
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির ‘বিজনেস আইকন’ বলা যায় মোহাম্মদ খলিলুর রহমানকে। ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি আর্তমানবতার সেবায় নানা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গত ১৯ মার্চ ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ড পেলেন বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী।
এই অ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। কমিউনিটিতে অবদান রাখা এবং মূলত যারা আমেরিকাকে গড়ার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদেরকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ইউএন প্লাজায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষে খলিলুর রহমানের হাতে সার্টিফিকেট এবং পদক তুলে দেন জাতিসংঘে আমেরিকান কর্মকর্তা ড. সীমা কাতনায়া।
অনুষ্ঠানে ড. কাতনায়া বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পদক। মো. খলিলুর রহমান কমিউনিটিতে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। তার হাত ধরে সামগ্রিকভাবে আমেরিকার যে সেবা হচ্ছে, তার স্বীকৃতি এই পদক। আমরা তার হাতে এটি তুলে দিতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল কামনা করছি।
পুরস্কার পাওয়ার পর ইউএন ওয়ান প্লাজায় খলিলুর রহমান তার অভিব্যক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই অর্জন শুধু আমার নয় বরং আমার পরিবার, আমার বিজনেসের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা, কর্মচারী, শুভানুধ্যায়ী, গ্রাহক- সকলের জন্য। আমি সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যে যাত্রা আমি শুরু করেছি, সেটা যেন শেষ পর্যন্ত চালিয়ে নিতে পারি এবং আর্ত মানবতার সেবায় আমৃত্যু কাজ করে যেতে পারি, সেজন্য সকলের দোয়া চাই।
বাবার এমন অর্জনে ভীষণ গর্বিত খলিলুর রহমানের পুত্র রাকিব রহমানও। এই অসামান্য পুরস্কার অর্জনে তিনিও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। রাকিব রহমান বলেন, বাবার এমন অর্জনে আমি গর্বিত। এজন্য প্রথমেই আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বাবা যেন তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন, আমার দিক থেকে সে ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত শাস্ত্রে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করা খলিলুর রহমান কিছুদিন ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা। এরপর অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে ২০০৭ সালে পা রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। শুরুতে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে শেফের কাজ নেন। ধীরে ধীরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রেসিপি তৈরি করাটা তার নখদর্পনে চলে আসে। সর্বশেষ তিনি নিউইয়র্কের প্রিমিয়াম রেস্টুরেন্টের প্রধান শেফ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই ফাঁকে খলিলুর রহমান ভর্তি হন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ‘ইনস্টিটিউট অব কুলিনারি এডুকেশনে’। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চার বছর মেয়াদি কোর্সে ভর্তি হন। সেখান থেকে ‘কুলিনারি আর্টস ডিপ্লোমা’ সনদপত্র পাওয়ার পর নিজে কিছু করার প্রয়াসে নেমে পড়েন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়। খুলে ফেললেন খলিল বিরিয়ানি। অসাধারণ স্বাদ ও মনোরম পরিবেশে খলিল বিরিয়ানি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
বাইডেন বিরিয়ানি
৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণার পর যখন সবাই আনন্দে মাতোয়ারা, তখন অন্যরকম এক চমক নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মো. খলিলুর রহমান। খলিল বিরিয়ানি হাউসে তিনি চালু করেন ‘বাইডেন বিরিয়ানি’ নামে একটি রেসিপি। নামে যেমন চমক তেমনি স্বাদেও অনবদ্য এই বাইডেন বিরিয়ানি। এটি চালু করার পরপরই কমিউনিটির ভোজন রসিকদের মধ্যে দারুণ সাড়া পড়ে যায়। খলিলুর রহমান বলেন, খাসির মাংসের প্রতি প্লেট বাইডেন বিরিয়ানির দাম রাখা হচ্ছে ১৩ ডলার করে। আর গরুর মাংসের প্রতি প্লেট বাইডেন বিরিয়ানির দাম রাখা হচ্ছে ১২ ডলার। জো বাইডেন যত দিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকবেন, তত দিন এই বিরিয়ানি পাওয়া যাবে।
খলিল বিরিয়ানি হাউস দিয়ে শুরু হয়েছিল মো. খলিলুর রহমানে ব্যবসায়িক জার্নি। এরপর তার সাফল্যের পালকে যুক্ত হয়েছে- খলিল হালাল চাইনিজ, খলিল পিজা অ্যান্ড গ্রিল, খলিল সুইটস অ্যান্ড বেকারি এবং খলিল সুপার মার্কেট। এছাড়া আর্তমানবতার সেবা করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন- খলিল ফুড ফাউন্ডেশন।
খলিল সুপার মার্কেট
মো. খলিলুর রহমানের ব্যবসায়িক অগ্রগতির সবশেষ নিদর্শন খলিল সুপার মার্কেট। বাংলাদেশিসহ অন্যান্য কমিউনিটির ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে খলিল সুপার মার্কেট চালু করা হয়েছে। এতে থাকছে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য সামগ্রীসহ ফ্রেস মাছ, মাংস, শাক-সবজী এবং হালাল খাবার। প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ১০০ ডলারের বাজারে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়েছিল। এখনো ক্রেতাদের জন্য রয়েছে নানা আকর্ষণীয় অফার।
খলিল ফুড ফাউন্ডেশন
শুধু ব্যবসা নয়, নিয়মিত বিরতিতে আর্ত-মানবতার সেবায় এগিয়ে আসছেন মো, খলিলুর রহমান। এক পর্যায়ে চ্যারিটি কাজগুলো আরও সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘খলিল ফুড ফাউন্ডেশন’। এই ফাউন্ডেশনের ব্যানারে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির পাশাপাশি বাংলাদেশেও বিভিন্ন স্থানে দুস্থ মানুষকে সাহায্য করা হচ্ছে। গরীব শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বই, খাতাসহ নানা প্রকার শিক্ষা সরঞ্জাম। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চলে মানুষের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দিচ্ছে খলিল ফুড ফাউন্ডেশন। এসব মানবিক কর্মসূচি ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন খলিল ফুড ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মো. খলিলুর রহমান।
খলিল পিজা অ্যান্ড গ্রিল
একের পর এক সাফল্যের ধারাবাহিকতায় মো. খলিলুর রহমান প্রতিষ্ঠা করলেন খলিল পিজা অ্যান্ড গ্রিল। সকল স্তরের গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে কমিউনিটির সেবায় খলিল পিজা অ্যান্ড গ্রিলকে সাজানো হয়েছে। নিজের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিটিকে সুলভ মূল্যে হালাল খাবারের আরও সেবা দিতেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে। এতে এক ডলারের পিজা বিক্রি হয়। এছাড়া স্যান্ডউইচ, বার্গারসহ পাওয়া যায় অন্যান্য স্পেশাল আইটেম। চা কফি ব্যবস্থাও রয়েছে।
চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected]। আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।