ করছে কিনা তা দেখতে আরেকটু সময় লাগবে।
প্রথম সংখ্যায় প্রবাসী সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সংবাদপত্র নিয়ে লিখতে গিয়ে ধান ভানতে শিবের গীতের মত শহীদ জিয়াউর রহমানকে আক্রমণ করেছেন। অবশ্য জিয়া পরিবারকে এক হাত না নিলে এই বয়োজ্যেষ্ঠ লেখকের কলম নাকি চলে না। 'আজকের পত্রিকা' কর্তৃপক্ষ সূচনা সংখ্যায় এ বিষয়ে আরও সজাগ থাকলে ভালো করতেন।
দেশেও বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রিয় নন্দিত নেতাকে ভিলেন বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে এমন পত্রিকারতো দেশে অভাব নেই। আপনারা একই পথ ধরলে ওইসব 'কন্ঠ' ও 'দিন' ছেড়ে আপনাদের পত্রিকা হাতে তুলে নেবে কেন? এমনিতেই উদ্বোধনী সংখ্যার লেখক তালিকা দেখে পত্রিকাটির শ্রেণি চরিত্র ও মঞ্জিল-মকসুদ সম্পর্কে পাঠকরা সম্যক ধারণা পেয়ে গেছেন। আগামীকালের লেখক তালিকায় চোখ বুলিয়েও একই ধারণা পোক্ত হয়েছে।
আরেকটা কথা। 'সারাদেশের স্থানীয় পত্রিকা' স্লোগান ধারণ করেছেন। স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষ, দলনিরপেক্ষ ও পেশাদার সাংবাদিক নিয়েছেন তো? তাদের জীবিকা নির্বাহের মত বেতন-ভাতা নির্ধারণ করেছেন তো? নাকি কেবল কার্ড ধরিয়ে দিয়েছেন? স্লোগান বাস্তবে রূপ দিতে হলে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সন্তোষজনক বেতনে দক্ষ, পরিশ্রমী নীতিনিষ্ঠ সংবাদকর্মী নিয়োগ দেওয়া বাঞ্ছনীয়। এ জন্য প্রাথমিকভাবে প্রচুর অর্থ ঢালতে হবে বিনিয়োগকারীদের। তবে এক পর্যায়ে তার ভালো সুফল মিলতে পারে।
পরিশেষে আজকের পত্রিকার বন্ধুদের জন্য শুভকামনা। আপনাদের বেতন-ভাতার জন্য বিবৃতি ও আন্দোলন করতে যেন না হয় এই প্রত্যাশা থাকলো।
লেখক: সভাপতি, বিএফইউজে