Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

মেয়র পদে কৃষ্ণাঙ্গ এরিক অ্যাডামসের জয়

নিউইয়র্কে আইন-শৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কা !

আমেরিকা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ১০ জুলাই ২০২১

আপডেট: ১৭:৪৬, ১০ জুলাই ২০২১

নিউইয়র্কে আইন-শৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কা !

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারি নির্বাটনে জয়ী হয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ এরিক এডামস। বিশ্বের ব্যস্ততম নগরী নিউইয়র্কের ইতিহাসে তিনি হতে যাচ্ছেন দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র। এর আগে ১০৬তম মেয়র হিসেবে ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান ডেভিড নরম্যান ডিনকিন্স।


এদিকে, এরিকের এই বিজয়ে নতুন করে নিউইয়র্কে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন অনেকে। তাদের আশঙ্কা, এরিক মেয়র হলে সিটিতে কৃষ্ণাঙ্গরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। বিশেষ করে ব্রঙ্কস ও ব্রুকলিনের অনেক বাসিন্দা এই আশঙ্কায় প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট দিচ্ছেন। তাদের দাবি, আঠাশ বছর আগে ডেভিড ডিনকিন্সের মেয়র থাকাকালীন নগরীতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়। তারা বলছেন, গত বছর বর্ণবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে নিউইয়র্কে আবারও কালোদের দৌরাত্ম বেড়েছে।


নিউইয়র্কের নিকট ইতিহাসে প্রথম গত বছর কারফিউয়ের দিন ম্যানহাটানসহ বিভিন্ন স্থানে কৃষ্ণাঙ্গরা যে তান্ডব-লীলা চালিয়েছিল তা স্মরণ করে অনেকে ব্রঙ্কস ও ব্রুকলিনের বিভিন্ন হামলার ঘটনাও সামনে নিয়ে আসছেন। তাদের দাবি, ওই দুটি বরোতে প্রতিনিয়তই কালোদের হামলার শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা।  
গত ২২ জুন ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারি নির্বাচনে এরিক অ্যাডামস এগিয়ে ছিলেন। পরে র‌্যাঙ্ক চয়েস ভোট, অ্যাবসেন্টি ও আগাম ভোট গণনা শেষে মঙ্গলবার বেসরকারি ভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় তাকে। এরফলে আসছে নভেম্বরে মূল নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়নে নির্বাচনে লড়বেন এরিক। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের বিজয়ী প্রার্থী কার্টিন স্লিওয়া। নিউইয়র্ক সিটি ডেমোক্র্যাটিক অধ্যুষিত হওয়ায় এখানে এ দলের প্রার্থীই বিজয়ী হবেন এটা প্রায় নিশ্চিত বলেই  ধরে নিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। তবে নিকট অতীতে এর ব্যতিক্রমও ঘটেছে। আর সেই ব্যতিক্রম ঘটেছে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র ডেভিড ডিনকিন্সের সময়।
১৯৯০-৯৩ সালে ডেভিড ডিনকিন্স প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি এক মেয়াদের জন্য চার বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। পরের বার ৫১ হাজার ভোটে হেরে যান রিপাবলিকান প্রার্থী আইনজীবী রুডি জুলিয়ানির কাছে। অ্যাটর্নি রুডি পরপর দুইবার ক্ষমতায় থাকার পর টানা তিন মেয়াদেও জন্য নিউইয়র্ক সিটি শাসন করেন আরেক রিপাবলিকান ধনকুবের ব্যবসায়ী মাইকেল ব্লুমবার্গ। ব্লুমবার্গের পর নির্বাচিত হন ডেমোক্র্যাটিক সমর্থিত বর্তমান মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। তিনি দুইবারের তার মেয়াদ শেষ করেছেন।


নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদের মেয়াদ চার বছর। টানা দুই মেয়াদ পর্যন্ত কেউ মেয়র পদে থাকতে পারেন। ব্লুমবার্গ তিন বার ক্ষমতায় থাকার পর চলে যাওয়ার আগ মুহূর্তে মেয়র পদের মেয়াদ সর্বোচ্চ দুবার করার আইন পাশ করে যান। নিউইয়র্কে এবার নিয়ে দ্বিতীয়বার কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র হতে চললেও কোনো নারী কিংবা হিসপ্যানিক ও লেটিনো কমিউনিটি থেকে কেউ এখন পর্যন্ত মেয়র নির্বাচিত হতে পারেননি।   


প্রসঙ্গত, ডেভিড ডিনকিন্সের সময় নিউইয়র্কের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। বিভিন্ন মহলে অভিযোগ রয়েছে, সেই সময় কৃষ্ণাঙ্গরা সিটিতে বেপোরোয়া হয়ে ওঠে। এরফলে ডেমোক্র্যাট দলের অভ্যন্তরেই ডিনকিন্সের বিরোধিতা শুরু হয়। একাট্টা হন শ্বেতাঙ্গ ও রিপাবলিকানরা। সেবার লেবার পার্টিও তৎকালীন ডেমোক্র্যাট কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র প্রার্থী ডেভিড ডিনকিন্সকে সমর্থন না দিয়ে রিপাবলিকান রুডি জলিয়ানিকে সমর্থন দেয়।
নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিনিয়র নেতা মোর্শেদ আলম অবশ্য এ বিষয়ে ভিন্ন মত জানান। তিনি আজকালকে বলেন, ডেভিড ডিনকিন্স তার নিজ দলের কোন্দলে পড়েছিলেন। ডিনকিন্স আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ১২ হাজার পুলিশ নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের একাংশ ও রিপাবলিকানরা মিলে সেটি হতে দেয়নি। ডিনকিন্স পুলিশ নিয়োগ দিতে পারলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারতো, মত মোর্শেদ আলমের।


এরিক অ্যাডামসের সমর্থক একটি অংশের মতে, ডেভিড ডিনকিন্সের সময় আর এখন এক নয়। তারা বলছেন, এরিক এডামস নিউইয়র্ক পুলিশের ক্যাপ্টেন ছিলেন। সেটি ছেড়ে ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্ট হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন। সে দায়িত্বে থেকেই ২২ জুনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে অবতীর্ণ হন এবং ১২ জনকে পিছনে ফেলে সর্বোচ্চ ভোটে তিনি চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। পুলিশ বাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে এরিক অ্যাডামস নিউইয়র্ক সিটিকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখবেন বলেই বিশ্বাস তাদের।


আসছে ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চূড়ান্ত ব্যালট যুদ্ধ এবং সেখানে এরিক এডামসকে লড়তে হবে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার বিরুদ্ধে। নিউইয়র্ক সিটির মোট ভোটারের ৭০ শতাংশের মতো ডেমোক্র্যাট হওয়ায় এরিক এডামসকে ঠেকিয়ে রাখা অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে ধরেই নেয়া হচ্ছে দীর্ঘ আঠাশ বছর পর কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র পেতে যাচ্ছে নিউইয়র্ক সিটি।


চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ