Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ 

প্রফেসর ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান | অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০২:২৩, ১০ অক্টোবর ২০২২

বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ 

আজ ৮ অক্টোবর ২০২২ প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, সংগঠক, শিক্ষা প্রশাসক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম- স্যারের ১৭তম মৃত্যু বার্ষিকী। ২০০৫ সালের এই দিনে এ গুণী মনীষী মৃত্যুবরণ করেন। 
প্রফেসর ড. মুহম্মদ সিরাজুল ইসলামের জন্ম ১৯২৮ সালের ১ জানুয়ারি ভারতের তৎকালীন অবিভক্ত মালদা জেলার মহানন্দা নদীর তীরবর্তী কালিয়াচক গ্রামে। অসাধারণ মেধা ও ধীশক্তিমান মুহম্মদ সিরাজুল ইসলামের শিক্ষা জীবন ছিল সাফল্যের গাঁথায় উজ্জ্বল। তিনি মালদা জেলা স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাশ করেন। এরপর তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে আই এ এবং ইতিহাস বিষয়ে বি এ সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থানসহ এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর এ কৃতিত্বপূর্ণ ও গৌরবজনক ফলাফলের স্বীকৃতি হিসেবে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্বর্ণপদক এবং University Prizeman Award লাভ করেছিলেন। তিনি পরবর্তীকালে জামানির বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি এবং জার্মান ভাষায় ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। 


মুহম্মদ সিরাজুল ইসলামের কর্ম ও পেশাগত জীবন ছিল বর্ণাঢ্য ও বর্ণবহুল।  জীবনে তিনি নানা পেশায় বিচরণ করেছেন। তবে তাঁর কর্মজীবনের মৌলিক সত্তা বিচারে তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত শিক্ষক এবং শিক্ষক পরিচয়টিই তাঁর জীবনে মূল পরিচয় হিসেবে স্থায়িত্ব পেয়েছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি শিক্ষকতা জীবন শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে যোগদান করেন। এ বিভাগের রিডার, বিভাগীয় প্রধান এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি নানা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপালন করেছেন। এসব কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাকিস্তান সরকারের Assistant Planning Adviser (১৯৫৩-৫৪), স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক কাউন্সেলর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (১৯৭৫-৭৭) এবং বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য (১৯৮৪-৮৮)। তিনি ১৯৮৮ -৯১ সাল পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের উপাচার্য পদে দায়িত্ব লাভ করেন।


প্রফেসর মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম ১৯৮১-৮৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের M I T তে আগা খান Visiting Professor হিসেবে ইসলামি শিল্পকলা বিষয়ক গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন। এর আগে তিনি ১৯৮০ সালে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে Visiting Professor হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।   


প্রফেসর মুহম্মদ সিরাজুল অসাধারণ বাগ্মী ছিলেন। তিনি দেশ বিদেশে বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিয়েছেন এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে দুখণ্ডের Pakistan and Its Culture  এবং Masjid -I- Jami, Khairpur.
প্রফেসর সিরাজুল ইসলামের সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল অসাধারণ। তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং এর প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রাণের সংগঠন “প্রাক্তন ছাত্র সমিতি” তাঁর উদ্যোগ এবং উৎসাহে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি আমৃত্যু প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন এবং তাঁকে মধ্যমনি করেই প্রতিষ্ঠানটির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হতো।

পিতার হাতে গড়া এই প্রাক্তন ছাত্র সমিতিটি এখন তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিসেস শবনম শেহনাজ চৌধুরী দীপা’র সুদক্ষ নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। তাঁর উদ্যোগ ও আর্থিক সহায়তায় প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম স্যারের অবদান ও কৃতিত্বকে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁর নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্যে কলা ভবনের ৭ম তলায় “অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম কম্পিউটার ল্যাব” স্থাপিত হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের আরেক কৃতি শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এই আধুনিক কম্পিউটার ল্যাবটি উদ্বোধন করেন।


মানুষ মরণশীল। প্রকৃতি অমোঘ নিয়মেই মানুষের মৃত্যু হয়। তবে মৃত্যু মধ্য দিয়েই সব মানুষ বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যান না। অনেক ক্ষণজন্মা মানুষ বেঁচে থাকে তাঁর কৃতি, কীর্তি  ও মহৎ কর্মের মাধ্যমে। এক কথায়  কথায় বলতে গেলে কৃর্তিকমানের মৃু্ত্যু নেই।  ড. মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম এ শেষোক্ত দলেরই একজন। ২০০৫ সালে তাঁর মৃত্যুেহয়েছে, তবে তিনি বেঁচে আছেন তাঁর মহৎ কৃতি ও কর্মে র মাধ্যমে। অনেক গুণমুগ্ধ মানুষ তাঁকে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।


১৭তম মৃত্যু বার্ষিকীর এই দিনে পরম শ্রদ্ধার সাথে মহান কর্মযোগী, সুপণ্ডিত ইতিহাসবিদ মুহম্মদ সিরাজুল ইস্যালম কে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি। পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করি ইহজগতে তিনি যেমন সকলের শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র ছিলেন, পরজগতের অনন্তলোকে তিনি যেন তাঁকে একই রকম সম্মানের স্থানে অধিষ্ঠিত রাখেন।
আজকের এই দিনে আমি তাঁর পরিবার-পরিজনদের সমবেদনা জ্ঞাপনসহ তাঁদের সার্বিক কল্যাণ কামনা করছি।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ