Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

আফগানিস্তানের আলোকচিত্রী এখন যুক্তরাষ্ট্রে উবার চালক

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০:১২, ৯ আগস্ট ২০২১

আফগানিস্তানের আলোকচিত্রী এখন যুক্তরাষ্ট্রে উবার চালক

সামিম জালমি এখন যুক্তরাষ্ট্রে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘উবার’ ও ‘লিফট’ চালান

সামিম জালমি। ৩৫ বছর বয়সী এই আফগান যুবকের বর্তমান ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্য। ছোট্ট একটি অ্যাপার্টমেন্টে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে বেঁধেছেন নতুন ঘর। ভালোই চলছে সবকিছু। আফগানিস্তান ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসে নতুনভাবে বাঁচার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

বছর তিনেক আগে বাধ্য হয়েই যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার নিয়ে পাড়ি জমান সামিম। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে তাঁদের জন্য বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। নিজ জন্মভূমিতে পেশায় একজন আলোকচিত্রী ছিলেন সামিম। সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএইড) হয়ে ছবি তুলতেন। এ কারণেই তিনি তালেবানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। যুক্তরাষ্ট্রে এসে সামিম রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘উবার’ ও ‘লিফট’ চালানোর কাজ করছেন।

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এই হামলার জন্য তালেবানকে দায়ী করে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। অভিযানের পর ২০ বছরে দেশটি তালেবানের চরম সহিংসতা দেখেছে। এ সময় তালেবানের হাতে প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেকে। সামিম সেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। জীবন বাঁচাতে ইচ্ছার বিরুদ্ধেই মার্কিন অভিবাসন ভিসা নিতে হয়েছিল তাঁকে।

ভার্জিনিয়ায় নিজের ছোট্ট বাসায় বসেই সামিমের আলাপচারিতা চলছিল বার্তা সংস্থা এএফপির সঙ্গে। এ সময় আফগানিস্তান ত্যাগ করার পর যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের দিনগুলো কেমন কাটছে, তা খুলে বলেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে নতুন একটি দেশে খাপ খাইয়ে নেওয়া অতটাও সহজ ছিল না। আফগানিস্তান ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে আসতে হয় ভালোবাসার পেশাটিকেও। তাই সংসার চালাতে চাপে পড়তে হয় তাঁকে। এ ছাড়া ইংরেজি শেখার ঝক্কি তো ছিলই।

সামিম বলেন, ‘শুরুর দিকে আমি বিশ্বাসই করতে পারতাম না, আমাদের এখানে থাকতে হবে। নিজের দেশের চেয়ে সেরা আর কিছুই নেই। কিন্তু আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না। তরুণদের আমাদের দেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদেরকে আমাদের দেশের প্রয়োজন। কিন্তু কপাল খারাপ। নিরাপত্তার কারণে আমাদেরকে দেশ ছাড়তে হলো।’

যুক্তরাষ্ট্রে আসার মাত্র দুই মাসের মাথায় নতুন জীবনের যুদ্ধে হার মানতে বসেছিলেন সামিম দম্পতি। শত সমস্যা থাকার পরও ফিরে যেতে চেয়েছিলেন আফগানিস্তানে। সেখানে রয়েছেন তাঁদের স্বজনেরা। সামিম বলেন, ‘আমি যদি সেখানে মারাও যাই, তাহলে নিজের মানুষের মধ্যেই থাকব। এখানে তো কেউ আমাকে চেনে না। এটা অনেক কঠিন বিষয়।’

তবে দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে সামিমের জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়। তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন দেশটিতে থাকা অন্য আফগানরা। এসেছিলেন নতুন নতুন বন্ধুও। তাঁরাই সামিমকে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবার ও লিফটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ব্যবস্থা করে দেন একটি গাড়িও। তারপর থেকে গাড়ি চালিয়েই রোজগার করছেন তিনি।

এরপরও পদে পদে সামিমের পাশে ছিলেন তাঁর বন্ধুরা। তাঁর স্ত্রী জারিফার সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ও হাসপাতালের খরচা ওঠাতে সহায়তা করেন তাঁরা। বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সামিম বলেন, ‘তাঁরা আমাকে শিখিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে কীভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। তাঁরা শিখিয়েছিলেন, ফিরে না যেতে।’

ধীরে ধীরে ইংরেজির জড়তাও কেটেছে সামিমের। শুরুর দিকে তাঁর ইংরেজি কেউ বুঝতে পারত না। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তাঁর মেয়ে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে মার্কিনিদের মতোই ইংরেজিতে কথা বলতে পারছে বলে জানান সামিম।

আজ যুক্তরাষ্ট্রে সামিমের অবস্থান বেশ ভালো। দুটি গাড়ির মালিক তিনি নিজেই। তবু ছবি তোলার পেশার প্রতি টান যায়নি তাঁর। ক্যামেরা ছেড়ে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরতে হবে, এমন চিন্তা কখনো তাঁর কল্পনাতেও আসেনি। তবে এখনো ছবি তোলার স্বপ্ন দেখতে তো মানা নেই। সামিম বলেন, ‘ছবি তোলার কাজ শুরু করেছি। হয়তো সফল হব। আপনি যদি কোনো কাজ স্বাভাবিকভাবে নেন, পরিশ্রম করেন, তাহলে সবকিছুই সম্ভব।’

শুধু সামিমই নন। বিগত সময়ে হত্যা, হুমকি ও যুদ্ধের শিকার হয়ে আফগানিস্তান ছাড়তে হয়েছে অনেককেই। তাঁদের গল্পটাও একই রকম। গত সপ্তাহেও যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন দুই শতাধিক আফগান। তারা দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে কাজ করতেন। সামনে আসবে আরও। চলতি বছরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে চূড়ান্ত ধাপে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে সহিংসতা বাড়ে দেশটিতে। এর জেরে সেখানে থাকলে তালেবানের হামলার ঝুঁকিতে পড়বেন, এমন আফগানদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাইডেন সরকার।

নিজ দেশ ছেড়ে আসা এই মানুষগুলোর সাহায্যে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত সামিম। কারণ, তিনি তাঁদেরই একজন। তিনিও একদিন একইভাবে অন্যদের সাহায্য নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁদের যদি গাড়ির প্রয়োজন হয়, তাহলে আমি আছি...আমার সময়েও একইভাবে এগিয়ে এসেছিলেন সবাই। আর আমি বলব, যুক্তরাষ্ট্রে আপনাদের স্বাগত।’


চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ