Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচন

জয়ে আশাবাদি সবাই, প্রচারণা তুঙ্গে

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১৮ জুন ২০২১

আপডেট: ০৯:২০, ১৮ জুন ২০২১

জয়ে আশাবাদি সবাই, প্রচারণা তুঙ্গে

২২ জুন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচন

নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে জয়ের প্রত্যাশা নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশি-আমেরিকান প্রার্থীরা। নির্বাচন একেবারে সন্নিকটে হওয়ায় প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণাও তুঙ্গে। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তারা নিজ নিজ ডিস্ট্রিক্টে নির্ঘুম প্রচারণা চালাচ্ছেন।  ভোট ঘিরে প্রার্থীরা জানিয়েছেন তাদের প্রতিক্রিয়া।

মোহাম্মদ এন মজুমদার : শেষ পর্যায়ের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটছে। পরিস্থিতি বেশ ভালো। চারটি কেন্দ্রে ভোটারদের সরব উপস্থিতি। ভোট পড়ছে। এখানে শেষ মুহূর্তে ভোটের ফলাফল বদলে যায়। কারণ অনেক ভোটার সিদ্ধান্ত নিতেও দেরি করেন। তিনি বলেন, আমার ডিস্ট্রিক্টে ৭০ হাজার ভোট রয়েছে। জয়ের জন্য মাত্র ৪-৫ হাজার ভোট প্রয়োজন। জয়ের ব্যাপারে খুবই আশাবাদ ব্যক্ত করে এন মজুমদার বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে আরেকজন বাংলাদেশি আমেরিকান প্রার্থী রয়েছেন। তিনি এলাকায় নতুন। আমি এলাকায় দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কমিউনিটির মানুষের পাশে থেকেছি। তাদের জন্য কাজ করেছি। আশা করছি, ভোটাররা ভোট দেওয়ার সময় এসব বিষয় বিবেচনা করবেন এবং ভোট দেবেন। আমি আশাবাদি, বাংলাদেশি কমিউনিটির ভোট ছাড়াও বিভিন্ন কমিউনিটির ভোট পাব। আমি তাদের জন্যও কাজ করেছি। আসলে আমার ডিস্ট্রিক্টে সব মানুষের জন্য কাজ করেছি। তাই ভোটাররা ভোট দেবেন এবং আমাকে জয়ী করবেন বলে আমার বিশ্বাস।’ 

বদরুন খান মিতা : প্রচারণায় বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। মানুষ ভোট দিচ্ছে। আশ্বাসও দিচ্ছে। তবে এখনো বলতে পারছি না কত সংখ্যক মানুষের ভোট পাওয়া যাবে। ভোট পাওয়ার জন্য ভোটারদের ডোর টু ডোর নক করা, মেইল করা, ফোন করা, মেসেজ করা-সবই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশি ভোটারদের বলব, আপনারা সবাই ভোট দিতে আসুন। আপনারা সবাই ভোট দিলে নিজেদের কমিউনিটির একজন প্রার্থীর যেমন জয়লাভ করা সম্ভব, তেমনি আমাদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করা সম্ভব।’ 

মোহাম্মদ সাবুল উদ্দিন : শেষ মুহূর্তেও প্রচারণা বেশ ভালোই হচ্ছে। আমাকে অ্যাসাল এনডোর্স করেছে। ডেনিক মিলার আমাকে সাপোর্ট করেছেন। বিভিন্ন কমিউনিটির ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছি। তারা ভোট দিচ্ছেন। আমাদের এখানে আগাম ভোটকেন্দ্র রয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে যিনি যে এলাকায় থাকেন, তার জিপ কোড নম্বর দিলেই দেখা যাবে তিনি কোন ভোটকেন্দ্রে যাবেন। তবে দেখা গেছে, ভোটকেন্দ্রগুলো একটু দূরে দূরে হওয়ায় কিছু ভোটার মনে করছেন দূরে যাবেন না। ২২ জুন বাসার কাছেই ভোট দিতে যাবেন। সবাই তো ২২ তারিখে গেলে হবে না। আগেভাগেই ভোট দিতে হবে। আমরা ভোটারদের কল দিচ্ছি। বিভিন্ন পোলিং সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছি। ভোটের দিন ভোট হবে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আমি বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছি এবং পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমি এটুকু বলব, আমাদের ডিস্ট্রিক্টে চারজন প্রার্থী। এর মধ্যে তিনজনই বাংলাদেশি। আমাদের কমিউনিটির ভোটার আছেন ৭ হাজার। এর মধ্যে ৪ হাজার ভোট পেলেই আমরা পাস করতে পারব। আমাদের ভোট দিলেই এখানে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে। তিনি বলেন, আমি ভোটারদের প্রতি অনুরোধ করছি, আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসুন, ভোট দিন। আমাদের কমিউনিটি যে প্রসারিত হয়েছে, ভোটে আমাদের অনেক শক্তি আছে-সেটাও দেখান। এতে আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় হবে। 

হেলাল শেখ : মাঠের অবস্থা থেকে বুঝতে পারছি, আমি জয়ী হতে পারব। বাদবাকি আল্লাহর ইচ্ছা। আমাদের ভোটাররা যদি ভোট দিতে বের হন, তাহলে তাদের ভোটেই জয়লাভ করা সম্ভব। একটি ঘটনা বলি, আমি হোয়াইট একজন ভোটারকে আমার কার্ড দিচ্ছি। তিনি নিচ্ছেন না। তিনি আমাকে বলেন, ‘আমি ভোট দিয়ে দিয়েছি এবং তোমাকেই ভোট দিয়েছি। তোমার মেইল আমি পেয়েছি। সেটা থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে ভোট দেব।’ এ ছাড়া একটি পরিবারের তিনজন ভোটার আমাকে দেখে কাছে এসে বলে, ‘হ্যালো শেখ। আমরা তোমার মেইল পেয়েছি। আমরা তোমাকেই ভোট দেব।’ তাদের এসব কথা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি ভোটারদের কাছে মেইল, মেসেজ পাঠাচ্ছি, কল করছি। আগামী ২১ তারিখ পর্যন্ত আমরা প্রচারণা চালাতে পারব।’ তিনি আরো বলেন, আসলে আমার এলাকায় যত বাংলাদেশি আমেরিকান ভোটার আছেন, তারা ভোট দিলেই আমি জয়ী হতে পারি কিন্তু আমাদের মানুষদের অনেকেরই ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ কম। তাই বলব, আপনারা অন্তত ভোট দিন। আমাকে জয়ী করা বড় কথা নয়। আপনারা ভোট দিয়ে এটা প্রমাণ করুন, আমরা বা আমাদের কমিউনিটি কতটা স্ট্রং। আমরা ভোটের দিক থেকে সংখ্যায় যত বড় হব, আমাদের গুরুত্ব তত বাড়বে। 

মেসবাহ আবদীন : প্রথম দিকে আমরা অনেক বেশি খরচ করেছি। এখন তেমন বাজেট নেই। তিনি বলেন, আমাদের এখানে ছয়জন প্রার্থী আছি। এর মধ্যে আমি আমার জয়ের সম্ভাবনা দেখছি ৮০-৮৫ শতাংশ। আমার মনে হয়, আমি ভোটারদের কাছে আমার বার্তা পাঠাতে পেরেছি। ৬০ হাজার ফোনকল করেছি। বাংলাদেশি কমিউনিটি ও আমার এলাকার জন্য আমি ৩৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। এই সময়ে অনেক কাজ করেছি। আশা করছি, আমার কমিউনিটিতে যে ভূমিকা সেটি মানুষ মনে রেখেই ভোট দেবে। তিনি বলেন, আমাদের কমিউনিটির ভোটেই জয়লাভ করা সম্ভব। কিন্তু এখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না যে তারা সবাই ভোট দিতে যাবেন এবং ভোটে জয়ী হওয়া সম্ভব। তবে আমি ভোটারদের অনুরোধ জানাব, আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসুন এবং ভোট দিন। এখন আগাম ভোট চলছে, আগাম ভোট দিন। 

সুলতান মারুফ : এখনো ভোটারদের অনেকেই আনডিসাইডেড রয়েছেন। আশা করছি ভালো করতে পারব। বাংলাদেশি যারা আছেন, তারা ভোট দিতে আসছেন। তবে এখনো সংখ্যায় কম। আমরা এই আসনে দুজন বাংলাদেশি আমেরিকান প্রার্থী হয়েছি। আমার কথা হলো, আমাকেই এক নম্বর চয়েস দিতে হবে, এমন নয়। আমাকে হোক বা মিতা আপাকে হোক, দুজনের যে কাউকে এক নম্বর পছন্দ দিক। আমি জয়ী হতে পারব কি না সেটা বড় কথা নয়, অন্তত আমাদের ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এলে ও ভোট দিলেই আমরা জয়ী হতে পারব। কারণ প্রায় ২৫ শতাংশ ভোটার আমাদের কমিউনিটির রয়েছে। এ ছাড়া এই ভোটের মাধ্যমে এটাও প্রদর্শন করা যে আমরা কমিউনিটিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছি। আমাদের ডিস্ট্রিক্টে ৬৮ হাজার ভোট আছে। ১৫ জন প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে ৮-১০ জন খুবই সরব আছেন। তাদের মধ্যে একজন জয়ী হবেন। 

সাইফুর রহমান খান : আমি নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছি। এখন আর্লি ভোট চলছে। আমাকে যারা ভোট দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদের অনেককেই ভোটকেন্দ্রে নিয়ে গেছি। আগাম ভোটগুলো সংগ্রহ করেছি। অ্যাবসেন্টি ভোটও কিছু সংগ্রহ করেছি। এ ছাড়া ২২ জুন তো সবাই যাবেন ভোট দিতে। কিন্তু আর্লি ও অ্যাবসেন্টি ভোট হলো বোনাস। তিনি বলেন, আমার যে প্রচারণা অনুষ্ঠান ছিল, সেখানে কমিউনিটির বিভিন্ন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারা ওই দিন বলেছেন, আপনারা ভোট দিন। আসলে আমরা যদি ভোট দিতে না যাই, তাহলে এটা প্রমাণ করতে পারব না আমাদের ভোট কত। কত মানুষ ভোট দেয়। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ভোট দিলে এটা প্রমাণিত হবে আমরা কমিউনিটিতে গুরুত্বপূর্ণ। তখন আমাদের কথাও তারা গুরুত্ব দেবে। তিনি বলেন, ভোটারদের প্রতি আহ্বান, আপনারা ভোট দিন। বাংলাদেশি আমরা তিনজন প্রার্থী হয়েছি আমাদের ডিস্ট্রিক্টে। তিনজনকে এক, দুই, তিন নম্বর সিরিয়াল অনুযায়ী ভোট দিন। আমাদের সাত হাজার ভোটারের চার হাজার ভোট দিলেই আমাদের একজন জয়ী হতে পারবেন। তিনি বলেন, আমি আশাবাদী, তারা ভোট দিতে যাবেন।

মির্জা মামুন রশিদ : প্রচারণা খুব ভালোভাবেই চলছে। মানুষের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে। তিনি বলেন, ভোটারদের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ হলো, প্লিজ আপনারা ঘরে বসে থাকবেন না, বাইরে আসুন এবং ভোট দিন। আপনারা ভোট না দিয়ে ঘরে বসে থাকলে কমিউনিটর গুরুত্ব বোঝাতে পারবেন না। আমাদের কত সংখ্যক ভোটার আছে, সেই হিসাব কাগজে-কলমে আছে কিন্তু কত সংখ্যক মানুষ ভোট দেয় সেটা জানানোর জন্য ভোট দিতে হবে। এই ভোট দেওয়ার মাধ্যমেই নিজ কমিউনিটির গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। মেইন স্ট্রিমে কমিউনিটির গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য ভোটারদের উপস্থিতি জরুরি। যখন ভোট দেবেন, তখন কমিউনিটির সবাই বুঝবেন এবং আমাদের সব বিষয়েই গুরুত্ব দেবেন। 

অ্যাটর্নি সোমা সায়ীদ : কুইন্সের সিভিল কোর্টের বিচারক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেশ ভালো অবস্থানেই আছেন সোমা সায়ীদ। তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আরেকজন প্রার্থী আছেন। অন্যান্য পদের র‍্যাংক চয়েসের ভোট হলেও বিচারক পদের জন্য তা হবে না। আমাদের দুজনের মধ্যে একজনকে ভোট দিতে হবে। তাই আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, আমাকে ভোট দিন।’ কুইন্স কমিউনিটি অনেক বড়, ভোটারও বেশি। কেবল বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভোটে আমার পদের জন্য জয়লাভ করা সম্ভব হবে না। কারণ এখানে আমাদের কমিউনিটি ও অন্যান্য কমিউনিটির ভোট লাগবে। আমি আশাবাদী এই জন্য যে লিগ্যাল কমিউনিটতে আমি পরিচিত মুখ। এ ছাড়া হোয়াইট, জুইশ, স্প্যানিশ, ব্ল্যাক কমিউনিটিসহ বিভিন্ন কমিউনিটির অনেকেই আমাকে চেনেন ও জানেন। আশা করছি, আমাকে তারা ভোট দেবেন। তাদের ভোটে আমি জয়লাভ করতে পারব। তবে ভোটারদের উদ্দেশে বলছি, আপনারা ব্যালট পেপারের প্রতি পৃষ্ঠা দেখবেন, পড়বেন এবং ভোট দেবেন। ব্যালটে যতগুলো পদে ভোট হচ্ছে, সব পদে ভোট দেবেন। তিনি বলেন, সব পদে ভোট দিলেই বাংলাদেশি ভোটারদের ভোটের গুরুত্ব আরও বাড়বে। এখন যারা ভোট দেবেন সবার ভোটের সংখ্যা বিবেচনা করেই এটা ঠিক হবে যে আমরা আসলে কমিউনিটিতে কতখানি সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি। আমরা ভোটার অনেক কিন্তু ভোট দিলাম না, তাহলে কিন্তু আমাদের মূল্য থাকবে না। কারণ লিডাররা দেখবেন আসলে কোন কমিউনিটি কত ভোট দেয়। সেই বিচারে কমিউনিটির গুরুত্ব বাড়ে। তাই সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা ভোট দিন। আমি আপনাদেরই মেয়ে ও বোন। আমাকে বিচারক পদে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। পাশাপাশি নিজেদের গুরুত্ব তুলে ধরুন।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ