Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

আন্তর্জাতিক বৈধতা পাচ্ছে তালেবানরা!

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:১৯, ২৩ জুলাই ২০২১

আন্তর্জাতিক বৈধতা পাচ্ছে তালেবানরা!

রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুসংহত করতে একের পর এক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পক্ষের সঙ্গে গোপনে-প্রকাশ্যে বৈঠক করে যাচ্ছেন তালেবান নেতারা। এরই মধ্যে ইরানের মধ্যস্থতায় কাবুল সরকার ও তালেবানের সঙ্গে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই একটি সমঝোতা বৈঠক হয়ে গেছে। ১৭ জুলাই শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় আবার বসে তালেবান ও আফগান সরকার। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ওই সংলাপ কোনো ফলাফল ছাড়াই শেষ হলেও সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। ১৮ জুলাই রোববার রাতে আফগান সরকার ও তালেবান পক্ষের প্রতিনিধিদলের প্রধানরা এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ সমঝোতার কথা জানান।

এদিকে তালেবান নেতারা ইরানে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি পাকিস্তান সফর করেছেন বহুবার। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও তারা সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছেন। নব্বইয়ের দশকে যেসব দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল, তার বাইরেও তারা যোগাযোগ করছেন। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, তালেবানেরও কাবুল সরকারের অংশ হওয়া উচিত। তালেবানদের সঙ্গে ব্রিটেন সরকারের কাজ করতে দ্বিধা নেই। এরই মধ্যে আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রকের আসনে চলে যাচ্ছে চীন। তালেবান মুখপাত্র সুহাইল শাহীন গত ৯ জুলাই সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চীনকে তারা বন্ধু হিসেবে দেখছেন। যত দ্রুত সম্ভব আফগানিস্তান পুনর্গঠনে বিনিয়োগের বিষয়ে বেইজিং আলোচনা করবে বলে তাদের আশা। আর এর জন্য চীনকে নিরাপত্তার গ্যারান্টিও দিচ্ছেন তারা। বলেছেন, আল কায়েদার মতো সন্ত্রাসী সংগঠনকে তালেবান আফগানিস্তানের মাটিতে কখনোই প্রশ্রয় দেবে না। আফগানিস্তানের মাটিতে থেকে কাউকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না!

আফগানিস্তানে এখন সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ চীনের। তামা, কয়লা, লোহা, গ্যাস, কোবাল্ট, পারদ, স্বর্ণ, লিথিয়াম ও থোরিয়ামের মূল্যবান খনিজের সবচেয়ে বড় ভান্ডার আফগানিস্তান। এসব খনিজের অর্থমূল্য দাঁড়ায় ১ ট্রিলিয়ন (১ লাখ কোটি) ডলারের বেশি। ২০১১ সালে চীনের ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন আফগানিস্তানে ২৫ বছরের জন্য তিনটি তেলক্ষেত্র খননের ইজারা পেয়েছে। এর অর্থমূল্য ৪০ কোটি ডলার। এসব তেলক্ষেত্রে প্রায় ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল তেল আছে বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়া লোগার প্রদেশের মেস আইনাকে তামার খনি খননের কাজও পেয়েছে চীনা কোম্পানি। রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এ খনির অবস্থান।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করেছে তালেবান সরকার। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে পিছু হটা শুরু করলে সেখানে ঢুকে পড়ে চীন। তালেবানদের বক্তব্য, চীন তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তান থেকে এরই মধ্যে ৯০ শতাংশ সেনা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগান সরকারি বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য ন্যাটো সেনারাও আর নেই। ফলে রাজধানীর দখল আর কতক্ষণ তারা রাখতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ২০ বছরের টানা রক্তক্ষয় ও অর্থ অপচয়ের সঙ্গে স্নায়ুচাপে এখন ক্লান্ত। বাইডেন প্রশাসন আফগানিস্তানের দায় নেওয়াকে একটা বোঝা মনে করছে। পরোক্ষভাবে তারা বলতে চাইছে, প্রতিবেশী দেশগুলোরও সেখানে একটা দায়িত্ব আছে। নিশ্চিতভাবে রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও ভারতের দিকে ইঙ্গিত করছে যুক্তরাষ্ট্র। একসময় সৌদি আরবের আর্থিক ও মার্কিন সামরিক সহযোগিতায় সোভিয়েত খেদানো তালেবানকে আবার রাশিয়ার কোলেই ঠেলে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-এমনটা ভাবা অমূলক নয়। আফগানিস্তানকে ঘিরে এখানে যে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি দানা বেঁধে উঠছে, সেটি সামলানোর মতো ক্ষমতা এসব দেশের একটিরও আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু আপাতত যুক্তরাষ্ট্র এখানে নেতৃত্বের আসনে থাকতে স্বস্তিবোধ করছে না বলেই মনে হয়। আপাতদৃষ্টিতে তালেবানদের একটি উদারনৈতিক অবস্থান প্রকাশ্যে আসছে। তবে সেটি যদি হয় শুধুই বৈধতা আদায়ের কৌশল, তাহলেই তা বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। তালেবানরা ফের সরকারে এলে তারা আবার নব্বইয়ের দশকের লৌহকঠিন শাসনে ফিরে যাবে কি না, সেটি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ঘনীভূত হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যও আফগানিস্তানের তালেবান সরকার কতখানি হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেই হিসাব-নিকাশও চলছে। অনেকে ঝুঁকি না নিয়ে এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপেরও আহ্বান জানিয়েছেন। তবে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো তেমন ইঙ্গিত মেলেনি।


চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ