Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক এর বইমেলার যুক্ত হচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:১৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক এর বইমেলার যুক্ত হচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়

    বাংলাদেশের লেখক ও প্রকাশকদের নিউ ইয়র্ক বইমেলায় যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, আগামীতে বহির্বিশে^ বাংলা বইমেলার প্রসার ঘটাতে মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক এর আয়োজিত বই মেলার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘বহির্বিশ্বে বাংলা বইমেলা ও মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

    অভিবাসী বাঙালি সমাজ ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলা ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমেরিকায় প্রতি বছর নিউ ইয়র্ক বইমেলা ও বাংলাদেশ উৎসব এর আয়োজন করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এই বই মেলা ঘিরে আমেরিকায় প্রতিবছর বাঙালি লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের মহামিলন ও চিন্তার যোগসূত্র তৈরি হয়। দীর্ঘ ৩০ বছরের পথ চলায় প্রবাসে বাংলা ভাষার চর্চা, বাংলা বইয়ের প্রচার, বাংলা ভাষার প্রসার এবং দেশের বাইরে বাংলা ভাষার মর্যাদা বাড়ানোর জন্য মুক্তধারা নিউ ইয়র্কের রয়েছে বিশেষ অবদান। মুক্তধারা নিউ ইয়র্কের এই অবদানের কথা স্বীকার করে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বহির্বিশ্বে বাংলা বইমেলা ও মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক’ শীর্ষক আলোচনা সভা। শাহ গ্রুপ এর সহযোগিতায় ২৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব।  

    আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন- নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অর্থনীতিবিদ ড. আতিয়ার রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি ও কথাসাহিত্যিক ইকবাল হাসান, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, শিল্পী ও সাংবাদিক নবনীতা চৌধুরী ও নাট্যকর্মী ও গবেষক বাবুল বিশ^াস।
    
    স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক শাহ মো: সানাউল হক। কবি ইউসুফ রেজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ও কবি শ্যামসুন্দর শিকদার।

    আলোচকদের প্রায় সকলেই বহির্বিশে^ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক তথা মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এবং এর প্রতিষ্ঠাতা বিশ^জিত সাহার নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অর্থনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. আতিয়ার রহমান ও কথাসাহিত্যিক ও কবি ইকবাল হাসান তাদের বক্তব্যে বহির্বিশে^ বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি বিকাশে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানান।

      বক্তারা বলেন- ১৯৯২ সালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও বাংলা বইমেলা আয়োজনের মাধ্যমে মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। ৩০ বছরের পথচলায় প্রতিষ্ঠানটি যেমন ফাউন্ডেশনের রূপান্তরিত হয়েছে, তেমনি প্রবাসে বাংলা ভাষার চর্চা ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় উত্তির্ণ হয়েছে। উত্তর আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বে বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে এই ফাউন্ডেশনের অবদান রয়েছে। 

    মুক্তধারা নিউইয়র্ক ১৯৯৬ সালে আমেরিকার মূলধারার ৪০টি লাইব্রেরিতে বাংলা বই পাঠানো শুরু করে। ২০০০ সালে বিশ্বজিত সাহার পরিকল্পনা ও প্রয়াত লেখক ড. হুমায়ূন আজাদের রচনায় প্রকাশিত হয় “ঙঁৎ ইবধঁঃরভঁষ ইধহমষধফবংয” গ্রন্থ। যা অভিবাসী বাংলাদেশী সমাজের সাথে নতুন প্রজন্মের সেতুবন্ধনের কাজ করে। 

    মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক ও মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহার উদ্যোগ ও প্রস্তাবনায় ২০০৫ সালে বহির্বিশ্বের ৩৬টি দেশের বাঙালিদের নিয়ে নিউইয়র্কের ম্যানহাটান সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্বব্যাপী বাংলা ও বাঙালি’ বিষয়ক অনুষ্ঠান। তাছাড়া ২০১২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি-কে নিউইয়র্কের স্টেট সিনেটর হোজে পেরাল্টা কর্তৃক উত্থাপিত আন্তর্জাতিক মতৃভাষা দিবসকে নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর রেজ্যুলেশন হিসেবে পাশ করে। ইউনেস্কো ও জাতিসংঘের পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির বড় অর্জন। ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর কর্তৃক “আন্তর্জাতিক বাংলা সপ্তাহ” ঘোষণা। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী প্রদর্শিত হয় অবিনাশী শব্দরাশির “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর ভাস্কর্য”। একই বছর তাঁরই আবেদনের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ডাক বিভাগ মাসব্যাপী বিশেষ স্মারক ডাক চিহ্ন চালু করে।

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক জাতিসংঘে ঐতিহাসিক বাংলা ভাষণের দিনটিকে (২৫ সেপ্টেম্বর)  ২০১৯ সালে নিউইয়র্ক স্টেট সেনেট কর্তৃক “বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্ট ডে” ঘোষণার রেজুলেশন পাশ করেন নিউইয়র্ক এর গর্ভণর এন্ড্রু ক্যুমো। তারই প্রস্তাবনায় যুক্তরাষ্ট্রেও পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক স্মারক ডাকচিহ্ন প্রকাশ, ১৭ মার্চকে নিউইয়র্ক স্টেট কর্তৃক আন্তর্জাতিক বঙ্গবন্ধু দিবস ঘোষণা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমেরিকার মূলধারায় জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিরল দৃষ্টান্ত।

    অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রদর্শিত হয় ২টি তথ্যচিত্র। একটি ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের সামনে একুশের ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর উপর নির্মাণ করা অন্যটি মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক এর ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শিশু-কিশোর মেলা কর্তৃক বিশ্বজিত সাহাকে উৎসর্গ করে নির্মিত। 

মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক এর প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা অনুষ্ঠানের সভাপতিসহ আলোচক ও আমন্ত্রিত অতিথি এবং অনুষ্ঠানের আয়োজক বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন- মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক এবং পরবর্তীতে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনকে গতিশীল করার জন্য কার্যকরী কমিটির পাশাপাশি অভিবাসী বাঙালিদের ভালোবাসা কোনভাবেই ভুলার নয়। হয়তো আমি একদিন ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করেছি, আজ সেটি আর আমার মধ্যে নেই। মুক্তধারা এখন শুধু উত্তর আমেরিকায় নয়, সারা পৃথিবীর যেখানে অভিবাসী বাঙালি সমাজ গড়ে ওঠেছে, সেখানেই ছড়িয়ে পড়েছে। এটিই মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক তথা মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের স্বার্থকতা। 

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ