Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সমাবর্তন

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০১:৪৮, ১৯ জুন ২০২৩

ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সমাবর্তন

বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ আয়োজনে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সমাবর্তন-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তাদের গ্রাজুয়েশন সনদ ও সম্মাননা।

গত ১৮ জুন ভার্জিনিয়ার জর্জ সি. মার্শাল হাইস্কুল মিলনায়তনে সম্পন্ন হয় এই গ্রাজুয়েশন সেরিমনি। কালো গাউন মাথায় গ্রাজুয়েশন হ্যাট পরে সেরিমনির মূল আকর্ষণ হয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সনদ নেন, আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভরিয়ে তোলেন দিনটিকে।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভার্জিনিয়ার ফ্যায়ারফ্যাক্স কাউন্টির বোর্ড অব সুপারভাইজরের চেয়ারম্যান জেফরি সি. ম্যাককে।

অনুষ্ঠানটিকে শুধু সনদ বিতরণে সীমিত না রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজন করে একটি বিশেষ সেমিনারের। তাতে কি-নোট স্পিকার হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন ড. রায়ান সাদী, যুক্তরাষ্ট্রে সমহিমায় প্রতিষ্ঠিত একজন অনন্য বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিৎসা-গবেষক। ক্যান্সারের সফল চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করে তিনি কুড়িয়েছেন বিরল সম্মান।

শিক্ষার্থীদের তিনি নিজের জীবনের সাফল্যের গল্পটি শোনান এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করেন ভবিষ্যতের পথ চলার নানা দিকনির্দেশনায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ, প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্ক শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ বিতরণের পাশাপাশি তাদের বক্তৃতায় তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার কথা।

অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে স্বীয় ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত অন্য আরো অনেক বাংলাদেশি-আমেরিকান। যারা এই গ্রাজুয়েশন-কনভোকেশনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।

এদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে সফল বাংলাদেশি-আমেরিকান ডেমোক্র্যাট সিনেটর শেখ রহমান, যুক্তরাষ্ট্রে কূটনীতিতে সফল ব্যক্তিত্ব প্রথম মুসলিম বাংলাদেশি-আমেরিকান রাষ্ট্রদূত এম. ওসমান সিদ্দিক,  শিক্ষা ও গবেষণায় সফল ব্যক্তিত্ব আইট্রিপলই'র প্রেসিডেন্ট ড. সাইফুর রহমান ও মনমাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গ্লোবাল সোশ্যাল ওয়ার্ক এডুকেশন কমিশনের কো-চেয়ার ও কমিশনার ড. গোলাম এম. মাতবর, তথ্যপ্রযুক্তির সফল প্রবক্তা ও উদ্যোক্তা, ইউটিসি অ্যাসোসিয়েটস, কোডার্সট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও সিইও আজিজ আহমদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সিদ্দিক শেখ ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ফারহানা হানিপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. জাফর পিরিম ও ড. শ্যান চো ছাড়াও শিক্ষকদের অনেকেই অংশ নেন এই সমাবর্তনে।

মাস্টার অব দ্য সেরিমনি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেসের পরিচালক ড. মার্ক এল রবিনসন। সঞ্চালনায় ছিলেন ডব্লিউপিএলজি এবিসি- টেন'র সিনিয়র প্রডিউসার ও করেসপন্ডেন্ট ড. আনিভা জামান।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেফরি সি. ম্যাককে বলেন, বহুজাতির সম্মিলনই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শক্তি। তাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার যে নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত তারই একটি উদাহরণ এই ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। এর শিক্ষার্থীরা বিশ্বের নানা দেশ থেকে এদেশে এসে তাদের উচ্চতর শিক্ষা নিচ্ছে, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষা গ্রহণ করছে, যা এই সময়ের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে বক্তৃতায় উল্লেখ করেন তিনি।

কি-নোট স্পিকার ড. রায়ান সাদী তাঁর ব্যক্তি জীবনের গল্প দিয়ে শুরু করেন এবং একটি স্বপ্ন লালন করলে তা যে পূরণ হবেই সে কথাই শোনান শিক্ষার্থীদের। জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্বে ব্যবহার করার কথা বলেন আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অসীম সম্ভাবনা রয়েছে তা উল্লেখ করে প্রত্যেককে মানবতার শক্তিতে বলিয়ান হওয়ার আহ্বান জানান।

চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ তাঁর বক্তৃতায় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, এখন যারা গ্রাজুয়েটেড হলেন তারা সবাই গত বছরগুলোতে একটি কঠিন ও অনিশ্চিত সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমি দেখেছি শিক্ষার্থীদের অসীম শক্তি ও আত্মপ্রত্যয়। আর সে কারণেই তারা সফল হতে পেরেছেন। আর তারই পথ ধরে তাদের সেই সাফল্যই আজ উদযাপিত হচ্ছে।

ড. হাসান কারাবার্ক বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার পাশাপাশি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে সেটিই সবচেয়ে বড় কথা। অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প কিছু নেই।

তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতাভিত্তিক একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে ভাগ্যবান বলে উল্লখ করেন আজিজ আহমদ। এই শিক্ষার মধ্য দিয়ে যে দক্ষতা অর্জিত হয়েছে সেটাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিশ্বের কর্মজগতের উপযোগী করে তুলবে। আর সময়ের প্রয়োজনগুলো সঙ্গে শিক্ষার্থীরা তাদের এই জ্ঞানকে যতটা সম্পৃক্ত করতে পারবে তাদের সাফল্যই তত বেশি আসবে, বলেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেন সাইবার সিকিউরিটিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করে সনদপ্রাপ্ত জোসেফাইন মিলি চুং। তিনি বলেন, একটি পূর্ণসময়ের চাকরি করে, শিশু সন্তান লালন-পালন করেও আমি এই ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পেরেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের সর্বোচ্চ যত্ন ও গুরুত্ব আরোপের কারণে। অনলাইনে সাইবার সিকিউরিটি কোর্স সম্পন্ন করে এই ডিগ্রি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এখন কাজ করছেন মিলি চুং।

পরে একে একে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রির সনদ তুলে দেওয়া হয়। আর সবশেষে শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে ফটো সেশনে এবং তারই সঙ্গে আনন্দ বিনোদনে।  

দিনের পরের ভাগে সন্ধ্যায় অতিথিরা যোগ দেন কনভোকেশন ডিনারে। স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজিত এই ডিনারে অতিথিরা একজন বাংলাদেশি আমেরিকান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কোনো পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য আবুবকর হানিপকে অভিনন্দন জানান।

বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান রোকেয়া হায়দার, ভয়েস অব আমেরিকার অপর বর্ষিয়ান সাংবাদিক সরকার কবিরউদ্দিন, এএবিজিএম'র সিইও আবদুল আলিম, ই-লার্নিংয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল খান, ভারতীয় সাংবাদিক রঘুবীর গোয়েল প্রমুখ। বক্তারা আবুবকর হানিপের এই উদ্যোগকে পাহাড় সড়ানোর মতো একটি কাজ বলে উল্লেখ করেন।

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সফল বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ইঞ্জি. আবুবকর হানিপের ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বাংলাদেশি আমেরিকানের হাতে পরিচালিত প্রথম কোনো পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে তথ্য-প্রযুক্তি, সাইবার সিকিউরিটি ও এমবিএ- বিবিএ কোর্সে বর্তমানে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। বিশ্বের ১২১ দেশের শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন।


চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ