চলতি বছরের শুরু থেকে চলছে কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রম। মহামারী থেকে বেরিয়ে আসতে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এ টিকা। বিশ্বজুড়ে প্রয়োগ হওয়া বেশির ভাগ টিকাই দুই ডোজের। একমাত্র জনসন অ্যান্ড জনসনের (জেঅ্যান্ডজে) একক ডোজের টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে অধিক সংক্রমণপ্রবণ ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে খুব বেশি কার্যকরী নয় প্রচলিত এ টিকাগুলো। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে এসব টিকায় তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিও। এজন্য সংস্থাগুলো এখন টিকার বুস্টার কিংবা তৃতীয় ডোজ নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাখ লাখ মৃত্যু রোধ এবং আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশা দেখাচ্ছে কভিড-১৯ টিকাগুলো। অন্যদিকে এ টিকা কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর মুনাফা ফুলে-ফেঁপে উঠতে সহায়তা করছে। বুস্টার ডোজ অনুমোদন হলে টিকার ব্যবসা স্বাভাবিকভাবেই আরো জমজমাট হবে।
গত জুনে বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, এ বছর কভিড টিকার বৈশ্বিক বাজার ৭ হাজার কোটি ডলার হতে পারে। তবে বর্তমানে কভিডের ডেল্টা ধরন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় টিকার বাজারটি আরো বড় হতে পারে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন যে বুস্টার ডোজ লাগবে কিনা।
এ সপ্তাহের শেষে মার্কিন সরকারের অর্থায়ন পাওয়া মডার্না দ্বিতীয় প্রান্তিকে আয়ের পরিসংখ্যান প্রকাশ করবে। এর আগে সংস্থাটি ২০২১ সালে কভিডের টিকা বিক্রি করে ১ হাজার ৯২০ কোটি ডলার আয়ের পূর্বাভাস দিয়েছিল। এ পূর্বাভাসও বাড়ানোর ইংগিত দিয়েছে সংস্থাটি।
বৈশ্বিক টিকার বাজারের বড় একটি আয় যাবে দুই মার্কিন সংস্থা মডার্না ও ফাইজারের ঘরে। সংস্থাগুলো ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে দুই ডোজ টিকার জন্য ৩০ ডলারেরও বেশি অর্থ নিয়েছে। যেখানে বৃহত্তম ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং আরেক মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক জনসন অ্যান্ড জনসন মহামারী শেষ না হওয়া পর্যন্ত অলাভজনক ভিত্তিতে টিকা বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের সঙ্গে যৌথভাবে কভিডের টিকা প্রস্তুত করা ফাইজার চলতি বছরের প্রথমার্ধে টিকা বিক্রি থেকে ১ হাজার ১৩০ কোটি ডলার আয় করেছে। পাশাপাশি পুরো বছরের জন্য টিকা বিক্রির পূর্বাভাস ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার থেকে ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারে উন্নীত করেছে।
টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কিত একটি সমীক্ষাও প্রকাশ করেছে ফাইজার। সেখানে বলা হয়েছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টিকার কার্যকারিতা কমতে থাকে। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের চার মাস পর কার্যকারিতা ৯৬ শতাংশ থেকে ৮৪ শতাংশে নেমে আসে।
এজন্য ফাইজার ও মডার্না করোনার ডেল্টা ধরনকে লক্ষ্য করে তাদের এমআরএনএ টিকাকে পরিবর্তন করেছে এবং এ মাসে মানুষের ওপর পরীক্ষা শুরু করবে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ফাইজারের মোট বিক্রি বেড়েছে ৮৬ শতাংশ। এর মধ্যে কভিডের টিকা বাদ দিয়ে সংস্থাটির অন্যান্য ওষুধ পণ্যের বিক্রি বেড়েছে মাত্র ১০ শতাংশ।
মার্কিন আর্থিক পরিষেবা সংস্থা মর্নিংস্টারের বিশ্লেষক ড্যামিয়েন কনওভার বলেন, বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকার চাহিদা স্থানান্তরিত হয়েছে। আর এ দেশগুলোতে টিকার দামও কম। এ কারণে আগামী ১২ মাসে টিকা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। তবে বুস্টার ডোজ অনুমোদিত হলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। তৃতীয় ডোজ দীর্ঘমেয়াদে সংস্থাগুলোর মুনাফা আরো বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করবে।
কভিডের এ টিকা ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত বায়োটেক ফার্ম মডার্নার ভাগ্যকেও বদলে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো প্রান্তিক ভিত্তিতে মুনাফার দেখা পেয়েছে সংস্থাটি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সংস্থাটি ১৭০ কোটি ডলার আয় করেছে।
এ দুই সংস্থার বাণিজ্যিক সাফল্য অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জেঅ্যান্ডজের নেয়া অলাভজনক উদ্যোগের সম্পূর্ণ বিপরীত। এ সংস্থা দুটি ফাইজার-মডার্নার চেয়ে অনেক কম মূল্যে টিকা সরবরাহ করছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা দুই ডোজের জন্য ৪ ডলার থেকে ১০ ডলার এবং জেঅ্যান্ডজে মার্কিন সরকারের কাছে একক ডোজের টিকা বিক্রি করেছে ১০ ডলার করে।
চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।