যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্ক’ এর প্রধান কার্যালয় নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটন এর ‘ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্ক বিল্ডিং’ এ। এই ভবনের মাটির অনেক নীচে রয়েছে হাজার হাজার টন সোনা! মাটির ৮০ ফুট এবং সমুদ্র স্তরের ৫০ ফুট নীচে ওই ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে লক্ষ লক্ষ সোনার বার!
গুজব নয়! সত্য! ২০১৯ এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৪,৯৭,০০০ টি সোনার বার রয়েছে সেখানে। বলা হয়, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত সোনা খনি থেকে তোলা হয়েছে, তার একটা বড় অংশই মজুদ ওই ভল্টে। যার পরিমাণ কমপক্ষে ৬,১৯০ টন।
তবে এতো এতো পরিমাণ সোনার মালিক কিন্তু ওই ব্যাংক নয়। বিশ্বের শীর্ষ ধনীরাও কেউ নন। কোন ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেখানকার ভল্টে সোনা রাখতে পারে না। ব্যাংকটি কেবল তার গ্রাহকদের আমানতের অভিভাবক বা কাস্টডিয়ান। ওই গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার, অন্যান্য দেশের সরকার, বিভিন্ন দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক।
এছাড়া বিভিন্ন (অফিসিয়াল) আন্তর্জাতিক সংস্থা এগুলোর মালিক।
ভল্টে মজুদ সোনার বেশিরভাগই জমা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং এর পরপর। কারণ অনেক দেশ তখন তাদের সোনার মজুদ নিরাপদ কোনো স্থানে সংরক্ষণ করতে চেয়েছিল। এভাবে ভল্টে সোনার মজুদ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিদেশী সরকারগুলোর জন্য ডলারকে সোনায় রূপান্তরকরণ স্থগিত করার অল্প সময়ের মধ্যেই তা শীর্ষে পৌঁছে যায়। শীর্ষে থাকাবস্থায় ভল্টে ১২,০০০ টন সোনা মজুদ ছিল। ওই সময় থেকেই ধীরে ধীরে সোনায় আমানত রাখা এবং তোলার কাজ ধীর হয়ে যায় এবং ভল্টে সোনার পরিমাণ হ্রাস পায়। তারপরেও এই ভল্ট এখনো বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত ‘আর্থিক সোনা’র মজুদ হিসেবে রয়ে গেছে।
ব্যাংকে রাখা সোনার গ্রাহক কারা তা প্রকাশ করা হয় না। এখানে সোনা রাখার জন্য কোন ভাড়াও দিতে হয় না। শুধু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সোনা নিয়ে গেলে তার খরচ বহন করতে হয়।
এই ব্যাংকের নিরাপত্তা যে খুবই উঁচুমানের হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সর্বোচ্চ আধুনিক আর কয়েক স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা পায় সোনা রাখার ভল্ট। আমানতকারীরা খুব একটা ব্যাংকে আসেন না। তবে ‘পাবলিক ট্যুর’ এর অংশ হিসেবে প্রতি বছর বিশ্বের হাজার হাজার দর্শণার্থী সোনার ভল্ট দেখতে ব্যাংকে যান। তাও আবার বিনামূল্যে! নিউ ইয়র্ক এর ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এবং ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম সম্পর্কে দর্শকদের জানবার জন্য এই সুযোগ দেয়া হয়েছে। চাইলে আপনিও ঘুরে আসার জন্য নিবন্ধন করতে পারেন! অনুমতি পেলে ঘন্টাখানেক ঘুরে দেখতে পারবেন হাজার হাজার টন সোনা। তবে অহেতুক ঘুরাঘুরি করা যাবে না। আর আফসোস, কোন ছবিও তোলা যাবে না!
তথ্যসূত্রঃ ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউ ইয়র্ক এর ওয়েবসাইট।