চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবর ২০১৯ সালের শেষে সারা পৃথিবী প্রথম জানতে পারে। ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি হিসেবে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। লকডাউন, শাটডাউন, মাস্ক, সামাজিক দূরত্বে অভ্যস্ত এখন বিশ্ববাসী। এই মহামারি জাগতিক জীবনকে যেন আটকে দিয়েছে। গত দুই বছরে হাজারো প্রবাসীর বিয়ে নামক সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা আটকে ছিল। করোনা থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এখন যুক্তরাষ্ট্রে সেই বিয়ে জট খুলতে শুরু করেছে।
গত বছরের মার্চে অনেক বাবা-মা সন্তানদের আক্দ করে রেখেছিলেন। ভেবেছিলেন ২০২০ এর গ্রীষ্মে অনুষ্ঠান করা হবে। করোনার কারণে যা এই গ্রীষ্মে করা হচ্ছে।
ফ্লোরিডার মরিয়মের বিয়ে হয়েছিল মিশিগানের সুলতানের সঙ্গে। আক্দ হয়েছিল ২০২০ এর ১৫ মার্চে। কথা ছিল ওই বছরের ২৫ জুলাই অনুষ্ঠান হবে। হল বুক করা ছিল। মহামারি থেকে বেরিয়ে মরিয়মের সেই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে চলতি বছরের ২৮ মে।
মিশিগানের কনে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জুলির সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডনে পড়তে যাওয়া সিলেটের রাফির। এনগেজমেন্ট হয়েছিল করোনা চলাকালীন ২০২০ সালের শুরুর দিকে। কথা ছিল, ছেলে যুক্তরাষ্ট্র বা বাংলাদেশে গেলে বিয়ে হবে। দুই পরিবার অধীর আগ্রহে ছিল। কিন্তু দেড় বছর অপেক্ষার পর, কনে জুলিকে লন্ডন চলে যেতে হয়। পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে গত মে মাসে ছোট পরিসরে লন্ডনে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁরা এখন মধুচন্দ্রিমায় আছেন। জুলিকে নিয়ে রাফি এক মাসের ঘর ভাড়া করে পুরো লন্ডন ঘুরছেন।
২৬ বছর বয়সী সদ্য পাস করা চিকিৎসক সাদমানের সঙ্গে টেক্সাসের নওরিনের বিয়ে দেড় বছর আটকে ছিল। গত ৪ জুলাই অরল্যান্ডোতে ৬০০ লোক নিয়ে ছেলের রিসেপশন করেছেন সাদমানের বাবা সোয়েব সিদ্দিকী। ফ্লোরিডায় স্বাস্থ্যবিধি তুলে নেওয়া হয়েছে। তাই এসব বিয়ে আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় সম্পন্ন হচ্ছে।
লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রে গত দুই মাসে এ রকম আটকে থাকা কয়েক শ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তবে করোনার পর বিয়ের খরচ বেড়ে গেছে। এখন হল পাওয়া যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে মাঝারি মানের হোটেল বা কনভেনশন সেন্টার ৫৫ থেকে ৬০ হাজার ডলার ভাড়ার সঙ্গে ২৮ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। সঙ্গে ২৫ ডলারের মাথাপিছু খাবার, স্টেজ, পোশাক, সোনা, ভিডিও, নানা আনুষঙ্গিক বিষয়াদি মিলিয়ে ৭৫ থেকে ৮০ বা ৯০ হাজারে ডলারের বিয়ে। ন্যূনতম বিয়ের অনুষ্ঠান করলেও ৫০ হাজার ডলার ব্যয় করতে হয় এক একটি বিয়েতে।
এখন বিয়ের মৌসুম চলছে। হল না পাওয়ায় অনেক বিয়ে আটকে আছে। এক স্টেট থেকে আরেক স্টেটেও বিয়ে হচ্ছে। পুরো জুন, জুলাই শুক্রবার থেকে রোববার বিয়ে লেগেই আছে। বিয়ের অনুষ্ঠানের জট খুলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে আরও এক বছর সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।
করোনার বিধিনিষেধের বাধ্যবাধকতা থাকায় শত শত বিয়ের অনুষ্ঠান এত দিন আটকে ছিল। এই গ্রীষ্মকে উপযুক্ত সময় ধরে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে বিশেষ করে লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রে।
হেনা আর্টিস্ট লিসা হাসান বলেন, আমরা কল্পনা করতে পারিনি, এমন ব্যস্ত হতে হবে।
স্পেশাল ওয়েডিং কেক ডিজাইনার নাদিয়া রহমান বলেন, গত দুই মাস থেকে তিনি প্রতিদিন অর্ডার পাচ্ছেন।
মেকআপ আর্টিস্ট জান্নাতি বলেন, তাঁকে ক্লায়েন্টদের জন্য ফ্লোরিডা টু টেক্সাস যেতে হচ্ছে নিয়মিত।
ওয়েডিং প্ল্যানার ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায়ী সুন্দুস রহমান বলেন, অসম্ভব ব্যস্ততায় কেটে যাচ্ছে সময়টা।
একটা সময় ছিল, বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য আমেরিকানদের ওপর নির্ভর করতে হতো। এই মার্কেটটাও বাংলাদেশিরা ক্রমশ দখলে নিচ্ছেন। এসব অনুষ্ঠান ঘিরে গড়ে উঠেছে বিশাল ব্যবসা। এতে জড়িত রয়েছেন কয়েক হাজার পেশাজীবী। যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের মৌসুম এবারে দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ওয়েডিং পার্টি এক্সপার্টরা।
চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।