Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

স্বাস্থসম্মত উপায়ে কোরবানি, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

মুহসিন মাশকুর

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ৬ জুলাই ২০২১

আপডেট: ০৩:৫৬, ৬ জুলাই ২০২১

স্বাস্থসম্মত উপায়ে কোরবানি, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

সালাত-সওম থেকে শুরু করে ইসলামের প্রায় যাবতীয় ইবাদতের জন্যেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অন্যতম মৌলিক শর্ত। অপবিত্র অবস্থায় সলাত আদায় করাকে সাংঘাতিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উক্ত শর্ত আরোপের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মূলত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতিই গুরুত্বারোপ করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেছেন, 'যদি তোমরা অপবিত্র হও, তাহলে ভালোমতো পরিচ্ছন্ন হয়ে নাও' [৫:৬]

ইসলামের ইবাদতসমূতের মধ্যে অন্যতম হলো ঈদুল আজহা। এ সময়ে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরণের পশু জবেহ করে থাকেন। কুরআনে এসেছে, 'অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্যেই নামাজ পড়ো এবং কুরবানী দাও। নিশ্চয়ই তোমার প্রতি যে বিদ্বেষ পোষণ করবে, তার বংশধারা বিলুপ্ত হবে।' [সূরা কাওসার]

মুসলিম দেশ হওয়ায় প্রতিবছর বাংলাদেশেও ঈদুল আজহা বা কুরবানীর সময় পশু জবেহের একটা আমেজ তৈরি হয় গোটা দেশ জুড়ে। পরিবেশের মধ্যে কুরবানীর একটা ভিন্ন রকম আবহ তৈরি হয়। তবে উৎসবের মধ্যে আমরা ধর্মীয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কথা প্রায় ভুলেই যাই। আমাদের উচিত এমন উপায়ে পশু জবেহ করা, যেন পশুর জবেহের বিধানটিও পালিত হয়, সেই সঙ্গে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও যেন বজায় থাকে সম্পূর্ণভাবে। আমাদের দেশের পরিস্থিতিতে কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে কুরবানীর সময়ও আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি রক্ষা করতে পারবো।

১. নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য স্থাপন
 মাংস কাটার সময় উচ্ছিষ্টাংশ যেখানে-সেখানে না ফেলে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা। কাজ শেষে সেগুলো একটি গর্তে পুঁতে ফেলা যেতে পারে। দেখা যায়, নির্দিষ্ট একটি জায়গা না থাকার কারণে গোটা পরিবেশটাই দুষিত হয়ে ওঠে।

২. ভুঁড়ি পরিচ্ছন্নতায় যত্নবান হওয়া
পশুর ভুঁড়ি পরিষ্কারের পর সেই আবর্জনা খোলা অবস্থায় রাখা যাবে না একদমই। কিছুক্ষণ খোলা রেখে সেগুলোও একটি গর্তে পুঁতে ফেলতে হবে।

৩. রক্ত ধুয়ে ফেলা
কুরবানির যাবতীয় কার্যক্রম শেষে রক্তে মাখা রাস্তাঘাট ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। জীবাণু যেন ছড়াতে না পারে সে জন্য নোংরা জায়গা পরিষ্কারের সময় স্যাভলন মেলানো পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে জীবাণু থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

৪. পশুর চামড়া বিক্রি করে দেওয়া
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পশুর চামড়া বিক্রি কিংবা দান করে দিতে হবে। শহরে যারা থাকেন তারা বিচ্ছিন্ন স্থানে কোরবানি না দিয়ে বেশ কয়েকজন মিলে এক স্থানে কোরবানি করতে পারেন। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাজ করতে বেশ সুবিধা হয়।

৫. জবেহের জায়গাটি খোলামেলা রাখা
একটা বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যে, কোরবানির জায়গাটি যেন অবশ্যই খোলামেলা হয়। আর জায়গাটি রাস্তার কাছাকাটি হলে বর্জ্যরে গাড়ি পৌঁছতে সহজ হবে। তবে যেসব এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি পৌঁছনো সম্ভব নয় বা দেরি হবে, সেসব স্থানে বর্জ্য পলিথিনের ব্যাগে ভরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে রাখা যেতে পারে।

৬. যৌথ ব্যবস্থাপনা
কোনো এলাকায় কুরবানী দিতে সমর্থ্য যারা রয়েছেন তারা সকলে মিলে নির্দিষ্ট একটি জায়গা ঠিক করে সেখানে একসঙ্গে কুরবানী সম্পন্ন করতে পারেন। এতে বর্জ্য পরিষ্কার করা সহজ হবে। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পশু জবেহ করলে ময়লা নিষ্কাষণ বেশ জটিল হয়ে যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটির প্রচলন অবশ্য বেশ কম। নির্দিষ্ট কোনো কোনো এলাকায় থাকলেও এটি এখনো ব্যপকতা পায়নি এ দেশে। পরিবেশ রক্ষায় যৌথ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বেশ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

কুরবানির সময় কেবল আমাদের সচেতনতাই পারে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে। আমরা যেন শুধু পশু কুরবানির মাধ্যমেই ত্যাগ শব্দটি সীমাবদ্ধ না রাখি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি ভুলে না যাই। পরিবেশ দূষন রোধের গুরুত্ব বুঝতে আমরা বুখারির একটি হাদিস দেখতে পারি। পানি দূষণের বিষয়টি বুঝাতে গিয়ে রসুল স. উক্তিটি করেছিলেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত নবীজী স. বলেন, তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করে তা দিয়ে গোসল না করে [বুখারি,হাদিস নং ২৩৯]
উক্ত হাদিসে পানি দূষণের বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও এতে আমরা পরিবেশ রক্ষার গুরুত্বটিও বুঝতে পারি।

আল কুরআনে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তায়লা বলেছেন, 'তাতে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা উত্তমরূপে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হতে পছন্দ করে। আর আল্লাহ উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। [৯:১০৮]

এমন অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অতএব, কুরবানীর মত একটি মহৎ ইবাদতের ক্ষেত্রে যদি আমরা পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে সক্ষম হই তাইলেই কেবল কুরবানীর প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সফল হবো আমরা। অন্যথায় একটি ইবাদত সম্পন্ন করতে গিয়ে আরেকটি গুনাহে জড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়ে যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ