Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

করোনায় আক্রান্ত বাবার দিন কাটছে মেয়ের বিয়েতে না থাকার আশঙ্কায়

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ৯ আগস্ট ২০২১

করোনায় আক্রান্ত বাবার দিন কাটছে মেয়ের বিয়েতে না থাকার আশঙ্কায়

করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দিন পার করছেন ট্রেভিস ক্যাম্পবেল। ইদানীং শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটছে ক্যাম্পবেলের। তাঁর ভেতর দানা বাঁধতে শুরু করেছে মৃত্যুভয়। এর মধ্যে কন্যার বিয়েতে থাকতে পারবেন না, এই আশঙ্কা যেন কুরে কুরে খাচ্ছে তাঁকে। ছেলেকে ফোন করে বললেন, সে যেন বোনের বিয়েতে উপস্থিত থেকে তাকে বিদায় দেয়।    

এক ভিডিওতে ট্রেভিস ক্যাম্পবেল বলেন, ওই রাতটা ছিল তাঁর জীবনের অন্ধকারতম রাত। কারণ তাঁর মস্তিষ্কের এ মাথা ওমাথা একটা ভাবনাই ঘুরপাক খাচ্ছিল তখন—       ১৯ বছর বয়সী কন্যার বিয়ে দেখে যেতে পারবেন না তিনি। ভিডিওতে বলেন, ‘গত রাতে ছেলেকে ফোন করেছিলাম। তাকে বলেছি, কোনো কারণে আমি বাড়ি ফিরতে না পারলে সে যেন তার বোনকে বিয়ের দিন বিদায় দেয়।’    


অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি হাসপাতালে দিন কাটাচ্ছেন ট্রেভিস ক্যাম্পবেল। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই ভিডিও বার্তায় জানাচ্ছেন তাঁর লড়াইয়ের কথা। 

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, টিকা না নেওয়ায় অনুশোচনায় ভুগছেন ট্রেভিস। গত জুলাই থেকে ভার্জিনিয়ার ব্রিস্টল শহরের হাসপাতালে ভর্তি তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তিনি ভাবেন, মারা যাওয়ার আগে তাঁর কিছু কাজ শেষ করে যাওয়া প্রয়োজন।

সেদিনকার ভিডিওতে ট্রেভিস আরও বলেন, ‘অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলেছি। আমি করোনার টিকা গ্রহণ করিনি। স্বীকার করছি, আমি ভুল করেছি।’ মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো অবস্থায় করা তাঁর এই ভিডিওটি গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি।


ট্রেভিসের শুরুর দিককার ভিডিওগুলোতে তিনি তাঁর শারীরিক অবস্থার বর্ণনা করতেন মোটামুটি স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু গত ৩১ জুলাই থেকে কয়েকটা শব্দ উচ্চারণ করা ছাড়া আর কিছু বলতে পারেন না।

গত মঙ্গলবার থেকে তিনি পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে যান। তাঁর ভেন্টিলেটর সাপোর্ট প্রয়োজন হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সেটা দেওয়ার অনুমতি দেবেন কি না এ বিষয়ে কথা বলতেও তাঁর বেশ কষ্ট হচ্ছে।

সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রেভিস ও তাঁর স্ত্রী কেলি জানান কীভাবে তাঁদের পরিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কেন তাঁরা করোনার টিকা গ্রহণ করেননি।

বিশ্বজুড়ে করোনার ডেলটা ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার একপর্যায়ে সেটা ভার্জিনিয়াতেও আঘাত করে। করোনার এই ধরনটি সেখানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একে একে সবাই আক্রান্ত হতে শুরু করে। 

ট্রেভিস, কেলি ও তাঁদের সন্তানেরা সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়। কিন্তু শুধু একজনের মধ্যে কাশি, জ্বর ও মাথা ঘোরানোর মতো উপসর্গগুলো দেখা যায়।

কেলি বলেন, ‘আমরা সবাই সেরে উঠি। কারও অবস্থাই ট্রেভিসের মতো জটিল হয়নি।’
এ সময় টিকা না নেওয়ার কারণ সম্পর্কে ট্রেভিস বলেন, ‘২০২০ সালের শুরুতে আমার মেয়ের বাস্কেটবল দলের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের সবার মধ্যে করোনার উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়। যখন করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিল, ধরে নিয়েছিলাম আমাদের করোনা হয়ে গেছে। করোনা সংক্রমণের হার কমতে শুরু করায় ভেবেছিলাম আমরা কঠিন সময় পার করে ফেলেছি।’ 

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে ২০২০ সালে ট্রেভিসরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল কি না এ বিষয়ে তাঁরা পরিষ্কার কিছু বলেনি বলে বলা হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ সংস্থার নির্দেশে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হলেও টিকা নিতে হবে। 

টিকা না নেওয়ার কারণ হিসেবে ট্রেভিস বলেন, তাঁরা ভার্জিনিয়ার গ্রামের দিকে থাকেন। সেখানে মানুষজন কম। তিনি মনে করেছিলেন তাঁরা খুব বেশি মানুষের সংস্পর্শে আসেনি। যার কারণে তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে নেই এবং তাঁদের টিকা না নিলেও চলবে।

বর্তমানে টিকা না নেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য অনুশোচনায় ভুগছেন ট্রেভিস। অন্যদের টিকা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সিএনএন-এর কাছে তিনি বলেন, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না। মনে হচ্ছে ডুবে যাচ্ছি। পানিতে থাকা মাছ ডাঙায় তুললে যেমন ছটফট করে, আমার অবস্থা ঠিক তেমন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমারই ভুল ছিল। স্ত্রী ও সন্তানদের যেকোনো উপায়ে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। আমি এর খেসারত দিচ্ছি।’ 

এ দিকে বাবার এমন ভিডিও বার্তা পেয়ে আপ্লুত মেয়ে ম্যাডিসন ক্যাম্পবেল। সিএনএনকে বললেন, এমন কথা বললে যে কারও হৃদয়ে মোচড় দেয়। আপনি কখনোই চাইবেন না জীবনের এমন বিশেষ মুহূর্তে আপনার বাবা উপস্থিত না থাকুক। তিনি বলেন, ‘শুধু এটুকু বলতে চাই, বাবাকে নিয়ে আমি অনেক গর্বিত।’


চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ