Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

‘ইসরায়েলকে থামাতে পারে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও এর নাগরিকরা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৪০, ৩০ অক্টোবর ২০২৩

‘ইসরায়েলকে থামাতে পারে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও এর নাগরিকরা’

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়াজ উঠছে ‘ফ্রি পেলেস্টাইন’। যারা এই আওয়াজকে সংগঠিত করছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট কাজী ফৌজিয়া। ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য তাদের মুভমেন্ট নিয়ে চ্যানেল ৭৮৬-এর সঙ্গে কথা বলেছেন এই সোশ্যাল ওয়ার্কার। সঙ্গে ছিলেন রোকেয়া মোহনা
  
কেমন আছেন?
ভালো নেই। সত্যি বলেতে কি, কোনো মানবিক মানুষই আজ ভালো নেই। আমাদের চোখের সামনে একটি জেনোসাইড সংগঠিত হচ্ছে। আমরা প্রাণপনে সেটা বন্ধ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু সফল হতে পারছি না। সেই অবস্থায় আমরা আসলে ভালো থাকতে পারি না। তবে হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

যুদ্ধটা কি হামাস-ইসরায়েল, নাকি ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে?
আমি বিষয়টাকে এভাবে দেখছি না। এটি আসলে দুই দেশ কিংবা দুই ধর্মাবলম্বীদের মধ্যকার যুদ্ধ নয়। এই যুদ্ধ হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে নয়। যুদ্ধটা মানবতার সঙ্গে অমানবতার। ডেভিলের সঙ্গে হিউম্যান বিংয়ের। 

এই যুদ্ধে বিশ্বমিডিয়ার ভূমিকা কি?
এককথায় বললে…ন্যাক্কারজনক। আমরা এই যুদ্ধকে ‘মিডিয়া প্রোপাগাণ্ডা ওয়ার’ও বলে থাকি। মোটাদাগে বলা যায়, ৯৯ শতাংশ মিডিয়া ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। একমাত্র আল জাজিরা থেকে আমরা নির্মোহ এবং সত্য ঘটনাটা জানতে পারতাম। দুঃখজনক হলো, এই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমটিকেও সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তাতে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো ছাড়া আর কিছু জানা যাচ্ছে না।

গাজার এখনকার পরিস্থিতি কি?
বোমার নিচে পড়ে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। খাবার নেই, বাসস্থান নেই, ওষুধ নেই—এমন সংকটে মৃত্যুর মুখে হাজার হাজার মানুষ। তাদের কাছে ইন্টারনেটও নেই যে, বর্হিবিশ্বের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করবে। সবমিলিয়ে ভয়ানক অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে গাজাবাসী। একের পর এক রকেট লাঞ্চার পড়ছে তাদের ওপর। অন্যদিকে হামাসের পক্ষ থেকে যে কয়েকটা রকেট ছোড়া হচ্ছে, শক্তিশালী আয়রন ডোমের মাধ্যমে বাতাসের মধ্যেই সেগুলো নিষ্ক্রীয় করে ফেলছে ইসরায়েল। সুতরাং গাজায় যা চলছে সেটা ‘এথনিক ক্লিনজিং’।

ইসরায়েলের মদদদাতা কারা? 
বিশ্বরাজনীতিতে এটা ওপেন সিক্রেট। চলমান যুদ্ধে সবচেয়ে বড় কলকাঠিটা নাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসন থেকে কোটি কোটি ডলার পাঠানো হচ্ছে যুদ্ধ চালিয়ে নেওয়ার জন্য। যেই দেশে শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট নেই, নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না; সেই দেশ যুদ্ধকে উস্কে দিতে অর্থ পাঠাচ্ছে ইসরায়েলে। ভবিষ্যতেও যে কোনো ধরনের সাহায্য পাঠানো হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ইসরায়েলের পাশে, সেখানে ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যত কি?
আসলে ফিলিস্তিন কিংবা পুরো মধ্যপ্রাচ্য হলো বিশ্বরাজনীতির দাবার গুঁটি। অনেকেই বলে থাকে, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা মুসলিম দেশগুলো কেন ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াচ্ছে না? এভাবে দাঁড়াতে পারলে তো খুবই ভালো হয়, কিন্তু অন্য একটা বিষয়ও মনে রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো পশ্চিমা বিশ্ব ইসরায়েলের পক্ষে, এখন মুসলিম বিশ্ব যদি ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ায় তাহলেই তো লেগে যাবে তৃতীয় মহাযুদ্ধ। অস্ত্রের রমরমা ব্যবসার জন্য পশ্চিমা বিশ্ব সেটাই চায়। তাই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে লড়াইয়ে নামা মানেই তাদের পাতা ফাঁদে পা দেওয়া।

সেজন্যই কি মুসলিম বিশ্ব কড়া বার্তা দিচ্ছে না?
আমার তাই মনে হয়। মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা পশ্চিমা বিশ্বকে সেই সুযোগটা দিচ্ছে না। তারা ভীষণ ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন। আমি মনে করি, তারা খুব সাবধানতা অবলম্বন করছেন। যখন আমাদের সামনে ভালো কিছু থাকে না, তখন আমরা মন্দের ভালো খুঁজি। মুসলিম দেশগুলোর ধৈর্যের পরীক্ষা সেই মন্দের ভালো।

তাহলে কি মুসলিম বিশ্ব কোনো স্টেপ নেবে না?
নিশ্চয়ই নেবে, তবে যুদ্ধে জড়াবে না। চলমান যুদ্ধেও মুসলিম বিশ্ব তাদের বার্তা দিয়েছে। কিছুদিন আগে জো বাইডেন মধ্যপ্রাচ্য সফলে গেলেন। ইসরায়েল সফর করার পর মরক্কো, লেবানন ও সৌদি আরবের নেতাদের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের। কিন্তু ওইসব দেশগুলো থেকে বাইডেনের সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে না বলে দেওয়া হয়েছে। মুসলিম বিশ্বের নেতারা যে বাইডেনকে মুখের ওপর না বলে দিতে পারলো, এটাকে আমি অনেক বড় অগ্রগতি মনে করি এবং এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আওয়াজ উঠছে। বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?
আসলে এটা ফিলিস্তিনিদের প্রতি ভালোবাসা নয়, এটা মুসলিম এবং ইহুদী ইস্যুও নয়। এটা দায়িত্ববোধের ব্যাপার। আমরা হয়তো আবেগে অনেক কথাই বলে থাকি। বাস্তবতা হচ্ছে, পুরো মুসলিম বিশ্ব এক হলেও এই যুদ্ধ ঠেকাতে পারবে না। এই যুদ্ধ ঠেকানোর ক্ষমতা আছে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের ও রাষ্ট্রটির জনগনের। এটা করা যাবে পলিটিশিয়ানদের ওপর চাপ তৈরি করার মাধ্যমে। আমরা যে ডিমান্ড নিয়ে আমেরিকার রাস্তায় নেমেছি, সেটা অবৈধ কিছু নয়। অনেক ডেমোক্রেট নেতা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। এই সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছে।

আমেরিকায় বসে আমেরিকান সরকারের পলিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কোনো লাভ হবে কি?
এই ধারনাটা ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, আমেরিকা পুরোপুরি গণতান্ত্রিক দেশ। বিভিন্ন সময় এই দেশের প্রশাসন যুদ্ধে জড়ালেও সারাধরণ আমেরিকানরা সবসময়ই যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। প্রশাসনকে তার অবস্থান থেকে ফিরিয়ে এনেছে। আমাদের এখানকার প্রোটেস্টগুলোও সেজন্যই। আমাদের ট্যাক্সের টাকা সরকার যুদ্ধের পেছনে ব্যয় করতে পারে না—সেটাই নিশ্চিত করার জন্য মাঠে নেমেছি। ডেমোক্রেট নেতারা কেনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করছে না, সে ব্যাপারে তাদের মুখোমুখি হতে পারি।

যুদ্ধবিরতির এই আন্দোলন কি শুধু নিউইয়র্কে?
মোটেও নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রত্যেকটা স্টেটে মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে। বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় ডেমোক্রেট নেতাদের কাছে গিয়ে যুদ্ধবিরতির পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেককে রাজি করাতে তারা সফলও হয়েছেন।

এই আন্দোলনে বাংলাদেশি কমিউনিটি কতটা যুক্ত হচ্ছে?
নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের অ্যারেস্ট হওয়ার ঘটনা খুব রেয়ার। বছর দুয়েক আগে দুজন বাংলাদেশি অ্যারেস্ট হয়েছিলেন। এবার ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে ৫ জন অ্যারেস্ট হয়েছেন। এর মধ্যে শাহানা হানিফও রয়েছেন। এর অর্থ হলো, মানুষ যুদ্ধবিরতির জন্য নিজের লাইফ রিস্কে ফেলে দিতেও রাজি। যে কোনো মূল্যে তারা জেনোসাইডকে বন্ধ করতে চায়।

এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদী সম্প্রদায়ের অবস্থান কি?
ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির পক্ষে কিন্তু শুধু মুসলমানরাই আন্দোলন করছে না। সব ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণির মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ছে। কিছুদিন আগে ক্যাপিটল হিলে হাজার হাজার ইহুদি একত্র হয়েছে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। তারা ইসরায়েলকে সাহায্য না করার দাবি জানায়। সেখান থেকে ৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই গেদারিং দেখে চোখ কপালে উঠে গেছে অনেকের। তারা হয়তো ভাবতেই পারেনি, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে ইহুদিরা। 

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইহুদিদের অবস্থান নিশ্চয়ই বড় ঘটনা…? 
অবশ্যই। ইহুদিদের এমন আন্দোলন দেখে ক্যাপিটল হিলের ৪০০ ওয়ার্কার সিজফায়ারে সাইন করেছে। অনেক ডেমোক্রেট নেতা তার অবস্থান পরিবর্তন করছেন। মানুষ বিভিন্ন পলিটিশিয়ানদের অফিস থেকে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে। যাওয়ার সময় বলে যাচ্ছে, তুমি যেহেতু যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করোনি, তাই আমি তোমার আন্ডারে কাজ করবো না। এরকম একটা-দুইটা নয়, অনেক ঘটনা ঘটেছে।

আপনাদের দাবি কি শুধু যুদ্ধবিরতি? ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চান না?
আমাদের দাবি একটা নয়, অনেকগুলো। এই মুহূর্তে প্রথমত যুদ্ধবিরতি চাই, কারণ যুদ্ধটা চলছে। এর পাশাপাশি আমরা বলছি, বর্হিবিশ্ব থেকে খাবারসহ যে সাহায্যগুলো ফিলিস্তিনিদের জন্য পাঠানো হয়, সেগুলো ঢুকতে দিতে হবে। কারণ ইসরায়েল প্রায়শই সেগুলো আটকে দেয়। আটক থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তির দাবিও রয়েছে তালিকায়। কিন্তু আমাদের মূল দাবি স্বাধীন ফিলিস্তিন।

আমেরিকা ইসরায়েলের পক্ষ নেয় কেন? স্বার্থ কি?
অনেকেই মনে করে, ইসরায়েলের সঙ্গে রয়েছে আমেরিকার আদর্শিক স্বার্থ। ব্যাপারটা আসলে তা নয়। এটা শুধুই অস্ত্র বিক্রির ধান্ধা। শুধু ইসরায়েলে নয়, পৃথিবীর যেখানেই যুদ্ধ লেগেছে, সেখানেই কোনো না কোনোভাবে অস্ত্র বিক্রি করে পয়সা ইনকাম করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কোথাও যুদ্ধ না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র সেখানকার মানুষকে উসকে দেয়, যেন যুদ্ধটা বাঁধলে তারা অস্ত্র বিক্রি করতে পারে। এটাকে বলা হয় ‘মিলিটিরিয়াল ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রফিট’।


চ্যানেল৭৮৬ এর নিউজ রুমে যোগাযোগ করতে ইমেইল করুন এই ঠিকানায়[email protected] । আপনার পণ্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নম্বরে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ