যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজীবীদের স্বার্থে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নিউইয়র্কের দুই উদারনৈতিক আইনপ্রণেতা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদে নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত সদস্য ক্রিস্টেন গিলিব্র্যান্ড ও সিনেটর চাক শুমার এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
প্রতিনিধি পরিষদে এর মধ্যেই পাস হওয়া প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজের পরিবেশ পুরো পাল্টে যাবে। শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকতর অধিকার প্রদান করা হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ পরিবর্তন নাটকীয় ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকার সংহত করার লড়াই গত কয়েক দশক থেকে চলমান রয়েছে। বাজার অর্থনীতির দেশে পুঁজির নিয়ন্ত্রকেরাই এখন কর্মপ্রবাহের সব শক্তি ধারণ করে আছে। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক কর্মচারীদের স্বাধীনতা এখনো নিয়ন্ত্রিত। করোনা মহামারিতে এ নিয়ন্ত্রণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষাকারী সংগঠনগুলো মনে করে। ক্রিস্টেন গিলিব্র্যান্ড মনে করেন, মহামারির সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত আরও ৫০০ জন নতুন বিলিয়নিয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে লাখো কর্মজীবী তাঁদের কাজ ও বাসস্থান হারিয়েছেন। নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের শ্রমিক-কর্মচারীদের বাস্তব অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে ধনী-গরিবের ব্যবধানকে আরও বড় করে তুলেছে।
ক্রিস্টেন গিলিব্র্যান্ড বলেন, যাদের আছে এবং যাদের নেই তাঁদের মধ্যে এমন ব্যবধান এই দেশে কাম্য নয়।
সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চার্লস শুমার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যম আয়ের লোকজনের কঠিন জীবনসংগ্রামের সঙ্গে তাঁদের কর্ম পরিস্থিতি সরাসরি জড়িত। তিনি বলেন, রিপাবলিকান ও রক্ষণশীলদের পক্ষ থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের ইউনিয়ন গঠনকে সব সময় চাপে রাখা হয়েছে। এমনকি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করার কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।সিনেটর চার্লস শুমারের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজীবীদের মাত্র ৩৫ শতাংশ কোনো ইউনিয়নের সদস্য। ২০২১ সালে মহামারি পরবর্তী বাস্তবতায় ইউনিয়ন সদস্য হিসেবে শ্রমিক-কর্মচারীদের তালিকাভুক্তি মাত্র ১১ শতাংশ বলে তিনি জানান। ইউনিয়নের কারণে মধ্যম আয়ের পেশাজীবীদের উন্নয়ন ঘটে এবং তাঁরা আয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারেন বলে সিটর চার্লস শুমার বলেছেন।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া ‘প্রো অ্যাক্ট ওয়ার্কার্স’ আইন শ্রমিক-কর্মচারীদের সুরক্ষা প্রদান করবে। এ আইন এখন সিনেটে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে। আইনটি পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক-কর্মচারীরা তাঁদের ন্যায্য মজুরির জন্য, সুযোগ-সুবিধার জন্য সহজেই সুরক্ষা পাবে বলে সিনেটর চার্লস শুমার উল্লেখ করেন।শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থ নিয়ে এ আইন সিনেটে দ্রুততার সঙ্গে পাস করে আইনে পরিণত করার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন সিনেটর শুমার।
‘প্রো অ্যাক্ট ওয়ার্কার্স’ আইন এমন ভাবে করা হয়েছে, যেখানে শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত সংগঠনগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হবে। দেশজুড়ে বিপুলসংখ্যক চাকরিজীবীকে ইউনিয়নভুক্ত করা হবে। কোনো ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবী নিয়োগের সময়েই লোকজনকে ইউনিয়ন সদস্য করে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইউনিয়ন গঠন এবং নিজেদের অধিকার নিয়ে সংগঠিত হতে ইচ্ছুক কর্মীদের তা থেকে ব্যবসা মালিকেরা বিরত রাখতে পারবেন না।
ক্রিস্টেন গিলিব্র্যান্ড বলেছেন, এসব পরিবর্তনের ফলে শ্রমিক-কর্মচারীদের শোষণ করে অর্থের পাহাড় গড়ে তোলার উপায় বন্ধ হবে। শ্রমিক-কর্মচারীরা সহজেই মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাবেন। রাষ্ট্রযন্ত্র অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির মূল প্রবাহের এ জনগোষ্ঠীকে অধিকতর সুরক্ষা দেবে বলে ক্রিস্টেন গিলিব্র্যান্ড এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আগামী দিনের কর্মপ্রবাহে ‘ওয়ার্কার ফার্স্ট’ নীতি চালু হচ্ছে। এর ফলে কর্মজীবীদের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সৃষ্টি হবে এবং ধনী-গরিবের মধ্যে আয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনা সহজ হবে।
চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।