আমেরিকায় সিটিজেনশিপ পাওয়া নিয়ে অনেকের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সিটিজেনশিপের আবেদন করলে তা অ্যাপ্রুভ নাকি ডিনাই হবে কিংবা পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন কি না, পাস না করলে কী হবে- এ নিয়ে অনেকের মধ্যে নানা রকম ভয় ও দুশ্চিন্তা কাজ করে। তবে সিটিজেনশিপ নিয়ে দুশ্চিন্তার অবসান হতে চলেছে। সিটিজেনশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এতে অনেকেই আশার আলো দেখছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের শেষ সময়ে সিটিজেনশিপ পরীক্ষা কিছুটা কঠিন করা হয়েছিল। পরীক্ষার ১০০টি প্রশ্নের জায়গায় ১২৮টি প্রশ্নের নিয়ম করা হয়েছিল। সেই সাথে এমনও নিয়ম করা হয়েছিল, কেবল প্রশ্নের উত্তর দিলেই হবে না, অফিসার চাইলে ইন্টারভিউয়ের সময় অনেক প্রশ্নের ব্যাখ্যা চাইতে পারতেন কিংবা বিস্তারিত জানতে চাইতে পারতেন। ওই সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পারলে পরীক্ষায় পাস করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হতো না। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই নিয়মের পরিবর্তন করে। ২০০৮ সালের নিয়ম অনুযায়ী ১০০টি প্রশ্নের পরীক্ষা ফের চালু করে। কেবল সীমিত সময়ের জন্য ২০২০ সালের পরীক্ষার নিয়মটি চালু রাখা হয়।
গত প্রশাসনের আমলে কড়াকড়ি আরোপের কারণে অনেকে সিটিজেনশিপ পাওয়ার যোগ্য হলেও নানা শঙ্কা ও ভয়ে আবেদন করছিলেন না। তারা অপেক্ষা করছিলেন নতুন প্রশাসনের আমলে কী হয়, তা দেখার। বাইডেন প্রশাসনের আমলে তাদের সেই শঙ্কা দূর হয়েছে। এখন যারা সিটিজেনশিপ পাওয়ার যোগ্য, তারা আবেদন করতে পারেন। যারা সিটিজেনশিপের জন্য ইতিমধ্যে আবেদন করেছেন কিন্তু করোনার কারণে ধীরগতি তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে ইউএসসিআইএস। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে থেকেই তারা ইন্টারভিউ গ্রহণ এবং সিটিজেনশিপ পরীক্ষা নিয়ে যোগ্যদের শপথ করাচ্ছে। সেই সঙ্গে এর আগের প্রস্তুতি হিসেবে আবেদন করার পর ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হচ্ছে। এর ফলে বর্তমানে অনেকেই সিটিজেনশিপ লাভ করছেন।
সম্প্রতি বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিটিজেনশিপ পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের আবেদন করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। বর্তমানে যারা আবেদন করবেন, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত তারা ২০০৮ সালের সিটিজেনশিপ পরীক্ষার প্রশ্ন অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে পারবেন। তাদের মোট ১০০টি প্রশ্নের প্রস্তুতি নিলেই চলবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে এমন অনেকেই আছেন, যাদের গ্রিন কার্ডের মেয়াদ অনেকে আগেই পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। তারা সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন কিন্তু আবেদন করছেন না। বাংলাদেশিদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে এখানকার নাগরিকত্ব নিতে চান না। তারা গ্রিন কার্ডধারী হিসেবেই থাকতে চান। ১০ বছর পর পর গ্রিন কার্ড নবায়ন করছেন। আবার কেউ কেউ আবেদন করছেন না ভয়ে। যারা গ্রিন কার্ড পাওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে নিয়ম ভঙ্গ করার কারণে টিকিট পেয়েছেন, জেল-জরিমানা হয়েছিল কিংবা কোনো না কোনো সময়ে অপরাধ করেছেন, ডমেস্টিক ভায়োলেন্সহ বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে, তারা অনেকেই এ ব্যাপারে আগ্রহী নন। তবে এ-জাতীয় সংখ্যা কম।
যারা যোগ্য এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ক্লিন, তাদের বেশির ভাগই নির্ধারিত সময়ে বা পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার তিন মাস আগেই সিটিজেনশিপের আবেদন করার চেষ্টা করেন। তারা আবেদন করার পর সব প্রক্রিয়া শেষে সময়মতো সিটিজেনশিপ পেয়ে যাচ্ছেন। বিবাহিত সূত্রে গ্রিন কার্ড পেয়ে থাকলে তিন বছর পূর্তি হলে এবং এখানে বাস করার নির্ধারিত দিনের মেয়াদ সম্পন্ন করে থাকলে এর তিন মাস আগে আবেদন করা যায়।
বাইডেন প্রশাসন চেষ্টা করছে ইমিগ্রেশন-ব্যবস্থা আরো সহজতর করতে এবং যারা এই দেশে সিটিজেনশিপ পেতে চান, তারা যাতে সহজেই সেবা পান সেটা নিশ্চিত করতে। এ ব্যাপারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি থেকে চলতি মাসে ইন্টারএজেন্সি স্ট্র্যাটেজি ফর প্রোমোটিং ন্যাচারালাইজেশন ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি মাসের গোড়াতে এটি ঘোষণা করা হয়। সেখানেও যারা এ দেশে সিটিজেনশিপ আবেদন করার যোগ্য, তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছে, সরকারের লক্ষ্য ইউএস সিটিজেনশিপের ক্ষেত্রে যেসব বাধা আছে, তা দূর করা এবং যারা সিটিজেনশিপের জন্য যোগ্য, তাদের উৎসাহিত করা।
এ বিষয়ে সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো এন মার্কোস বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া এক বিরাট সুযোগ। আমেরিকান নাগরিকত্ব যে শক্তি ও দায়িত্ব নিয়ে আসে, তার মাধ্যমে শক্তিশালী নতুন নাগরিকেরা আমাদের জাতিকে আরও উন্নত করে। ইমিগ্র্যান্টদের মধ্যে যারা সিটিজেন হচ্ছেন, তারা দেশের জন্য ভালো কাজ করছেন। নতুন যে স্ট্র্যাটেজি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে নাগরিকেরা একটি সুস্পষ্ট ও সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে সিটিজেনশিপ পেতে সক্ষম হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো আবেদনই না জেনে আগেভাগে নিজে নিজে করা উচিত নয়। কোনো কাজ নিজে নিজে করতে পারলে ভালো, তবে প্রক্রিয়া করার আগে সব সময় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে কাজ করাই উত্তম। আবেদনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে করলে তা ঝামেলাবিহীনভাবে কম সময়ে সম্পন্ন হয়।
চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।