Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

গ্রাজুয়েট ক্লাব ইউএসএ’র উদ্যোগে ঢাবির শতবর্ষ পূর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:২২, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ২২:২৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

গ্রাজুয়েট ক্লাব ইউএসএ’র উদ্যোগে ঢাবির শতবর্ষ পূর্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট ক্লাব ইউএসএ-এর উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপিত হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর সাড়ম্বরভাবে নিউইয়র্কের উডসাইডের গুলশান টেরেসে এই আয়োজন সম্পন্ন হয়। দুই পর্বে সম্পন্ন হয় অনুষ্ঠানটি। প্রথম পর্বে ছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও র‌্যালি। দ্বিতীয় পর্বে কেক কাটা, আলোচনা ও বিভিন্ন প্রকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা এদিন দুপুরের পর থেকেই জড়ো হতে থাকেন নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসে। টি-শার্ট বিতরণের পর শুরু হয় র‌্যালি। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ৩৭-৭৩ এভিনিউতে অবস্থিত বাংলাদেশ প্লাজার সামনে থেকে র‌্যালি শুরু হয়। এটি পরিচালনা করেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা বাঁশি, ঢোল-তবলা বাজিয়ে, গান গেয়ে র‌্যালিকে আরও আনন্দঘন করে তোলেন।

বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এনথেম গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। শুরুতে কোরআনুল কারিম থেকে তেলাওয়াত করেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এরপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তার আগে মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর পরিচালনায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় গ্রাজুয়েট ক্লাব ইউএসএ-এর আহ্বায়ক মো. মাসুদুল ইসলাম। 

সন্ধ্যা ৭টার দিকে কেক কাটার মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়পর্ব। মহুয়া মৌরি ও মুহাম্মদ শফীর উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনভেনর মো. মাসুদুল ইসলাম, নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মুনিরুল ইসলাম, ডেপুটি কনসাল জেনারেল এস এম নাজমুল ইসলাম, জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যানেজিং অফিসার এমডি লোকমান হোসাইন। গ্রাজুয়েট ক্লাবের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মো. রোকানুজ্জামান ও মহসিন উদ্দীন মোল্যা।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। তারা কেউ ক্যাম্পাস জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন। এছাড়া কবিতা আবৃত্তি, সংগীত পরিবেশনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে মেতে উঠেন ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট ক্লাব ইউএসএ-এর সদস্যরা।

ড. মনিরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট ক্লাবের এই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছি কনসাল জেনারেল হিসেবে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে। যখন থেকে এই অনুষ্ঠানের খবর পেয়েছি, তখন থেকেই এই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিলাম। আমার মনের আঙিনায় এখন ভাসছে সেই টিএসসি, কলাভবন, নীলক্ষেত, মলচত্বর, কার্জন হল, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি আর রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের প্রতিটি স্মৃতি।

গ্রাজুয়েট ক্লাবের আহ্বায়ক মাসুদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে সত্য সুন্দর ও উজ্জ্বল আগামীর স্বপ্ন। জীবনের অনিবার্য ডাকে আমরা হয়তো ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে এসেছি, তবে আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয় কখনো প্রাক্তন হয় না। এই গ্রাজুয়েট ক্লাবের মাধ্যমে আমরা আবার সবাইকে এক সুঁতোয় গাঁথবো।

সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রোকানুজ্জামান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা বসবাস করছি, আমাদের মাঝে কীভাবে একটি সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, সেই ভাবনা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট ক্লাবের যাত্রা শুরু।

মোহাম্মদ মহসিন উদ্দীন মোল্যা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সমর্থ হবো। এর মধ্য দিয়ে স্বার্থকতা খুঁজে পাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট ক্লাবের পথচলা।

অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে ছিল- র‌্যাফেল ড্র টিকিট বিতরণ, তথ্যচিত্র প্রদর্শন, বক্তৃতা, স্মৃতিচারণ, দলীয় ও একক সংগীত পরিবেশন, কবিতা আবৃত্তি, ফ্যাশন শো, নৃত্য পরিবেশনা, ক্যাম্পাসভিত্তিক নাটিকা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। রাতের খাবারের পর র‌্যাফেল ড্র এর পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। সবশেষে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় রাত ১১টায়।

গ্রাজুয়েট ক্লাব কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে একটি ম্যাগাজিন বের করা হয়। ‘অপরাজেয় মিলনমেলা ম্যাগাজিন-২০২২’ নামের এই স্মরণিকায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক নিবন্ধ, কবিতা, গল্প প্রকাশিত হয়েছে। ম্যাগাজিনটি সম্পাদনা করেছেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সিলভিয়া সাবেরীন ও মামুন রশীদ।

শতবর্ষ পূর্তি উদযাপনের এই অনুষ্ঠানে স্পন্সর হিসেবে ছিলেন- আকরাম হোসেন, মনিরুজ্জামান মনির, ফারুক হোসেন, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, রেদোয়ান চৌধুরী এবং মো. মাসুদুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠান হিসেবে এগিয়ে এসেছে- ফ্রেন্ডস অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ট্যাক্স সার্ভিসেস এবং এটর্নি রাজু মহাজন অ্যান্ড এসোসিয়েটস।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট ক্লাব ইউএসএ-এর আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন- মোহাম্মদ মাসুদুল ইসলাম। এছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন- মোহাম্মদ রোকানুজ্জামান, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মশিউর রহমান, মোহাম্মদ মহসিন উদ্দীন মোল্যা, মামুন রশীদ, মহুয়া পারভীন, সিলভিয়া সাবেরীন এবং কোহিনূর বেগম। মামুন বলেন, গতবছর ৩১ জুলাই ,২০২১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র‍্যাজুয়েট ক্লাব, ইউএসএ’র শুরু হয়েছিলো একটি আবেগ মিশ্রিত ভাবনা নিয়ে।যুক্তরাষ্ট্রে  বসবাসকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র‍্যাজুয়েটদের মাঝে কিভাবে একটি সুন্দর ও সমমনা বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক স্থাপন করা যায়- এ ভাবনা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র‍্যাজুয়েট ক্লাবের পথচলা শুরু। 

পরিশেষে তিনি আরও বলেন ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছে একটি ভালোবাসার নাম, একটি চেতনার নাম। বিশ্বে এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যাবে না, যেটি জাতির আশা-আকাংক্ষাকে এককভাবে ধারণ করে। 
এসব চেতনাকে ধারণ করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট ক্লাব, ইউএসএ’র পথচলা শুরু।


** মিলনমেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর পরিচালনা করেন মামুন রাশিদ এবং সিলভিয়া সাবেরীন। রম্য বিতর্ক এবং ভিন্নধর্মী ফ্যাশন শো অনুষ্ঠানে আরও মনোরম করে তুলে। ফ্যাশন শো তে ঢাবি'র বিশেষ গুলো এবং ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়। 
মামুন রাশিদ আর আরিফিন টুলুর কন্ঠে ক্যাম্পাসের প্রিয় গুলো দিয়ে মুখরিত হয়ে উঠে গুলশান টেরেস।

র‍্যালীতে লালবাসের প্রতিকৃতি তুলে ধরা হয়। আরও ছিলো ঢাবিকে নিয়ে লেখা ভালবাসায় সিক্ত প্ল্যাকার্ড।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ