আনোয়ার হোসেন ও তার পরিবার
গল্পটা একজন গোলাপ প্রেমিকের। যিনি প্রচণ্ড ফুল ভালবাসেন, ভালবাসেন বাগান গড়তে। সবচেয়ে প্রিয় গোলাপ। ফুলপ্রেমি এই মানুষটার নাম আনোয়ার হোসেন। জন্মটা বাংলাদেশের রাজশাহীতে হলেও ত্রিশ বছর ধরে থিতু হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
গোলাপের প্রতি প্রেমের শুরুটা সেই রাজশাহীতেই। আনোয়ার হোসেন বললেন, বাংলাদেশে চাকরিকালে বাগান করার বড্ড সখ ছিল। রাজশাহীতে গোলাপ বাগান আছে। প্রতিবছর রোজ শো’তে চ্যাম্পিয়ন তার বাগানটি। গত ২০-৩০ বছর ধরে এর ধারবাহিতা চলে আসছে। সবশেষ প্যান্ডেমিকের আগেই রোজ শো হয়েছিল, তাতেও চ্যাম্পিয়ন।
যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাস্টোরিয়ায় প্রথম থাকা আনোয়ার হোসেনের। কিন্তু, সেখানে বাগান করা অসুবিধা ছিল। তখন জায়গাসহ বাড়ি খোঁজাখুজি চলে। পেয়েও যান জ্যামাইকায়। এরপর সেখানে গোলাপ বাগান করে ফেললেন। বাড়ির নামকরণ করলেন স্ত্রী মমতাজ বেগমের নামে। নাম দিলেন মমতাজ রোজ গার্ডেন। বর্তমানে আনোয়ার হোসেনের বাগানে ১০০ প্রজাতির গোলাপ আছে। এগুলো সম্ভব হয়েছে ২০ বছরের প্রচেষ্টায়। প্রথমে গোলাপ সংগ্রহটা ছিলো জ্যাকসন এন্ড পার্কিং থেকে। এরপর সিয়াটলসহ বেশকিছু নার্সারি থেকে চলে গোলাপের চারা সংগ্রহ। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের ডেভিড অস্ট্রিন রোজ আনছেন তিনি। আনোয়ার হোসেন জানান, এই গোলাপ ইউরোপে বেশি হয়। টেক্সাসে কিছু অফিস আছে, সেখান থেকে সংগ্রহ করছেন। এটা এক বছর আগে অর্ডার দিতে হয়।
এই গোলাপপ্রেমির বাগানে ১৫০ এর মতো গাছ এবং ১০০ মতো প্রজাতি আছে। জানালেন, গোলাপ আসে এপ্রিলের শেষে। কারণ, নভেম্বরে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেলে পাতা পড়ে যাওয়াসহ নানা বিড়ম্বনা হয়। কিছু গোলাপ গাছ মরে, কিছু বেঁচেও যায়। এরপর চলে পরিচর্যা। এপ্রিল থেকে গাছ ছাঁটাই করতে হয়, নতুন করে সার দিতে হয়। বাগানে কেমিক্যালের বদলে ন্যাচারাল সার ব্যবহার করেন বলে জানান ফুলপ্রেমি মানুষটি।
আনোয়ার হোসেন জানালেন, তার বাগানের অনুপ্রেরণা বাবা-মা। বাবা ফুল ভীষণ পছন্দ করতেন। বিশ্ববিদ্যালয় শেষে ঢাকায় চাকরি যখন করতে আসেন, তখন বাবা ভারত থেকে কিছু গোলাপ আসার খোঁজ নিতে বলেছিলেন। ধানমিন্ড নার্সারিতে গিয়ে গোলাপ কেনার পর রাজশাহীতে পাঠানো, এরপর বাগান তৈরি।
সকাল ৭ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত নিয়মিত বাগান পরিচর্যা করেন আনোয়ার হোসেন। এরপর চলে যান কাজে। তার দুই মেয়ে নওশীন আহমেদ, নওরীন আহমেদ। ভবিষ্যতে বাগান দেখভালের দায়িত্ব তাদেরকে দিতে চান বাবা। গার্ডেনার রেখে বাগান দেখাশোনার কথা দিয়েছে মেয়েরা। গোলাপ বাগান নিয়ে বাণিজ্যিক চিন্তা নেই আনোয়ার হোসেনের। বরং সবাইকে চারা দিয়ে সাহায্য করে যেতে চান। বাগান পরিচর্চায় তাকে অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এই বাংলাদেশি।
চ্যানেল ৭৮৬-র দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, গোলাপ ফুলকে ভালবাসি। গোলাপ মানুষের প্রণয়, সৌন্দর্য, পরিপূর্ণতার প্রতিচ্ছবি। গোলাপ বাগান করলে মানুষের মন প্রফুল্লু থাকে বলে জানান এই ফুলপ্রেমি।