Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

পরীমণি-পিয়াসাদের খদ্দেররা আতঙ্কে

বাংলাদেশ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ১৪ আগস্ট ২০২১

পরীমণি-পিয়াসাদের খদ্দেররা আতঙ্কে

পরীমনি, পিয়াসা, মৌ ছাড়াও শিরিন শিলা, মৃদুলা, অহনা, নায়লা নাঈম, শুভা, মানসি, পার্শা, মৌরি ও আঁচল নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন পরীমনি, পিয়াসা ও মৌ। বাকিরা সবাই র‍্যাবের নজরদারিতে আছেন। তারা গ্রেপ্তার হতে পারেন যেকোনো সময়। তবে শুধু নায়িকা বা মডেল নন, বেশ কয়েকজন চিত্রনায়ক মাদক এবং অবৈধ পর্নোগ্রাফি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। এদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে নায়িকা পরীমনি এবং কথিত মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা, মৌসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর ব্যাপক আতঙ্কে রয়েছেন তাদের খদ্দেররা।


বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মডেলদের অনেকেই বিভিন্ন পার্টির নামে গোপন ক্যামেরায় সমাজের বিত্তশালীদের অসতর্ক মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। পরে এগুলো তাদের পরিবারের স্বজন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বিত্তশালীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করতেন। বিত্তশালীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করলেও যে থেমে যেতেন, তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন সময়ে আরও বড় বড় আবদার চেয়ে বসতেন তারা। বিভিন্ন এলাকায় এ চক্রের সদস্যদের এজেন্টও রয়েছে। তাদের হাত ধরেই সুন্দরী নারীরা হয়েছে ওঠেন পার্টি গার্ল।


পরী-পিয়াসারা পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে জানিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এই নায়িকা এবং কথিত মডেলদের খদ্দের কেবল রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, দেশের বিভিন্ন শহরের শীর্ষ পর্যায়ের ধনীর দুলালরাও রয়েছেন। তাদের অসামাজিক-অস্বাভাবিক কাণ্ড তাদের পরিবারের সদস্যরা জেনেও মুখ বন্ধ করে ছিলেন। বিপথগামী সদস্যদের মাধ্যমে বিলাসবহুল জীবনযাপনের সুযোগ পাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। গুলশান-বনানী-উত্তরায় বারকেন্দ্রিক অপকর্মে একাধিক গ্রুপ অব কোম্পানির কর্ণধার, অভিজাত এলাকায় ক্লাব পরিচালনায় দায়িত্বরত ব্যক্তি, শীর্ষ পর্যায়ের গাড়ি আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী এবং কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার নাম গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। যারা ওইসব মডেল, নায়িকা বা সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গ নিতেন এবং খুশি হয়ে বিনিময়ে বস্তুগত ও অবস্তুগত উপহার প্রদান করতেন। তবে ওই সেনসেশনাল তরুণীরা তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে তাদের সঙ্গ নেওয়া ধনীর দুলালদের গোপন ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে মোটাদাগের অর্থ হাতিয়ে নিত। অন্যথায় ওইসব ছবি বা ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে হেনস্তা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হতো।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেবল রাজধানী ঢাকাতেই অসামাজিক ও অপকর্মে লিপ্ত তিন শতাধিক ধনীর দুলালের তথ্য আইন প্রয়োগকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার হাতে রয়েছে। ধনীর দুলালদের কয়েকজনকে নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে। যারা কেবল ক্লায়েন্ট নয়, ওইসব অপকর্মের ইন্ধন জুগিয়েছেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। প্রয়োজনে তাদের তালিকা শীর্ষ পর্যায়ে পাঠিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।


চিত্রনায়িকা পরীমনি ‘বিশেষ সঙ্গ’ ও বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিয়ে অর্থ আয় করতেন। আর তাকে সহযোগিতা করতেন কথিত প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। তিনি প্রথমে পরীমনিকে কোটিপতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিশেষ উদ্দেশ্যে পরিচয় করিয়ে দিতেন। রাজের সঙ্গে মিশু হাসান ও জিসান মিলে ১০ থেকে ১২ জন তরুণী নিয়ে একটি সিন্ডিকেট চালাতেন। উচ্চবিত্ত ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ‘বিশেষ সঙ্গ’ দিয়ে এই তরুণীরা অর্থ আয় করতেন। এই চক্রের তরুণীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘চাহিদা’ ছিল পরীমনির। তিনি বিদেশে গিয়েও ‘প্লেজার ট্রিপ’ দিতেন।


এদিকে চাঞ্চল্যকর স্ক্যান্ডাল বেরিয়ে আসছে পরীমনি, পিয়াসা, মৌ, হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ অন্য অনেকের ডিজিটাল মাধ্যম থেকে। তাদের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট যাচাই-বাছাই করছে সিআইডি। তাদের ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে সিআইডি। জব্দকৃত মোবাইল ফোন থেকে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে অডিও রেকর্ড এবং গোপন ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। যেসব ভিডিও ফুটেজ ও অডিও রেকর্ড দিয়ে পরীমনি ও পিয়াসা-মৌরা প্রভাবশালীদের ব্ল্যাকমেল করে আসছিলেন।


পরী-পিয়াসা ও মৌয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ২১ প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীর বিশেষ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে বিতর্কিত মডেল পিয়াসার সঙ্গে ‘ইউ’ আদ্যক্ষরের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) মোবাইল ফোনের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড উদ্ধার হয়েছে। একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যানের সঙ্গে মডেল মরিয়ম আক্তার মৌর গোপন ভিডিও রয়েছে। পিয়াসার সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের এক অলংকার ব্যবসায়ীর বেশ কয়েকটি অডিও রেকর্ড পেয়েছে সিআইডি। রাজধানীর গুলশানে ভারতীয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে পিয়াসার একটি ক্লাবে সময় কাটানোর ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। গুলশানে একটি দামি ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রির শোরুমের মালিকের সঙ্গে পরীমনি ও পিয়াসার বহুবার কথোপকথন হয়েছে মোবাইল ফোনে। মদ বিক্রির দোকানের মালিকের (যার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ) সঙ্গে পিয়াসার লং ড্রাইভে যাওয়ার কথোপকথন রয়েছে। সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মোবাইল ফোন ও ফেসবুক আইডি তল্লাশি করে ২১ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে পিয়াসা, পরীমনি ও মৌয়ের নিয়মিত যোগাযোগ থাকার তথ্য মিলেছে।
র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম জানান, পরীমনি ছাড়াও বেশ কয়েকজন মডেল-অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ পর্নোগ্রাফির অভিযোগ পাওয়া গেছে। হয়তো খুব কম সময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।


র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস). কর্নেল কে এম আজাদ বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছে অসামাজিক ও বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত কথিত মডেল, নায়িকা ও সুন্দরী তরুণীদের বিষয়ে অভিযোগ আসে। তা ছাড়া আমাদের সাইবার মনিটরিং টিমের নজরদারিতেও তাদের অস্বাভাবিক রকমের আচরণ ধরা পড়ে। ওই মডেল, নায়িকা বা সুন্দরী তরুণীদের কাছে যেসব ধনীর দুলালের নিয়মিত যাতায়াত ছিল, তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া পিয়াসা ও পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন সব ধনীর দুলালের নাম-পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। তাদেরও অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার জন্য তৎপরতা চালানো হচ্ছে। তবে পরী-পিয়াসারা গ্রেপ্তারের পর ওই ধনীর দুলালরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তাদেরকে ট্রেস করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তারা অল্প সময়ের মধ্যেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অবস্থান পরিবর্তন করছে।


চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ